ভারতকে হটিয়ে বাংলাদেশের শীর্ষ বাণিজ্য অংশীদার চীন

SHARE

দক্ষিণ এশিয়ার আঞ্চলিক আধিপত্যের বিষয়েও ভারতকে চ্যালেঞ্জ ছুড়ছে পূর্ব এশিয়ার দেশটি। ভৌগোলিক অবস্থানের কারণে দুই দেশের জন্যই গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠছে বাংলাদেশ। তবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, নয়াদিল্লি আর বেইজিংয়ের ভূরাজনৈতিক দ্বন্দ্ব পাশ কাটিয়ে আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে নিজস্ব প্রয়োজনকে গুরুত্ব দিতে হবে ঢাকাকে।

বঙ্গোপসাগর ছাড়া বাংলাদেশের বাকি সীমান্তের প্রায় পুরোটাই ভারতের সঙ্গে। অন্যদিকে, পাকিস্তান ও বাংলাদেশের সমুদ্রসীমায় বিচরণ সহজ হলে, চীনের নৌ-যোগাযোগ হয়ে উঠবে আরো কার্যকর। আর তাই ভূরাজনীতিতে নয়াদিল্লী এবং বেইজিং দু’পক্ষের কাছেই ঢাকার বাড়তি কদর।

একটা সময় পার্শ্ববর্তী দেশ ভারত বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় বাণিজ্য অংশীদার থাকলেও এখন চীন সে স্থান দখল করেছে। গত এক দশকে চীন থেকে আমদানি বেড়েছে প্রায় চার গুণ। আর অর্ধেক ভারত থেকে।

ভারত-বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের সভাপতি আবদুল মাতলুব আহমাদ বলেন, ‘আগে বাণিজ্যিক ক্ষেত্রে ভারত সবচেয়ে বড় অংশীদারিত্ব হলেও এখন তা স্থান চীনের। আবার অনেক ক্ষেত্রেই দেখা যায় ভারত কম মূল্যে পণ্য দিতে পারে না।’

২০১৬ সালে ঢাকায় চীনের প্রধানমন্ত্রীর সফরের পর থেকে বেগবান হয় দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক। শিল্প কাঁচামাল, কারখানার ভারি যন্ত্রপাতিতে বড় নির্ভরতা চীনা পণ্য। আর স্থলবন্দর থাকায়, ভোগ্যপণ্যের চাহিদার বড় অংশ মেটাচ্ছে ভারতীয় পণ্য।

গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়লগের (সিপিডি) সম্মানীয় ফেলো ও বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক ড. মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ‘চীন এবং ভারতের মধ্যে এখন একটা দ্বিপাক্ষিক একটা টানাপোড়েন চলছে। কিন্তু, দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কে প্রবেশ না করে আমরা চেষ্টা করব দু’দেশের সঙ্গেই বাণিজ্যিক সম্পর্ক, বিনিয়োগ ও যোগাযোগ সম্পর্ক বৃদ্ধি করে কিভাবে বাংলাদেশের অর্থনীতিকে সমৃদ্ধ করা যায় এবং বাণিজ্য সুবিধাকে কাজে লাগানো যায়।’

২০১৯ সালে ভারতের বিনিয়োগ এসেছে ১৫ কোটি। সেখানে চীনা বিনিয়োগ ১৪০ কোটি। তবে বিনিয়োগ বাড়িয়ে, বিভিন্ন দেশে ঋণের ফাঁদ তৈরি করছে চীন এমন প্রচারও আছে বেইজিংয়ের বিরুদ্ধে।

এ বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক ড. লাইলুফার ইয়াসমিন বলেন, ‘গত দু’তিনমাসের রিপোর্টগুলো যদি দেখেন সেখানে কিন্তু চীন বার বার বলছে এটা অপপ্রচারের অংশ।’ এ বিষয়ে শ্রীলঙ্কাকে উদাহরণ হিসেবে নিয়ে তিনি আরও জানান, বিশেষজ্ঞরা এটিকে পশ্চিমা দেশগুলোর একটি কৌশল হিসেবেই দেখছেন।

আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্যে বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় ঘাটতি চীনের সঙ্গেই। তারপরেই ভারত। যদিও ২০১১ সাল থেকে প্রায় সব পণ্যে শুল্কমুক্ত বাজার সুবিধা দিয়ে আসছে দেশটি। আর ২০২০ সালের মাঝামাঝি একই সুবিধা চালু করেছে চীন।