ছাত্রলীগকে নাশকতা বন্ধ করার আহ্বান ছাত্রদলের

SHARE

satrodolজাতীয়তাবাদী ছাত্রদল কেন্দ্রীয় সংসদের সভাপতি রাজিব আহসান ও সাধারণ সম্পাদক মো. আকরামুল হাসান এক বিবৃতিতে ২০ দলীয় জোটের কর্মসূচিতে ছাত্রলীগকে নাশকতা বন্ধ করার আহবান জানিয়েছেন।

নেতৃদ্বয় বলেন, “গণতন্ত্র পুণরুদ্ধারের সংগ্রামে ২০ দলীয় জোট যখন দেশের মানুষকে সঙ্গে নিয়ে আন্দোলন সংগ্রাম করে যাচ্ছে ঠিক সেই সময় লক্ষ্য করা যাচ্ছে ছাত্রলীগের কিছু দুস্কৃতিকারী যানবাহনে পেট্রোল বোমা, ককটেল নিক্ষেপসহ নানা নাশকতা করে ২০ দলীয় জোটের আন্দোলনকে ভিন্নখাতে প্রবাহের অপচেষ্টা করছে। তারা একদিকে চলমান আন্দোলনে নাশকতা করছে অন্যদিকে সরকার আজ্ঞাবহ কিছু গণমাধ্যম এবং পোষা বুদ্ধিজীবিদের দিয়ে সেই নাশকতার দায়ভার ২০ দলীয় জোটসহ ছাত্রদলের ঘাড়ে চাপানোর চেষ্টা করছে।”

তারা বলেন, “গণমানুষের একাত্মতায় আন্দোলন যখন গতি পাচ্ছে তখন ছাত্রলীগ নাশকতার মাত্রা দিন দিন বাড়িয়ে চলমান আন্দোলন থেকে জনগণকে বিচ্যুত করার অপচেষ্টা করছে। ছাত্রলীগকে সেই অপচেষ্টায় সর্বশক্তি দিয়ে সাহায্য করছে ছাত্রলীগের পোষ্য তথাকথিত গণজাগরণ মঞ্চ। সরকার এবং ছাত্রলীগের লোকবল ও অর্থায়নে পরিচালিত তথাকতিথ গণজাগরণ মঞ্চ এখন পুরোপুরি নগ্ন হয়ে ছাত্রলীগের শাখা সংগঠন হিসেবে কাজ করছে।”

নেতৃদ্বয় আরো বলেন, “ক্ষমতার লিপ্সা আওয়ামী সরকারকে কতটা নিচে নামিয়েছে তা কল্পনা করাও মুশকিল। তারা অবৈধ ক্ষমতাকে দীর্ঘায়িত করার জন্য বিরোধী জোটের আন্দোলন সংগ্রামকে সহিংসতার রুপ দেয়ার জন্য উঠে পড়ে লেগেছে। আওয়ামী সরকার ক্ষমতায় থাকার পরও পেট্রোল বোমা আর অস্ত্রসহ ছাত্রলীগ কর্মীদেরকে আটক করেছে পুলিশ। কিন্তু আশ্চর্যেয় বিষয় খুব দ্রুততার সঙ্গে তাদেরকে ছেড়েও দেয়া হয়। আবার দেখা যাচ্ছে পুলিশের নাকের ডগায় নাশকতা করছে দুর্বৃত্তরা কিন্তু পুলিশ ধরতে পারছে না কিন্তু সেই নাশকতাকে কারন দেখিয়ে খুব দ্রুত বিরোধী মতের লোকদেরকে গ্রেফতার করা হচ্ছে এবং মামলা দেয়া হচ্ছে। জনগণ এখন বুঝে গেছে এসব নাশকতা ঘটানোর অন্যতম উদ্দেশ্য বিরোধী মতের নেতা-কর্মীদেরকে মামলা দিয়ে গ্রেফতার করার অন্যতম কৌশল।”

নেতৃদ্বয় আশা করেন, আওয়ামী লীগ তথা ছাত্রলীগ এই অপকৌশল থেকে নিজেদেরকে সরিয়ে নেবে। বিরোধী আন্দোলন দমনে নাশকতা পরিহার করবে। অন্যথায় তাদের দমন-পীড়নে ফুঁসে উঠা ছাত্রসমাজ এর দাত ভাঙা জবাব দিতে বদ্ধ পরিকর।

ছাত্রদলের বিবৃতি থেকে ছাত্রলীগের নাশকতার কিছু উদাহরণ হুবহু তুলে দরা হলো-

২৯ জানুয়ারি ২০১৫ তারিখের ঘটনা: মাগুরা শহরের পারনান্দুয়ালি কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনাল এলাকা থেকে ছাত্রলীগের তিন নেতা-কর্মীকে আটক করেছে পুলিশ। তারা বাসে আগুন ধরানোর চেষ্টা করছিলেন বলে নিশ্চিত করেছে পুলিশ। বুধবার রাত পৌনে আটটার দিকে তাদের আটক করা হয়।

আটককৃত ব্যক্তিরা হলেন-  জেলা ছাত্রলীগের ধর্মবিষয়ক সম্পাদক সাজ্জাদ মোল্লা (২৪), ছাত্রলীগকর্মী লিমন (২২) ও রানা (১৯)। তাদের কাছে পেট্রলভর্তি দুটি বোতল ও দিয়াশলাই পাওয়া গেছে।

পুলিশ সূত্রে জানা যায়, রাত পৌনে আটটার দিকে বাস টার্মিনালের পাশে ঢাকা-খুলনা মহাসড়কে চলাচলকারী গাড়িতে পেট্রল ছুড়ে আগুন ধরিয়ে দেয়ার চেষ্টা করছিলেন ওই তিন যুবক। এ সময় পুলিশ তাদের হাতেনাতে আটক করে।

ওই তিন ছাত্রলীগকর্মীকে পুলিশ হেফাজতে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করার কথা স্বীকার করেছেন জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি শেখ রেজাউল ইসলাম। জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক মীর মেহেদী হাসান বলেন, “পেট্রলবোমাসহ জেলা ছাত্রলীগের ধর্মবিষয়ক সম্পাদক  সাজ্জাদ মোল্লা ও ছাত্রলীগকর্মী লিমন ও রানাকে পুলিশ আটক করেছে বলে শুনেছি। বিষয়টি দুঃখজনক।”

৯ জানুয়ারি ইজতেমা ময়দান থেকে হাত বোমাসহ নয় ছাত্রলীগ কর্মী আটকে আটক করা হয়েছে। বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল টুয়ান্টিফোর সহ জাতীয় দৈনিকে এই সংবাদ দেখা গেছে।

১০ জানুয়ারি রাজধানীর গুলিস্থান বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে আওয়ামী লীগ কার্যালয়ের সামনে ৩০টি ককলেট সহ এক যুবককে আটক করে পুলিশ। আটক ওই যুবক নিজেকে ঢাকা মহানগর ছাত্রলীগের (দক্ষিণ) আনিসুর রহমান আনিসের অনুসারী এবং সাংগঠনিক সম্পাদক এএসএম ফারেজ সামির অনুসারী বলে স্বীকারোক্তি দিয়েছে।

১৯ জানুয়ারি কুমিল্লা রেলস্টেশনের ২নং প্লাটফর্মে ককটেল ফাটিয়ে আতঙ্ক সৃষ্টির অভিযোগে ছাত্রলীগের দুই কর্মীকে আটক করেছে পুলিশ। আটককৃত শিপন ও নাছির ছাত্রলীগ কর্মী। এছাড়া নাছির কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজের আনার্স প্রথম বর্ষের ছাত্র বলে জানা গেছে।

১২ জানুয়ারি রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে শেখ মুজিবের স্বদেশে প্রত্যাবর্তন উপলক্ষ্যে আয়োজিত সমাবশে থেকে ৭৩ রাউন্ড গুলি, চারটি পিস্তল ও একটি পেট্রোল বোমাসহ পাঁচজনকে আটক করেছে পুলিশ। তাদের মধ্যে বাংলাদেশ মেডিকেল এসোসিয়েশনের (বিএমএ) সাংগঠনিক সম্পাদক ও সাবেক দুই ছাত্রলীগ নেতাও রয়েছেন। অস্ত্র-বোমাসহ আটক পাঁচজনই নিজেদের সরকার সমর্থক বলে দাবি করেছেন। শাহবাগ থানার ওসি সিরাজুল ইসলাম এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। যুগান্তর,প্রথম আলোসহ প্রথম সাড়ির জাতীয় দৈনিকে এই সংবাদ দেশের মানুষ দেখেছে।

২৫ জানুয়ারি ফেনী শহরের টেলিফোন ভবন থেকে সাতটি পেট্রোল বোমাসহ আজিম উদ্দিন (২৭)নামে এক আওয়ামী লীগ কর্মীকে আটক করেছে পুলিশ। ফেনী মডেল থানার ওসি মাহবুব মোর্শেদ গোপন সংবাদের ভিত্তিতে পানি উন্নয়ন বোর্ডেও রেস্ট হাউজের সামনে অভিযান চালিয়ে বোমা আজিমকে আটক করে। সাতটি পেট্রোল বোমা একটি ককটেল একটি দেশিয় অস্ত্র উদ্ধার করে। আটক আজিম ফেনী পৌর আওয়ামী লীগের সাধারন সম্পাদক আবদুল করিমের ভাতিজা ফরিদ আহাম্মদের ছেলে।