অক্টোবরেও রেকর্ড, গত ৪ মাসে রেমিট্যান্স এসেছে ৮.৮ বিলিয়ন ডলার

SHARE

সদ্য বিদায়ী অক্টোবর মাসেও রেকর্ড পরিমাণ রেমিট্যান্স পাঠিয়েছেন প্রবাসী বাংলাদেশিরা। অক্টোবর মাসে প্রবাসীদের পাঠানো অর্থের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ২ দশমিক ১১ বিলিয়ন ডলার। এই নিয়ে পরপর তিন মাস দুই বিলিয়ন ডলারের ওপরে রেমিট্যান্স এসেছে দেশে। গত চার মাসে ( জুলাই-অক্টোবর) প্রবাসীরা প্রায় ৯ বিলিয়ন (৮.৮২৫ বিলিয়ন) ডলারের রেমিট্যান্স পাঠিয়েছেন।

রোববার (১ নভেম্বর) বাংলাদেশ ব্যাংকের হালনাগাদ প্রতিবেদনে এই তথ্য তুলে ধরা হয়েছে।

চলতি অর্থবছরের প্রথম চার মাসে গত অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় রেমিট্যান্স ৪৩ দশমিক ৪২ শতাংশ বেড়ে হয়েছে ৮ দশমিক ৮৩ বিলিয়ন ডলার।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য বলছে, চলতি অর্থবছরের প্রথম ৪ মাসে প্রবাসী আয় এসেছে ৮৮২ কোটি ডলার, যা আগের অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় ৪৩ দশমিক ২৪ শতাংশ বেশি। ২০১৯-২০ অর্থবছরের প্রথম চার মাসে প্রবাসীরা ৬১৬ কোটি ডলার পাঠিয়েছিলেন। অর্থাৎ এই অর্থবছরের প্রথম চার মাসে আগের অর্থবছরের প্রথম চার মাসের তুলনায় প্রবাসীরা ২৬৪ কোটি ডলার বেশি পাঠিয়েছেন।

বাংলাদেশ ব্যাংকের হিসাবে, গত বছরের অক্টোবর মাসে শেষে বাংলাদেশ ব্যাংকে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ছিল ৩২ বিলিয়ন ( ৩ হাজার ২৪৩ কোটি) ডলার। এই বছরের অক্টোবর শেষে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ দাঁড়িয়েছে ৪১ বিলিয়ন (৪ হাজার ১০০ কোটি) ডলার। অর্থাৎ এক বছরের ব্যবধানে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বেড়েছে প্রায় ৯ বিলিয়ন ডলার।

বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদনে দেখা যায়, গত বছরের অক্টোবরের চেয়ে এই বছরের অক্টোবরে প্রায় ৫০ কোটি ডলার বেশি পাঠিয়েছেন প্রবাসীরা। ২০১৯ সালের অক্টোবর মাসে প্রবাসীরা রেমিট্যান্স পাঠিয়েছিলেন ১৬২ কোটি ডলার। এই বছরের অক্টোবর মাসে (করোনাকালে) তারা পাঠিয়েছেন ২১১ কোটি ডলার।

এর আগে প্রবাসী বাংলাদেশিরা গত সেপ্টেম্বরে ২১৫ কোটি (২ দশমিক ১৫ বিলিয়ন) মার্কিন ডলার পাঠিয়েছিলেন, যা গত বছরের একই মাসের তুলনায় ৪৫ শতাংশ বেশি। ২০১৯ সালের সেপ্টেম্বর মাসে প্রবাসীরা ১৪৭ কোটি ৬৯ লাখ ডলার রেমিট্যান্স পাঠিয়েছিলেন। গত আগস্টে প্রবাসী আয় এসেছিল ১ দশমিক ৯৬ বিলিয়ন ডলার।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য বলছে, অর্থবছরের প্রথম মাস জুলাইতে প্রবাসীরা ২৫৯ কোটি ৯৫ লাখ মার্কিন ডলারের রেমিট্যান্স পাঠিয়েছেন। একক মাসের হিসাবে বাংলাদেশের ইতিহাসে এর আগে কখনও এত পরিমাণ রেমিট্যান্স আসেনি। শুধু তাই নয়, ইতিহাস বলছে-এখন থেকে ২০ বছর আগে অর্থাৎ ২০০১-০২ অর্থবছরের পুরো সময়ে (১২ মাসে) রেমিট্যান্স এসেছিল ২৫০ কোটি ১১ লাখ ডলার। আর করোনাকালে শুধু জুলাই মাসেই প্রবাসীরা তার চেয়ে বেশি ২৫৯ কোটি ৯৫ লাখ মার্কিন ডলারের রেমিট্যান্স পাঠিয়েছেন। পরের মাস আগস্টে প্রবাসীরা ১৯৬ কোটি ৩৯ লাখ ডলার রেমিট্যান্স পাঠিয়েছেন। সেপ্টেম্বরে পাঠিয়েছেন ২১৫ কোটি ১৮ লাখ ডলার। আর সর্বশেষ অক্টোবরে পাঠিয়েছেন ২১১ কোটি ডলার।

এদিকে রেমিট্যান্সে ভর করে দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বেড়ে গেছে। অতীতের সব রেকর্ড ছাপিয়ে রিজার্ভ ৪১ বিলিয়ন ডলার অতিক্রম করেছে।

মূলত ভ্রমণ নিয়ন্ত্রণের কারণে অপ্রাতিষ্ঠানিক থেকে প্রাতিষ্ঠানিক চ্যানেলে রেমিট্যান্স বৃদ্ধি পাওয়ায় কোভিডের মধ্যেও রেমিট্যান্স প্রবাহ বাড়বে বলে উল্লেখ করা হয়েছে। রিপোর্টে বলা হয়েছে ২০২০ সালে বাংলাদেশে রেমিট্যান্স আসবে ২০ বিলিয়ন ডলার।

দেশের অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে বিভিন্ন দেশে থাকা এক কোটির মতো বাংলাদেশির পাঠানো অর্থ। দেশের জিডিপিতে এই রেমিট্যান্সের অবদান প্রায় ১২ শতাংশের মতো।

প্রসঙ্গত, কোভিড-১৯-এর ধাক্কায় সারা বিশ্বের স্বাভাবিক অর্থনীতি যখন টালমাটাল অবস্থায়, তখনও বাংলাদেশে প্রবাসীরা রেকর্ড পরিমাণ রেমিট্যান্স পাঠিয়ে বিস্ময় সৃষ্টি করেছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদনের তথ্য বলছে, স্বাভাবিক সময়ের চেয়ে করোনাকালে প্রবাসীরা কয়েকগুণ বেশি রেমিট্যান্স পাঠিয়েছেন।

উল্লেখ্য, বৈধ পথে প্রবাসী আয় বাড়াতে গত বছরের মতো এবারও ২ শতাংশ হারে প্রণোদনা ঘোষণা করেছে সরকার। সে অনুযায়ী, ১ জুলাই থেকে প্রবাসীরা প্রতি ১০০ টাকার বিপরীতে ২ টাকা প্রণোদনা পাচ্ছেন। বাজেটে এ জন্য ৩ হাজার ৬০ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে। এর সঙ্গে যুক্ত করে কোনও কোনও ব্যাংক আরও ১ শতাংশ বেশি প্রণোদনা দিচ্ছে।

২০১৯-২০ অর্থবছরে মোট এক হাজার ৮২০ কোটি ৩০ লাখ (১৮.২০ বিলিয়ন) ডলার রেমিট্যান্স পাঠিয়েছেন বিভিন্ন দেশে অবস্থানকারী প্রবাসীরা। ওই অঙ্ক ছিল আগের ২০১৮-১৯ অর্থবছরের চেয়ে ১০ দশমিক ৮৭ শতাংশ বেশি।