কমছে রসুনের দাম, পড়তি পেঁয়াজও

SHARE

বাজারে অবশেষে কমেছে রসুনের দাম। নতুন মৌসুমের দেশি রসুন ক্রেতারা এখন ৮০ থেকে ১০০ টাকা কেজির মধ্যেই কিনতে পারছেন। কমছে পেঁয়াজের দামও। ব্যবসায়ীরা বলছেন, ১৫ মার্চ থেকে ভারতীয় পেঁয়াজ আমদানি শুরু হলে দাম আরও কমবে। তবে চাল, চিনি ও ভোজ্যতেলের দাম এখনো চড়া।

পেঁয়াজ ও রসুনের দাম কমার মধ্য দিয়ে দীর্ঘ সময় ধরে মসলার বাজারে যে ভয়ানক অস্বস্তি ছিল, তা কাটতে শুরু করেছে। সাধারণ মানুষকে গত ডিসেম্বর থেকে ব্যাপক চড়া দামে রসুন কিনতে হচ্ছিল। তারও আগে, সেপ্টেম্বর থেকে চড়া ছিল পেঁয়াজের দাম। যদিও এখনো পণ্য দুটির দাম স্বাভাবিক হয়নি।

সরকারি সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) হিসাবে, গত বছরের একই সময়ের তুলনায় এখনো পেঁয়াজের দাম ১৭৭ শতাংশ বেশি। আর রসুনের দর বেশি ৪২ শতাংশ।

ঢাকার কাজীপাড়ায় গতকাল বৃহস্পতিবার সকালে ভ্রাম্যমাণ বিক্রেতারা প্রতি কেজি দেশি ও মিয়ানমারের পেঁয়াজ ৮০ এবং দেশি রসুন ৮০ টাকা দরে বিক্রি করছিলেন। বাজারে ঢুকে দেখা গেল, বিক্রেতারা সব কটি পণ্যের দামই ১০০ টাকা চাইছিলেন। তবে দর-কষাকষি করে কিছুটা কমানো যাচ্ছিল। বিকেলে ঢাকার কারওয়ান বাজারে দেখা যায়, পাইকারি বাজারে (৫ কেজি কেনা যায়) দেশি পেঁয়াজের কেজিপ্রতি দর ৭০-৭২ টাকা, মিয়ানমারের ছোট পেঁয়াজ ৭৫ টাকা ও বড় পেঁয়াজ ৭২ টাকা দরে বিক্রি করছেন বিক্রেতারা।

বাজারে এখন মূলত মিয়ানমারের পেঁয়াজই সবচেয়ে ভালোমানের এবং বেশি বিক্রি হচ্ছে। দুই সপ্তাহ আগেও এ পেঁয়াজের কেজি ১৪০ টাকা ছিল। আর দেশি নতুন রসুনের কেজি ছিল ১৫০ টাকা। কমেছে চীনা রসুনের দামও। ২০০ টাকা থেকে নেমে তা ১৭০ থেকে ১৮০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।

নিজেদের বাজার সামাল দিতে ভারত গত ২৯ সেপ্টেম্বর পেঁয়াজ রপ্তানি বন্ধ ঘোষণা করে। এর পরই বাংলাদেশের বাজারে লাফিয়ে লাফিয়ে পেঁয়াজের দাম বাড়তে থাকে। একসময় দেশি পেঁয়াজের কেজি ২৫০ টাকায় উঠেছিল।

ভারত ১৫ মার্চ থেকে পেঁয়াজ রপ্তানির দরজা খুলে দেবে। এ সিদ্ধান্তের প্রজ্ঞাপন জারি হয়েছে। ভারতীয় পেঁয়াজ আসার সময় দেশি নতুন মৌসুমের হালি পেঁয়াজও বাজারে উঠতে শুরু করবে। চাষিরা দাম একেবারে কমে যাওয়ার আশঙ্কা নিয়ে দুশ্চিন্তায় রয়েছেন।

চাল, চিনি ও ভোজ্যতেলের দাম এখনো চড়া। মধ্যম আয়ের পরিবারে এক কেজি সরু চাল কিনতে হচ্ছে ৫৫ থেকে ৫৬ টাকা দরে।

কারওয়ান বাজারের মসলা-জাতীয় পণ্যের বিক্রেতা সাকিব আহমেদ আদা ও শুকনা মরিচের দাম কমার খবর দেন। তিনি বলেন, মাসখানেক আগেও প্রতি কেজি শুকনা মরিচ ৩৮০ টাকা দরে বিক্রি করেছেন। এখন দেশি, ইন্দোনেশিয়া ও ভারতীয় মরিচ ২৪০ থেকে ২৫০ টাকার মধ্যে পাওয়া যায়। আদা কেনা যায় ১২০ টাকা দরে। অবশ্য চীনা আদা ১৪০-১৫০ টাকা দরেই বিক্রি হয়।

চালের বাজার নিয়ে অস্বস্তি বাড়ছেই। ঘরের চাল ফুরোনোর পর যাঁরা নতুন করে বাজারে চাল কিনতে গেছেন, তাঁদেরই চড়া দাম দিতে হয়েছে। যেমন, রফিকুল ইসলাম কাজীপাড়া থেকে প্রতি ২ মাস পরপর ৫০ কেজির এক বস্তা মিনিকেট চাল কেনেন। আগের দফায় কিনেছিলেন ৪৬ টাকা কেজি দরে। এখন তা ৫৫ টাকা। তিনি বলেন, ‘এক বস্তা চাল কিনতেই এখন আমাকে ৪৫০ টাকা বাড়তি ব্যয় করতে হচ্ছে।’ খুচরা বাজারে এক কেজি চিনির দাম এখন ৬৮-৭০ টাকা। বড় বাজারে তা ৬৬ টাকায় পাওয়া যায়। গত মাসে চিনির দাম এক দফা বেড়েছে। এর আগে খুচরায় সর্বোচ্চ দর ৬৫ টাকা ছিল। ভোজ্যতেলের দাম কমেনি, বরং কিছুটা বাড়তির দিকে। টিসিবি বলছে, বাজারে খোলা সয়াবিন তেলের দাম এখন লিটারপ্রতি ৮৯ থেকে ৯০ টাকা, যা এক সপ্তাহ আগে ৮৫ থেকে ৮৮ টাকা ছিল।

আসন্ন পবিত্র রমজানে দ্রব্যমূল্য স্থিতিশীল রাখতে ব্যবসায়ীদের সতর্ক করেছেন বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি। গতকাল চট্টগ্রামের পলোগ্রাউন্ড মাঠে ২৮তম চট্টগ্রাম আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে তিনি বলেন, ‘খাতুনগঞ্জের ব্যবসায়ীদের কাছে আমাদের অনেক আশা। কেউ পণ্য মজুত করে অনেক টাকা আয় করে ফেলবেন, আবার কেউ না খেয়ে থাকবে, তা যেন না হয়।’