১৩০০ বছর পুরনো মমিতে উল্কি করা মিকাইল (আঃ) –এর নাম!

SHARE

momi1300সম্প্রতি প্রায় ৭০০ খৃষ্টাব্দের এক মিশরীয় নারীর মমিতে খুঁজে পাওয়া গেছে একটি ট্যাটু বা উল্কি! মমিটির পরিধেয় কাপড় খুলে যখন এর দেহ স্ক্যান করা হয়েছে, তখন তার উরুতে এক উঁল্কি পাওয়া গিয়েছে যাতে লেখা মুসলিমদের এবং খৃষ্টানদের ধর্মমত অনুযায়ী এক ফেরেশতা, মাইকেল বা মিকাইল (আঃ) –এর নাম!

একদল গবেষকবৃন্দ গত ২৩ মার্চ এই আবিষ্কারটি করেন যখন তারা বৃটিশ মিউজিয়ামে উন্নত মেডিকাল স্ক্যান পদ্ধতি নিয়ে একটি গবেষনা কার্জ চালাচ্ছিলেন! এতে অন্তর্ভুক্ত ছিল Computed Tomography বা সিটি স্ক্যান পদ্ধতি যার সাহায্যে গত বছর যুক্তরাজ্যের এক হাসপাতালে বেশ কিছু মিশরীয় মমি পরীক্ষা করে দেখা হয়! এটি এক্স-রে প্রযুক্তি ব্যবহার করে রোগীর দেহের ভেতরকার হাড় ও অঙ্গ প্রত্যঙ্গগুলোর ত্রিমাত্রিক ছবি তৈরি করে।

নারীটির দেহ সমাধিস্থ করার আগে উল এবং লিনেন কাপড়ে মোড়া হয়েছিল, এবং তার দেহাবশেষ মমিতে রূপান্তরিত হয় মরুভুমির ভেতরে সমাধিস্থ হওয়ার কারণে। মমি হওয়া নারীটির বয়স ছিল ২০ থেকে ৩৫ এর মাঝামাঝি যিনি ১৩০০ বছর আগে জীবিত ছিলেন। মিউজিয়ামের কিউরেটর কর্তৃক যে পাঠোদ্ধার করা হয় তা অনুযায়ী, তার উরুতে প্রাচীন গ্রীক হরফে লেখা ছিল Μιχαήλ , যা অনুবাদ করলে হয় M-I-X-A-H-A, অথবা Michael (মিশেল বা মাইকেল)।

মিউজিয়ামের কিউরেটরগণ ধারণা করেন যে এই উঁল্কিটি খোদিত হয়েছে ধর্মীয় এবং আত্মিক রক্ষাকবচ হিসেবে,যদিও তারা বিস্তারিত আনুষাংগিক বর্ণনা দিতে অস্বীকৃতি জানিয়েছেন।

গ্রীক এবং রোমানদের মত, ভূমধ্যসাগরের তীরবর্তী অঞ্চলের লোকজনদের একটি অংশ যারা শিক্ষিত ছিল, তারা অক্ষরের আকৃতি নিয়ে বেশ আকর্ষিত বোধ করত এবং কোন নামের অক্ষর দিয়ে ডিজাইন তৈরি করতে অনেক পছন্দ করত। তথাপি আমরা একটা অনিয়ত আকৃতির উল্কি পেয়েছি যা অক্ষরের সমন্বয়ে তৈরি ছিল।

প্রাচীনকালে কোন শক্তিশালী দৈব রক্ষাকারী সত্ত্বার নাম দেহে উঁল্কির মাধ্যমে খোদাই করা বা কোন কবচে ধারন করা ছিল বহুল প্রচলিত একটি বিষয়। ফক্সনিউজ ডট কমকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে টিলি (Tilley) বলেন “ যেসমস্ত খৃষ্টান মেয়েরা গর্ভবতী হতেন তারা প্রায়ই দৈব স্বত্বা অথবা অ্যাঞ্জেলদের নাম সম্বলিত কবচ বা কোমরবন্ধনী তাদের পেটে পরতেন, যাতে করে তাদের সন্তান নিরাপদে জন্ম নিতে পারে।“

“যোনির কাছাকাছি উরুর ভেতরের দিকে উল্কির মাধ্যমে নাম খোদাই করা, যেমনটা এই মমিতে দেখা যাচ্ছে, হয়ত সন্তান জন্ম দেয়ার আশায় অথবা যৌন নির্যাতন থেকে রক্ষা পাবার আশায় করা হয়েছিল, অনেকটা আমরা জমিতে যেভাবে সাইনবোর্ড টানিয়ে দেই, “এই সম্পত্তি অমুকের দ্বারা সুরক্ষিত” সেভাবে! মাইকেল নামটা এমন একধরণের উল্কির জন্য বেশ যুতসই ছিল কেননা তিনি সবচাইতে শক্তিশালী এঞ্জেল বা ফেরেশতা”, টিলি বলেন।

মমিটি প্রায় দশ বছর আগে খুঁজে পাওয়া গিয়েছিল। এটি এতটাই সতেজ ছিল যে প্রত্নতাত্বিকগণ খালি চোখেই এর উরুসন্ধির কাছাকাছি অংকিত উল্কিটি দেখতে পেতেন। কিন্তু চিকিৎসাবিজ্ঞানের ইনফ্রারেড প্রযুক্তি তাদেরকে এটি পরিষ্কারভাবে দেখতে সাহায্য করেছে। মমিটি আরেকটি বিষয় আমাদেরকে জানায় যে শুধু রাজবংশীয় মানুষই নয়, সাধারণ মানুষকেও প্রাচীন মিশরে মমি করে রাখা হত। এপর্যন্ত সবচাইতে পুরনো যে মমির ওপর বৈজ্ঞানিক গবেষণা চালানো হয়েছিল তার বয়েস ছিল ৫,৫০০ বছর।