গণটিকাদান কর্মসূচির শুরুর দিনে ভ্যাকসিন নিলেন যেসব ভিআইপি

SHARE

বাংলাদেশের সহস্রাধিক হাসপাতালে একযোগে শুরু হয়েছে গণটিকাদান কর্মসূচি। সকালে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক কোভিশিল্ড নামে এই করোনাভাইরাস টিকা গ্রহণ করেন।

এই টিকাটি অক্সফোর্ড অ্যাস্ট্রাজেনেকার আবিষ্কার করা এবং ভারতের সিরাম ইনস্টিটিউটের তৈরি করা।

এর আগে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে এই গণ-টিকাদান কর্মসূচির উদ্বোধন করেন মালেক।

সেখানে তিনি বলেন, ‘ভ্যাকসিন নিয়ে কোনো সমালোচনা চাই না। আমরা মানুষের জীবন রক্ষার্থে ভ্যাকসিন দিচ্ছি।’

এর আগে ভারত থেকে আনা এই ভ্যাকসিনকে ঘিরে বাংলাদেশে নানা রকম সমালোচনা হচ্ছে। সমালোচনার জেরে টিকা গ্রহণের জন্য মানুষের মধ্যে কাঙ্ক্ষিত পরিমাণ সাড়াও দেখা যায়নি বলে অনেকে মনে করেন।

তবে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলছেন, এই টিকা ‘সম্পূর্ণ নিরাপদ’।

তিনি আহ্বান জানান, যেন ভ্যাকসিন নিয়ে কোন গুজব না ছড়ায়।

এখন প্রথম দফায় সম্মুখ সারির কর্মী ও ৫৫ বছরের অধিক বয়স্ক মানুষকে টিকা দেয়ার কথা। মোট ৩৫ লাখ ডোজ টিকা সরকার বিনামূল্যে বিতরণ করবে বলে জানিয়েছে।

যদিও শনিবার পর্যন্ত অনলাইনে আবেদন জমা পড়েছে সাড়ে ৩ লাখেরও কম।

স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক সকালের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বলেন, মানুষকে উদ্বুদ্ধ করার জন্য অনেক গুরুত্বপূর্ণ মানুষ টিকা নিচ্ছেন।

তিনি বলেন, ‘আমি নিজে ভ্যাকসিন নেব। সমাজের অনেক গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি ভ্যাক্সিন নেবেন। তাদের নেয়ার মাধ্যমে আশা করি জনগণ আরো উদ্বুদ্ধ হবে।’

সারা বছর ধরে টিকাদান কর্মসূচি চলবে উল্লেখ করে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক বলেন, ‘এটি একদিন বা এক মাসের বিষয় না। সারাবছর ধরেই এই ভ্যাকসিন কার্যক্রম চলবে। আমরা সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নিয়েছি, যেন দেশের মানুষ করোনাভাইরাস থেকে নিরাপদে থাকে এবং স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসে।’

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে এই বক্তব্য দেয়ার কিছুক্ষণ পর শেখ রাসেল গ্যাস্ট্রোলিভার হাসপাতালে গিয়ে সোয়া ১১টার দিকে তিনি গণমাধ্যমকর্মীদের সামনেই টিকা গ্রহণ করেন।

সেখানে উপস্থিত ছিলেন বিবিসির শাহনেওয়াজ রকি, তিনি জানান, ১১টা ১৯ মিনিটে বহু ক্যামেরার সামনেই জামার হাতা গুটিয়ে টিকা গ্রহণ করেন জাহিদ মালেক।

এরই মধ্যে বাংলাদেশের সব জেলা উপজেলার ১০০৫টি কেন্দ্র থেকে এই টিকা কর্মসূচি একযোগে শুরু করা হয়েছে। এ জন্য কাজ করছে ২৪০০টি টিম।

প্রতিদিন সকাল ৮টা থেকে দুপুর আড়াইটা পর্যন্ত এই টিকা কার্যক্রম চলবে বলে স্বাস্থ্য অধিদফতর জানিয়েছে।

আরো যারা ভ্যাকসিন নিলেন
ঢাকা ও ঢাকার বাইরের বিভিন্ন কেন্দ্রে টিকা দিয়েছেন ডাক ও টেলিযোগাযোগমন্ত্রী মোস্তফা জব্বার, কৃষি মন্ত্রী ড. আব্দুর রাজ্জাক, প্রাণী সম্পদমন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী মোঃ এনামুর রহমান, শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল, পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রী মো. শাহাব উদ্দিন, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিমন্ত্রী ইয়াফেস ওসমান, মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম।

প্রথমদিনে আরও টিকা নিয়েছেন স্বাস্থ্য সচিব মোঃ আবদুল মান্নান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য আখতারুজ্জামান, ঢাকা মহানগর পুলিশ কমিশনার শফিকুল ইসলামসহ বেশ কয়েজন এমপি, হাইকোর্টের বিচারপতি এবং বিভিন্ন মন্ত্রনালয়ের সিনিয়র কর্মকর্তারা।

এর আগে গত ২৭ জানুয়ারি শেখ হাসিনার উপস্থিতিতে কুর্মিটোলা হাসপাতালের একজন নার্সকে টিকা দেয়ার মাধ্যমে এই কর্মসূচির উদ্বোধন করা হয়েছিল।

এর পর কয়েকদিনে ৫ শতাধিক মানুষকে টিকা দেয়া হয়েছিল। তাদের কারোরই কোন পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া হয়েছে বলে এখন পর্যন্ত কোনো খবর পাওয়া যায়নি।

করোনা ভ্যাকসিন রেজিস্ট্রেশন করতে সুরক্ষা অ্যাপ
সুরক্ষা অ্যাপ ও ওয়েবসাইট থেকে করোনা ভ্যাকসিন নিবন্ধন করতে আহ্বান জানিয়েছেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক।

এ জন্য প্রয়োজন হবে জাতীয় পরিচয় পত্র এবং নাম, ঠিকানা, বয়স, পেশা, শারীরিক পরিস্থিতি, ফোন নম্বর ইত্যাদি তথ্য।

সুরক্ষা অ্যাপ পাওয়া যাচ্ছেন অ্যাপ স্টোরে।

এরই মধ্যে ভারত থেকে টিকাটির ৭০ লাখ ডোজ বাংলাদেশে এসে পৌঁছেছে। চলতি মাসে এই টিকার ৩৫ লাখ টিকা দেয়া পরিকল্পনার কথা বলা হয়েছে। কারণ এই টিকার দুটি করে ডোজ দিতে হয়। তাই ৩৫ লাখ মানুষকে যেন সম্পূর্ণ টিকা কর্মসূচির আওতায় আনা যায়।

তবে প্রতি মাসে ৫০ লাখ করে জুন মাস পর্যন্ত আরও আড়াই কোটি ডোজ টিকা আসার কথা রয়েছে।

তথ্য : বিবিসি বাংলা