তাঁদের হাতে ম্যাচের চাবি

SHARE

মঞ্চে আলোটা ছড়াতে তৈরি বাংলাদেশের স্পিনার রকিবুল হাসান-শামীম হোসেন কিংবা দুই পেসার শরিফুল ইসলাম আর তানজিম হাসান সাকিব। বাংলাদেশের জন্য চ্যালেঞ্জের হবে ভারতীয় লেগ স্পিনার রবি বিষ্ণুকে সামলানো। প্রয়োজনের সময় উইকেট এনে দিতে জুড়ি নেই তাঁর।

বিশ্বকাপটা এখন এশিয়া কাপ! দক্ষিণ আফ্রিকার কঠিন কন্ডিশনে প্রত্যাশামতোই ফাইনালে ভারত। শিরোপায় চোখ রেখে যাওয়া বাংলাদেশও প্রথমবার যুব ক্রিকেট বিশ্বকাপের ফাইনালে। কোনো পেসারের একটা আগুনে স্পেল বা স্পিনারের মায়াবি ঘূর্ণিতে নির্ধারিত হয়ে যেতে পারে শিরোপা-ভাগ্য। সেই মঞ্চে আলোটা ছড়াতে তৈরি বাংলাদেশের স্পিনার রকিবুল হাসান-শামীম হোসেন কিংবা দুই পেসার শরিফুল ইসলাম আর তানজিম হাসান সাকিব। বাংলাদেশের জন্য চ্যালেঞ্জের হবে ভারতীয় লেগ স্পিনার রবি বিষ্ণুকে সামলানো। প্রয়োজনের সময় উইকেট এনে দিতে জুড়ি নেই তাঁর। ইনিংসের শুরুতে কার্তিক ত্যাগী আর সুশান্ত মিশ্রর গতি ও সুইং সামলানোর ওপরও নির্ভর করছে অনেক কিছু।

সেমিফাইনালে সেঞ্চুরি করে বাংলাদেশকে জিতিয়েছেন মাহমুদুল হাসান জয়। রাহুল দ্রাবিড়ের এই ভক্ত এখন ‘বাংলাদেশি দেয়াল’। তেমনি সেমিফাইনালে পাকিস্তানের বিপক্ষে সেঞ্চুরি করা যশস্বী জয়সওয়ালকে নিয়েও চলছে মাতামাতি। তাঁর জাতীয় দলে জায়গা পাওয়াটা হয়তো বেশি দূরের ব্যাপার নয়। এবারের অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপে সবচেয়ে বেশি ৩১২ রান করা যশস্বীকে থামাতে বাংলাদেশের পরিকল্পনা কী? তাঁকে দ্রুত ফেরাতে না পারলে কিন্তু ভোগান্তি আছে বোলারদের। তবে আলাদা কাউকে নিয়ে না ভেবে নিজেদের স্বাভাবিক ক্রিকেট খেলার কথাই জানালেন পেসার তানজিম হাসান সাকিব, ‘সব কিছু স্বাভাবিকভাবে নিচ্ছি আমরা। কেউ চাপে নেই। কাউকে ভয় পাওয়ারও কিছু নেই। আর একটা ম্যাচ বাকি, যা জিততে চাই সবাই।’

তাহলেই বৈশ্বিক কোনো টুর্নামেন্টে প্রথমবার ফাইনালে ওঠাটা পাবে পূর্ণতা। এ জন্য আলাদাভাবে নজর থাকবে বাঁহাতি স্পিনার রকিবুল হাসানের ওপর। বাংলাদেশিদের মধ্যে পাঁচ ম্যাচে সবচেয়ে বেশি ১১ উইকেট তাঁর। এবারের বিশ্বকাপে স্কটল্যান্ডের বিপক্ষে করেছেন হ্যাটট্রিকও। কোয়ার্টার ফাইনালে দক্ষিণ আফ্রিকার সঙ্গে ১৯ রানে ৫ উইকেট নিয়ে ম্যাচসেরা তিনি। সেমিফাইনালে ৩৫ রানে শিকার ১ উইকেট। বাংলাদেশের বাঁহাতি স্পিনারদের ঐতিহ্য ফিরিয়ে আনার সব রকম রসদ আছে রকিবুলের মাঝে। আজ ঘূর্ণিজাদু দেখিয়ে জেতাতে পারলে নিজেকে অন্য উচ্চতাতেই নিয়ে যাবেন ময়মনসিংহের এই স্পিনার।

বাঁহাতি পেসার শরিফুল ইসলামের জুড়ি নেই শুরুতে উইকেট এনে দেওয়ায়। তাঁর সঙ্গে ডানহাতি পেসার তানজিম হাসান সাকিব গতিতে ঘায়েল করতে চান অপর প্রান্তে। এবারের বিশ্বকাপে শরিফুলের উইকেট ৭ আর সাকিবের ৫টি। এই দুজন শুরুতে জ্বলে উঠতে পারলে মাথা তুলে দাঁড়াতে পারবে না ভারতীয় টপ অর্ডার। তাঁরা ভালো শুরু এনে দিলে রকিবুলের হাসানের সঙ্গে মিলে ডানহাতি অফ স্পিনার শামীম হোসেনের সামর্থ্য আছে রান আটকে দেওয়ার। দক্ষিণ আফ্রিকায় মাত্র ৩.৭৫ ইকোনমি রেটে শামীমের উইকেট ৫টি। দ্বিতীয় স্পেলে এসেও শরীফুল বেশি কার্যকর হয়েছেন এবার। ভারতীয় দুই মিডল অর্ডার তিলক বর্মা ও অধিনায়ক প্রিয়ম গ্রেগের ভালো পরীক্ষাই নিতে পারেন এই পেসার।

শেষ ১০ ওভারে মাথা ব্যথার কারণ হতে পারেন ভারতীয় মিডল অর্ডার সিদ্দেশ বীর। ‘৩৬০ ডিগ্রি’ ব্যাটসম্যান হিসেবে পরিচিতি পাওয়া বীর গ্রুপ পর্বের প্রথম ম্যাচে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ২৭ বলে অপরাজিত ছিলেন ৪৪ রানে। উইকেটও পেয়েছিলেন দুটি। এরপর কোয়ার্টার ফাইনালে ব্যাটিংয়ের সুযোগ পেয়ে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে খেলেন ২৫ রানের কার্যকরী ইনিংস। তাঁর জন্যও বিশেষ পরিকল্পনা নিয়ে নামতে হবে রকিবুল-শরীফুলদের।

ভারতীয় দুই পেসার কার্তিক ত্যাগী ১১ আর সুশান্ত মিশ্র যুব বিশ্বকাপে পেয়েছেন ৫ উইকেট। বাংলাদেশি দুই ওপেনার পারভেজ হোসেন ইমন ও তানজিদ হাসানের জন্য চ্যালেঞ্জ এই দুজন। শুরুতে তাঁদের সামলাতে পারলে উইকেট নিতে ভারতীয় অধিনায়ক পাঠাবেন সেরা বাজি রবি বিষ্ণুকে। বিশ্বকাপে তাঁর উইকেট ১৩টি। জাপান ও নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে টানা দুই ম্যাচে ৪টি করে উইকেট তাঁর। সেমিফাইনালে পাকিস্তানের বিপক্ষেও ২ উইকেট। ভারতীয় বোলারদের মধ্যে শুধু নিজেকে মেলে ধরতে পারেননি বাঁহাতি পেসার আকাশ সিং। রানের গতি বাড়াতে তাঁকে লক্ষ্য বানাতেই পারেন বাংলাদেশি ব্যাটসম্যানরা।

ডেথ বোলিংয়ে বিষ্ণুর সঙ্গে ভারতের বাজি বাঁহাতি স্পিনার অথর্ব আঙ্কোলেকার। কার্তিক ত্যাগীর ইয়র্কার সামলানোও সহজ নয় তখন। বাধার এই পাহাড়গুলো টপকাতে পারলেই স্বপ্নের শিরোপা আনন্দে মাততে পারে আকবর আলীর দল। ভারতের কাছে এশিয়া কাপ আর ইংল্যান্ডের ত্রিদেশীয় সিরিজ ফাইনালে হারের বদলা নেওয়াও হবে তাতে। তবে ক্ষতে মলম দেওয়া নয়, শিরোপা জিতে বাংলাদেশ ক্রিকেটকে নতুন দিগন্তে নিয়ে যাওয়াই লক্ষ্য আকবর আলীর দলের।