গৃহকর্ত্রী খোরশেদার কি বিচার হবে?

SHARE

masum-dmchমাসুমের বয়স মাত্র ১০ বছর। যে বয়সে মাসুমের বই খাতা নিয়ে স্কুলে যাওয়ার কথা, মা-বাবার আদর-স্নেহ, ভালোবাসায় ডুবে থাকার কথা। যখন স্কুলের সহপাঠীদের সঙ্গে খেলাধুলা করার কথা। তখন জীবন-মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ে যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছে সে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে। টানা তিন মাস গৃহকত্রী খোরশেদার হাতে নির্যাতনের শিকার হয়ে বর্তমানে সে ঢামেকে ২১০নং ওয়াডে চিকিৎসাধীন।

মাসুমের প্রতিদিনের জীবন:

রাজধানীর মোহাম্মদপুর হাউসিং এর ১নং রোডের ২০/৮ নং বাসার ১/এ ফ্ল্যাটে মাসুমের চাচাতো বোন ইয়াসমিন তিনমাস আগে তাকে কাজ দেন।

মেডিকেলে ভর্তি হওয়ার পর কাতরকণ্ঠে মাসুম জানায়, ‘প্রতিদিনই তারা আমাকে মারতো। একটু ভুল করলেই টয়লেটে আটকে রাখতো। শুধু খোরশেদা খালাম্মার (গৃহকর্ত্রী) ছোট ছেলে শুভ আমাকে খেতে দিত।’

চাচাতো বোন ইয়াসমিন জানান, কাজে সামান্য ভুল হলেই তারা মাসুমকে নানাভাবে নির্যাতন করত। শরীরের বিভিন্ন স্থানে গরম চামচ লাগিয়ে দিত। হাত থেকে গ্লাস পড়ে ভেঙে গেলে ভাঙা গ্লাসের টুকরো দিয়েই তার শরীর থেকে রক্ত বের করা হতো। মাঝে মাঝে সারা দিনে তাকে একবারও খেতে দিত না।

মাসুমের পুরো শরীরে জখমের চিহ্ন। মাথায় চুল নেই, আঘাতের দাগগুলোও দিবালোকের মতো স্পষ্ট। নিয়মিত খাবার না খাওয়ার কারণে মাসুমের বুকের প্রতিটি হাড় গোনা যায়।

যেভাবে উদ্ধার মাসুম:

তিন মাস ধরে মাসুম খোরশেদার বাড়িতে কাজ করে। প্রতিদিন নির্যাতন করতে করতে গৃতকত্রী যখন ভাবলেন মাসুম আর বাঁচবে না। তখন হঠাৎ গত শুক্রবার খোরশেদা অসুস্থতার কথা বলে মাসুমের বাড়ির লোকজনকে খবর দেয়। পরে তারা তাকে ময়মনসিংহ সদরের দক্ষিণ রাজপন্তী গ্রামের বাড়িতে নিয়ে যান।

এদিকে বাড়িতে নেয়ার পর তার সারা শরীরে ক্ষত চিহ্ন দেখে স্থানীয় লোকজন মাসুমকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠায়। বর্তমানে তাকে মেডিকেলের ২১০নং ওয়ার্ডের একটি শয্যায় চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে।

ঢাকা মেডিকেল কলেজের পরিচালনক বিগ্রেডিয়ার জেনারেল মোস্তাফিজুর রহমান সাংবাদিকদের বলেন, শিশুটির ব্যাপারে প্রয়োজনীয় বোর্ড গঠন করা হবে। তার খাবার দাবার ও চিকিৎসার সব ব্যবস্থা নেবে মেডিকেল কর্তৃপক্ষ।

স্বজনরা মাসুমকে শনিবার ঢাকা মেডিকেলে ভর্তি করে। রোববার ঢাকা মেডিকেলে গিয়ে দেখা যায় মাসুমের চোখের পানি। আর বীভৎস নির্যাতনের দৃশ্য। সারাটা শরীরে আঘাতের চিহ্ন।

যে মাসুম তার কাজের বিনিময়ে গৃতকত্রীর কাছে মায়ের আদর-স্নেহ পাওয়ার কথা ছিল। সেই মাসুম কাজে সামান্য ভুলের জন্য পেয়েছেন অবর্ণনীয় নির্যাতন। গরম চামচের ছ্যাকা, যা মাসুমের পুরো শরীরে হয়ে আছে নির্যাতনের জীবšত্ম সাক্ষী। শুধু নির্যাতনই নয়, তাকে খাবারও দেয়া হতো না। প্রায়ই টয়লেটে দরজা বন্ধ করে আটকে রাখা হতো তাকে। অসহায় মাসুমের এভাবেই কেটেছে পুরো তিনটি মাস। টয়লেটে বন্ধ করে যখন মাসুমকে খাবার দেয়া হতো না তখন গৃহকর্ত্রীর ছোট ছেলের (মাসুমের সমবয়সী) মনে একটু মায়া জাগতো। অবুঝ এই শিশুর বিবেক তাকে খাবার দেয়ার জন্য উদ্ধুব্ধ করতো। সে মাঝে মাঝে মাসুমকে খাবারও দিতো।

মাসুমের এই কষ্টের চিত্র গৃহকত্রীর ছোট্ট ছেলের বিবেককে নাড়া দিলেও খোরশেদা ইসলামের (গৃহকত্রী) বিবেক জাগ্রত হয়নি। সে কখানো তাকে খাবারও দেয়নি। এমনকি শেষ দিন পর্যšত্মও মাসুমকে নির্যাতনের মাত্রা কমায়নি খোরশেদা। মায়ের বয়সী খোরশেদার ছেলে সমতুল্য মাসুমের জন্য মনে জাগেনি একটুও স্নেহ-ভালবাসা। করেছেন শুধুই নির্যাতন। মাসুমের প্রতি কখনোই সুদৃষ্টি পড়েনি খোরশেদার।

প্রথম দিকে থানা পুলিশও তার দিকে সুদৃষ্টি দেয়নি। মামলা নিতে অপারগতা প্রকাশ করে পুলিশ। কিন্তু স্থানীয় বিবেকবান ও মাসুমের স্বজনেরা চড়াও হলে গৃহকত্রীর বিরুদ্ধে মামলা নেয় মোহাম্মদপুর থানা পুলিশ।

শনিবার মধ্য রাতে খোরশেদা ইসলাম নামের ওই গৃহকত্রীকে গ্রেফতার করে পুলিশ। মোহাম্মদপুর থানার ডিউটি অফিসার বলেন, ‘আজ খোরশেদাকে আদালতে পাঠানো হবে। সেখানে তার বিরুদ্ধে চার্জ গঠন শেষে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।’

কিন্তু কী শাস্তি হতে পারে নিষ্ঠুর এই মায়ের! যিনি তার ছেলে সমতুল্য একটি শিশুকে ধারাবাহিকভাবে নির্যাতন করে আসছিলেন। ঠিক একই ভাবে যদি খোরশেদার ছেলেকে নির্যাতন করা হতো তাহলে কী শাস্তি কামনা করতেন তিনি। আর শাস্তিতে কী এমন নিষ্ঠুর মায়ের মমত্ববোধ জাগ্রত করা যায়? সমাজের এইসব নিষ্ঠুর মানুষদের কাছে এমন প্রশ্ন চিরদিনই থাকবে সচেতন ও বিবেকবানদের।