মাগুরায় হোমিওপ্যাথি চিকিৎসায় চলছে ভয়ঙ্কর প্রতারণা, প্রশাসন নিরব।

SHARE

মাগুরা সংবাদদাতা:

গ্রামে একটা কথা প্রচলন আছে ” যার নেই কোন গতি সে খায় হোমিওপ্যাথি”, প্রায় ২০০ বছর আগে জার্মান বিজ্ঞানী ডা: স্যামুয়েল হ্যানিম্যানের হাত ধরে হোমিওপ্যাথি যাত্রা শুরু হয়। ভারতীয় উপমহাদেশে হোমিওপ্যাথি চিকিৎসা শুরু হয় প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পর থেকে। এলার্জি এবং আঁচিল জাতীয় রোগ হোমিওপ্যাথি চিকিৎসার মাধ্যমে কিছুটা মুক্তি মিললেও অন্য রোগের ক্ষেত্রে কতটা কার্যকর এ নিয়ে যথেষ্ট সন্দেহ আছে, তাই বিবিধ পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে ২০১৫ সালে ব্রিটেন সেদেশে হোমিওপ্যাথি চিকিৎসা বন্ধ করে দেয়। বৃটেনের স্বাস্থ্য গবেষকরা একে “ভুয়া এবং ভাওতা” বলে উল্লেখ করেন। বাংলাদেশের এখনো ২৮ শতাংশ মানুষ হোমিওপ্যাথির উপর আস্থা রাখেন, এদেশের মানুষ এখনো বিশ্বাস করে হোমিওপ্যাথি জটিল এবং কঠিন রোগের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়তে সক্ষম, কোনো ধরনের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া ছাড়াই, যেখানে এলোপ্যাথি বিভিন্ন ধরনের উপসর্গ সৃষ্টি করে। এলোপ্যাথি বেশ ব্যয়বহুল হওয়ায়, এদেশের নিম্নবিত্ত মানুষেরা সস্তার হোমিওপ্যাথি চিকিৎসার উপর ভরসা করে। সম্প্রতি মাগুরাতে কিছু চিকিৎসক হোমিওপ্যাথির সঙ্গে যোগ করেছেন কোয়ান্টাম এনালাইজার মেশিন, প্রচার করছেন এই মেশিনের মাধ্যমে অটোমেটিক কম্পিউটারে রোগনির্ণয় করা হয়, মানুষের সরল বিশ্বাসের সুযোগ নিয়ে প্রতারণার মাধ্যমে হাতিয়ে নিচ্ছেন কোটি কোটি টাকা। সম্প্রতি অনুসন্ধানে দেখা যায় মাগুরার অসংখ্য হোমিওপ্যাথি চিকিৎসক এই কোয়ান্টাম এনালাইজার মেশিন দিয়ে রোগীর হৃদরোগ, ডায়াবেটিক, গ্যাস্ট্রিক, আলসার, ক্যান্সার এমন কি অতীত-বর্তমান-ভবিষ্যৎ বলে দিয়ে ধরিয়ে দিচ্ছেন কমপক্ষে চার থেকে পাঁচ হাজার টাকার বিল। মাগুরার জামরুলতলার বৃন্দাবন হোমিওপ্যাথির চিকিৎসক ডাক্তার মিলন বিশ্বাস এই এনালাইজার মেশিন দিয়ে চিকিৎসা করেন, তাকে জিজ্ঞাসা করলে তিনি জানান “আসলে এই কোয়ান্টাম এনালাইজার মেশিন একটি ভুয়া মেশিন, এতে কোন রোগ নির্ণয়ের তো সম্ভবই না, বরং অধিকাংশ ক্ষেত্রেই ভুল হওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে।” তাহলে এটা কেন ডাক্তাররা ব্যবহার করছেন জানতে চাইলে তিনি জানান, রোগীরা মনে করে কম্পিউটারে মাধ্যমে রোগ নির্ণয় করা হচ্ছে, ডাক্তারের উপর আস্থা পায়, ফি বেশি নেওয়া যায়, তাই সবাই ব্যবহার করে। আগে যেখানে ২০ থেকে ৩০ টাকার মধ্যে হোমিওপ্যাথি চিকিৎসা করা সম্ভব হতো, এখন এই কোয়ান্টাম এনালাইজার মেশিন দিয়ে ডিজিটাল প্রতারণা করে ২ থেকে ৩ হাজার টাকা আয় করা সম্ভব হচ্ছে। এভাবে প্রতিদিন একজন ডাক্তার প্রায় ৩০ থেকে ৪০ হাজার টাকা আয় করে থাকেন। মিলন বিশ্বাস দেওয়া তথ্যমতে যোগাযোগ করা হয় কোয়ান্টাম এনালাইজার মেশিনের মাগুরা ডিলার জার্মান হোমিও হলের শাহ আলম এর সাথে, তিনি জানান প্রতিটা মেশিন ২৫ থেকে ৩০ হাজার টাকায় আমি বিক্রি করি, এতে আমার ৫০০০ টাকা লাভ থাকে, আগে এইটার ব্যাপক চাহিদা ছিল, কিন্তু যেহেতু এটা ভুয়া তাই এখন চাহিদা কম, তারপরও কিছু ডাক্তার এখনও আমার কাছ থেকে কেনে। তিনি আরো জানান মাগুরা নতুন বাজার এর বিধান ডাক্তার, আড়পাড়ার বাজারের অপূর্ব, মাগুরা হোমিওপ্যাথি কলেজের সুনীল, রাধানগর বাজারের সনদ, ডুমুরিয়া বাজারের নিশিকান্ত ও জাহিদ সহ আরো অনেকে। দীর্ঘদিন ধরে প্রশাসনের নাকের ডগায় দিনদুপুরে এমন প্রতারণা চললেও সিভিল সার্জন জানান “অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে”।