আদালতের প্রবেশপথ জীবাণুমুক্ত রাখতে প্রধান বিচারপতির কাছে আবেদন

SHARE

ঢাকার মুখ্য মহানগর হাকিম আদালতের (সিএমএম আদালত) বিচারক ও কর্মকর্তা-কর্মচারিরা ব্যক্তিগত স্বাস্থ্য সুরক্ষা সরঞ্জাম পেয়েছেন। গত ৪ জুন মুখ্য মহানগর হাকিম এ এম জুলফিকার হায়াত তাঁর অধীনস্থ সকল মহানগর হাকিম ও ২০৫ জন কর্মকর্তা-কর্মচারিকে কভিড-১৯ এর সুরক্ষা সামগ্রী সরবরাহ করেন। এরপর গত রবিবার সাতক্ষীরার জেলা ও দায়রা জজ শেখ মফিজুর রহমানও তাঁর অধীনস্থ বিচারক ও কর্মচারিদের স্বাস্থ্য সুরক্ষা সরঞ্জাম প্রদান করেন। সারাদেশের বিচারক ও আদালতের কর্মকর্তা কর্মচারিদের এই সুরক্ষা সামগ্রী প্রয়োজন।

দেশের অধস্তন আদালতের বিচারক কর্মচারিরা অত্যন্ত ঝুঁকি নিয়ে প্রতিদিন আদালতে কাজ করছেন। কিন্তু সরকারি বা বেসরকারি কোনো সংস্থাই বিচারকদের ব্যক্তিগত সুরক্ষা সামগ্রী সরবরাহ করেনি। ঠিক এই সময়ে ঢাকার সিএমএম আদালতে কর্মরতরা সুরক্ষা সামগ্রী পেয়েছেন। তারা কিভাবে পেলেন তা অনুকরণীয় হতে পারে অন্যান্য জেলায় কর্মরতদের জন্য।

বিচারালয়ে ভার্চুয়াল আদালত ও বিশেষ আদালতে শুনানির জন্য আইনজীবীদের প্রতিনিয়ত মারাত্মক ঝুঁকি নিয়ে যেতে হচ্ছে। তাদের স্বাস্থ্য সুরক্ষার জন্যও প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ জরুরি বলে আইনজীবীরা মনে করেন।

ঢাকাসহ সারাদেশের আদালতে ভার্চুয়াল আদালতে শুনানি চলছে। ভার্চুয়াল আদালতে সব ধরণের মামলারই শুনানি নেওয়া হচ্ছে। এ ছাড়া আসামি গ্রেপ্তারের পর আদালতে যে সব আসামি পাঠানো হচ্ছে তাদের শুনানি সরাসরি গ্রহণ করছেন বিচারকরা। আসামিদের স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি নেওয়া হচ্ছে খাস কামরায়। প্রকাশ্য আদালতের তাদের বিভিন্ন আবেদনের ওপর শুনানি হচ্ছে। এসব শুনানির সঙ্গে সম্পৃক্ত রয়েছেন বিচারক, আইনজীবী, আদালতের কর্মচারি ও পুলিশ। প্রত্যেকেরই কভিড-১৯ এর ঝুঁকি রয়েছে। এই অবস্থায় স্বাস্থ্য সুরক্ষার সরঞ্জাম প্রত্যেকেরই দরকার। কিন্তু দেশের অধস্তন আদালতে স্বাস্থ্য সুরক্ষার সরঞ্জাম সরবরাহ নেই।

জানা গেছে, ঢাকার সিএমএম জুলফিকার হায়াতের ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় তার আদালতের বিচারক ও কর্মচারিদেরকে কভিড-১৯ সুরক্ষা সরঞ্জাম সরবরাহ সম্ভব হয়েছে। এসব সামগ্রীর মধ্যে রয়েছে, পিপিই, ফেস মাস্ক, হ্যান্ড গ্লোভস, হ্যান্ড স্যানিটাইজারসহ আরও সরঞ্জাম। আদালতের বিভিন্ন কাজের জন্য বরাদ্দ জরুরি তহবিলের (কন্টিনজেন্সি/কন্টিনজেন্ট ফান্ড) খরচ কমিয়ে সমন্বয় করে এসব সামগ্রী কেনা হয়েছে বলে জানা গেছে। এ ছাড়া বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের থেকেও কিছু সরঞ্জাম সংগ্রহ করা হয়েছে। নিরাপদে ও নির্বিঘ্নে যাতে স্বাস্থ্যবিধি মেনে আদালতের কাজ সঠিকভাবে সম্পন্ন করা যায় সেই উদ্দেশেই এই সুরক্ষা সামগ্রী সরবরাহ করা হয়। ঢাকার সিএমএম আদালতে কর্মরতরা সিএমএমকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন।

সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মাহবুবুর রহমান কালের কণ্ঠকে বলেন, প্রত্যেক আদালতেই জরুরি তহবিল নামে একটি তহবিলের বরাদ্দ থাকে। অন্যান্য কাজের থেকে করোনার এই সময়ে বেঁচে থাকার লড়াইটাই বড় কাজ। এই কারণে ওই তহবিলের থেকে টাকা সমন্বয় করে সিএমএম মহৎ কাজ করেছেন। দেশের অন্যান্য অধস্তন আদালতের প্রধানরাও এই দৃষ্টান্ত অনুকরণ করতে পারেন। তাহলে বিচারক ও আদালত সহায়ক কর্মকর্তা-কর্মচারিরা কিছুটা হলে নির্ভয়ে সেবাদান করতে পারবেন।

আদালতে বিভিন্ন মামলার শুনানিতে আইনজীবীদেরও যেতে হচ্ছে। ভার্চুয়াল পদ্ধতিতে শুনানি হলেও আনুসঙ্গিক কাজের জন্য কয়েক দফা আইনজীবীদের ও আইনজীবী সহকারীদের যেতে হয়। তারা ব্যক্তিগত সুরক্ষা সরঞ্জাম ব্যবহার করে যান। কিন্তু আদালতে প্রবেশ পথে কোনো হাত ধোঁয়ার ব্যবস্থা নেই। নেই হ্যান্ড স্যানিটাইজারের মাধ্যমে হাত পরিস্কার করার ব্যবস্থা। ফলে আইনজীবীদর আরও বেশি ঝুঁকি নিয়ে কাজ করতে হচ্ছে। এ কারণে প্রত্যেক আদালতের প্রবেশ পথে হাত ধোয়ার স্থায়ী ব্যবস্থা ও পর্যাপ্ত হ্যান্ড স্যানিটাইজারের ব্যবস্থা করা প্রয়োজন বলে আইনজীবীরা দাবি করেছেন।

ঢাকার জ্যেষ্ঠ আইনজীবী সৈয়দ আহমেদ গাজী কালের কণ্ঠকে বলেন, আইনজীবীরা ঝুঁকি নিয়ে আদালতে যাচ্ছেন। কিন্তু আদালতের প্রবেশমুখে হাত ধোয়ার ব্যবস্থা নেই। স্যানিটাইজারের ব্যবস্থাও নেই। বাংলাদেশ কভিড-১৯ ভাইরাসমুক্ত হবে কবে তা অনিশ্চিত। কাজেই স্থায়ীভাবে আদালতের প্রবেশমুখে পর্যাপ্ত হাতধোয়ার ব্যবস্থা ও হ্যান্ড স্যানিটাইজারের ব্যবস্থা রাখা উচিত।

ব্যারিস্টার মো. হুমায়ুন কবির পল্লব ও ব্যারিস্টার মোহাম্মদ কাউসার গত ১৬ মে দেশের আদালত সমূহের প্রবেশ পথে হাত ধোয়ার ব্যবস্থা, হ্যান্ড স্যানিটাইজার রাখার ব্যবস্থা ও জীবানুনাশক ওষুধ রাখার নির্দেশ দেওয়ার জন্য প্রধান বিচারপতির কাছে আবেদন জানিয়েছেন। এসব রাখার নির্দেশনা চেয়ে হাইকোর্টে একটি রিটও দায়ের করেছেন এই দুই আইনজীবী।

ব্যারিস্টার পল্লব বলেন, গত কয়েকদিনে অসংখ্য আইনজীবী ও কোর্ট স্টাফ করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন। মারাও গেছেন কয়েকজন। বিচারকরাও এর থেকে মুক্ত নন। আদালতে প্রচুর জনসমাগম হয়। সেখান থেকে করোনা সারাদেশে ছড়িয়ে পড়তে পারে। তাই কোর্ট খোলার আগেই দেশের সব আদালত প্রাঙ্গনে থার্মাল স্ক্যানার স্থাপন, রিমোট থার্মোমিটার, পর্যাপ্ত স্যানিটাইজার, সাবান এবং হাত ধোয়ার উপকরণ সরবরাহ অত্যন্ত জরুরি।