সংসদে না থেকেও অধিবেশনজুড়ে আলোচনায় বিএনপি

SHARE

sansodhঢাকা: চলতি সংসদের মধ্যবর্তী অধিবেশন সম্প্রতি শেষ হয়েছে। আর সবগুলো রাজনৈতিক দল থেকে আসা অধিকাংশ সংসদ সদস্যই মূলত বিএনপি প্রধান বেগম খালেদা জিয়া এবং দলটির প্রতিষ্ঠাতা শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানকে নিয়েই পুরো অধিবেশন জুড়ে মাথা ঘামিয়ে গেছেন।  দশম জাতীয় সংসদে বিএনপির কোনো প্রতিনিধি না থাকলেও যখনই সংসদে কোনো বিষয় গুরুত্বের সঙ্গে উঠে আসছে কিংবা কোনো বিষয় নিয়ে কোনো গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হচ্ছে, তখন সব নীতিনির্ধারক ও সরকারের মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীর মনোযোগ গিয়ে পড়ছে বিএনপির ওপরেই।  সম্প্রতি শেষ হওয়া চলতি সংসদের মধ্যবর্তী অধিবেশনে পুরো সময়জুড়েই বিএনপি প্রধান খালেদা জিয়া, তার স্বামী ও দলটির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমান এবং তাদের ছেলে ও দলের সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানই সংসদ সদস্যদের আলোচনার বিষয়বস্তু হিসেবে প্রাধান্য পেয়েছেন। সাম্প্রতিক সময়ে কিছু বিতর্কিত মন্তব্যকে কেন্দ্র করে খালেদা ও তারেকের ওপর রীতিমতো বিষ উগড়েছেন তারা। ৫ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণ না করার কারণেও বিএনপির নেতৃত্বে থাকা ব্যক্তিদের তীব্র সমালোচনা করেন তারা।  নবম জাতীয় সংসদে দেশের প্রধান বিরোধী দল হিসেবে আসীন হয়েছিল বিএনপি। তখন বিএনপিকে যতটা গুরুত্ব দিয়ে সংসদে আলোচনা-সমালোচনা করতেন সরকারি দলের সংসদ সদস্য ও মন্ত্রীরা, নির্বাচন বর্জন করার কারণে চলতি সংসদে বিএনপি না থাকলেও সেই একইরকম গুরুত্ব দিয়েই আলোচনা চালিয়ে যাওয়া হচ্ছে। বিশেষ করে মাত্র শেষ হওয়া এই অধিবেশনের প্রশ্নোত্তর পর্বে রাষ্ট্রপতির ভাষণের ওপর আলোচনাসহ সব ধরনের জনগুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিয়েই আলোচনা করার সময় সংসদ সদস্যরা এমনভাবে বিএনপি নেতার ওপর আক্রমণ চালিয়েছেন যেন নবম সংসদের মতোই এখনো বিএনপিই প্রধান বিরোধী দল রয়েছে!  শুধু তাই নয়, কার্যতালিকা অনুসারে দিনের অধিবেশন শুরু হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই বিএনপি-জিয়াউর রহমান-খালেদা জিয়া-তারেক রহমানের বিরুদ্ধে বিভিন্ন অসংসদীয় শব্দ তো ছুঁড়ে দিতেনই, এমনকি এতে তারা এতটাই মেতে থেকেছেন যে, এতে সময়ক্ষেপণ হওয়ার কারণে অধিকাংশ সময়েই মন্ত্রীদের প্রশ্নোত্তর পর্ব এবং জনগুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনার জন্য নির্ধারিত সময়ও পার হয়ে যায়।  ২৯ জানুয়ারি থেকে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন সংসদীয় অধিবেশন শুরু হওয়ার প্রথম দিন থেকে শুরু করে অনুষ্ঠিত হওয়া গত ৩৫টি অধিবেশনেই সংসদ সদস্যরা মেতেছিলেন বিএনপির সমালোচনাতেই। গত ৮ এপ্রিল পর্যন্ত মোট ২২৩ জন সংসদ সদস্য রাষ্ট্রপতির উদ্দেশ্যে বক্তব্য রেখেছেন মোট ৫২ ঘণ্টা, আর হাতেগোণা কয়েকটি ব্যতিক্রম ছাড়া অধিকাংশ নীতিপ্রণেতারাই তাদের পুরো বক্তব্য উৎসর্গ করেছেন বিএনপির প্রতি।  ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের হুইপ আতিউর রহমান আতিক বলেন, “আমাদের সংসদ সদস্যরা বিএনপির বিরুদ্ধে সংসদে কথা বলেন, কারণ সংসদে আমাদের প্রধান বিরোধী দলের সঙ্গে আমাদের অত্যন্ত বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক। তাই বিএনপিই প্রকৃত বিরোধী দল। তাই বিএনপির বিরুদ্ধেই আমাদের সংসদ সদস্যরা কথা বলবেন।”  এ সময় তিনি প্রশ্নকর্তার প্রতি পাল্টা প্রশ্ন ছুঁড়ে দিয়ে বলেন, “আমি কি আপনার সঙ্গে ঝগড়া করতে পারবো যদি আমাদের মধ্যে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক থাকে?”  আওয়ামী লীগের জ্যেষ্ঠ নেতা রহমত আলী জানান, সংসদে কোনোভাবেই বিএনপি প্রতিনিধিত্ব করছে কি করছে না তা কোনো ব্যাপারই নয়, কারণ বিএনপির সঙ্গেই আওয়ামী লীগের বিরোধিতা রয়েছে। তিনি বলেন, “কাজেই যা হচ্ছে তা হতেই থাকবে যতদিন পর্যন্ত না দুই দলের সম্পর্কের উন্নতি হয়।”  দিনের নির্ধারিত কার্যবিধিতে ‘পয়েন্টস অব অর্ডার’ না থাকলেও শেষ হওয়া অধিবেশনটির মোট ৩৫ দিনের কার্যদিবসের মধ্যে অন্তত ২৬ দিনই ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জাসদ) ও ওয়ার্কার্স পার্টি এবং বিরোধী দলে থাকা জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্যরা শুধু খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানের বক্তব্যের পাল্টা জবাব দেয়ার জন্যই পয়েন্টস অব অর্ডারে কথা বলেছেন।  জিয়াউর রহমানকে দেশের প্রথম রাষ্ট্রপতি হিসেবে আখ্যায়িত করে খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানের দেয়া বক্তব্যের প্রসঙ্গটি নিয়ে গত ৩০ মার্চ জাসদের সংসদ সদস্য মঈন উদ্দীন বাদল সংসদে নিজ বক্তব্য উত্থাপন করেন। এই প্রসঙ্গটি সেদিনের কার্যবিধিতে নির্ধারিত না থাকলেও পরে আটজন মন্ত্রী- মতিয়া চৌধুরী, আমির হোসেন আমু, তোফায়েল আহমেদ, সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত, আব্দুল লতিফ সিদ্দিকী, তাজুল ইসলাম চৌধুরী, নজিবুল বাশার মাইজভাণ্ডারী এবং কাজী ফিরোজ রশীদ এই প্রসঙ্গে কথা বলেন দুই ঘণ্টা ধরে। এর ফলে রাষ্ট্রপতির উদ্দেশ্যে দেয়া বক্তব্যের জন্য নির্ধারিত সময় সেদিন কমিয়ে ফেলা হয়। ফারুক খান, মুজিবুল হক চুন্নু এবং বীরেন শিকদার- মাত্র এই তিনজন সেদিন রাষ্ট্রপতির ভাষণের ওপর বক্তৃতা দেন।  গত সোমবারের অধিবেশনে নির্ধারিত আলোচনা শুরু হওয়ার আগেই গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রী মোশাররফ হোসেন ‘পয়েন্ট অব অর্ডার’-এ কথা বলার জন্য সময় চেয়ে নেন। খালেদা জিয়া বর্তমানে অর্থনৈতিক সংকটের মধ্য দিয়ে দিন পার করছেন দাবি করে সংবাদপত্রে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনের ওপর আলোচনার জন্য তিনি ‘পয়েন্ট অব অর্ডার’ নেন এবং ১০ মিনিটেরও বেশি সময় জুড়ে সেদিন তিনি খালেদা জিয়া, জিয়াউর রহমানসহ পুরো বিএনপির বিরুদ্ধেই তীব্র সমালোচনা করেন।  পরে কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরীও তাকে অনুসরণ করেন এবং একই বিষয়ে কথা বলেন। খালেদা জিয়ার সমালোচনাই শুধু নয়, ১৯৭১ সালে খালেদা জিয়ার কী ভূমিকা ছিল বা তিনি কোন অবস্থায় ছিলেন তা নিয়েও তীব্র সমালোচনা করেন মতিয়া।  সংসদীয় সচিবালয়ের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, কার্যবিধিতে নির্ধারিত না হওয়ার পরেও সংসদের মূল্যবান সময়ের কতোটা অংশ অনির্ধারিত এসব বিষয়ে আলোচনার জন্য উৎসর্গ করে দেয়া হয়েছে তা এখনো গুণে শেষ করে উঠতে পারেননি তারা। সূত্র: ঢাকা ট্রিবিউন।