খাবারের অভাব নাই, পরিবেশ নিয়ে উদ্বেগে আছি

SHARE

অনেক খাবার খাচ্ছি, খাবারের অভাব নাই, তবে পরিবেশ নিয়ে উদ্বেগে আছি। চেকআপ করা হচ্ছে। স্বাস্থ্য বিভাগ-সেনাবাহিনীর সদস্যরা সার্বক্ষণিক যত্ন নিচ্ছেন, দেখভাল করছেন। সেদিকে কোনো কমতি নেই। তবে সমস্যা হচ্ছে পরিবার পরিজন নিয়ে যে কয়জন আছেন তাদের। এছাড়া এক কক্ষে থাকার ফলে একজন থেকে আরেক জনের মধ্যে ঝুঁকিও আছে। এটা নিয়ে আমরা উদ্বিগ্ন। কি হবে বুঝতে পারছি না।’

রাজধানীর আশকোনা হাজি ক্যাম্পে থাকা চীনফেরত বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী অধ্যাপক মো. আব্দুল কাইয়ুম আজ রবিবার রাতে কালের কণ্ঠকে এমন বিবরণ দেন।

আব্দুল কাইয়ুম বলেন, আমরাও দেখছি এখানে সরকারের পক্ষ থেকে আমাদের জন্য সবকিছুই করছে। আমরা পরিবার নিয়ে যারা আছি তাদের জন্য আলাদা ব্যবস্থা করার আবেদন করেছিলাম। সেই আবেদন নিয়ে তারা চেষ্টাও করেছিল। কিন্তু এখন পর্যন্ত তারা কোনো পথ বের করতে পারেনি। আমরা এখন শিশুদের নিয়ে কিছুটা শঙ্কায় আছি। এছাড়া নারী পুরুষ একই রুমে থাকায় তাদের প্রাইভেসির সমস্যা হচ্ছে। আমার স্ত্রীও আমার একই বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকর্মী। সে এবং আমাদের শিশু সন্তানও আমার সঙ্গে আছে। তাদের সমস্যা হচ্ছে বেশি।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আরেকজন বলেন, চীনে আমরা ঘরবন্দি ছিলাম। বাইরে বের হতে পারতাম না। তবে ঘরে আগে থেকেই খাবার মজুদ করে রেখেছিলাম। সেখানে কোয়ারাইনটাইনটা খুব ভালোভাবেই পালন করা গেছে। এখানে সেটা হচ্ছে না।

আশকোনা হাজি ক্যাম্পের পরিবেশ নিয়ে গত দুদিন ধরেই এমনসব অভিযোগ অনুযোগ করছেন চীনফেরত বাংলাদেশি নাগরিকরা।

এমন পরিস্থিতি নিয়ে স্বাস্থ্য বিভাগও পড়েছে বিব্রতকর অবস্থায়। তারা বিষয়টি নানাভাবে সামাল দেয়ার চেষ্টা করছেন। সেই সঙ্গে বিকল্প জায়গাও খুঁজছেন। কিন্তু আজ পর্যন্ত এর চেয়ে উপযুক্ত কোনো বিকল্প স্থান পাওয়া যায়নি। এদিকে সম্ভাব্য করোনাভাইরাস মোকাবেলায় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় থেকে একটি কোয়ারান্টাইন কোর কমিটি গঠন করা হয়েছে আজ।

স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রলালয়ের স্বাস্থ্য সেবা বিভাগ এক প্রজ্ঞাপনে অতিরিক্তি সচিব (প্রশাসন) হাবিবুর রহমানকে আহ্বায়ক ও ঢাকা জেলার সিভিল সার্জন ডা. মঈনুল আহসানকে সদস্য-সচিব করে ১৯ সদস্য ওই কমিটির কথা জানানো হয়। সেই সঙ্গে কমিটি প্রয়োজনে আরও সদস্য কো-অপ্ট করার ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে। এদিকে দেশের বিভিন্ন এলাকায় থাকা চীনা নাগরিকরা নিজেরাই নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় বিভিন্ন প্রকল্প এলাকায় কোয়ারাইনটাইন মেইনটেইন করছেন।

এদিকে সরকারের রোগ তত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান আইইডিসিআরের পরিচালক অধ্যাপক ড. মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা কালের কণ্ঠকে জানান, হাজি ক্যাম্পে থাকা চীন থেকে আগত ২৯৭ জন যাত্রীর সবাই সুস্থ আছেন। সেই সঙ্গে কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে জ্বর নিয়ে ভর্তি হওয়া ৭ জনের অবস্থাও স্থিতিশীল রয়েছে। অন্যদিকে সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে (সিএমএইচ) চীনফেরত একজন নারীকে ভর্তি করা হয়েছে অন্য ধরণের অসুস্থতার কারণে। তার স্বামী ও এক সন্তানকেও ওই হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে কেবলমাত্র তাকে সঙ্গ দেওয়া ও পরিচর্যার জন্য। পাশাপাশি রবিবার আশকোনা থেকে আরও ৫ জন সিএমএইচ এ নেওয়া হয়েছে। তবে তারা কেউ অসুস্থ নয়। দুই নারীর সঙ্গে এক বছরের কম বয়সি ৩টি শিশু থাকায় তাদের অধিকতর সর্তকতার জন্য হাসাপাতালে রাখা হয়েছে। সেই দিক থেকে ৮জন চিকিৎসাধীন থাকলেও মোট ১৫ জনকে হাসপাতালে রাখা হয়েছে।

এদিকে আইইডিসিআর থেকে জানানো হয়েছে, করোনাভাইরাস সংক্রান্ত পরিস্থিতি মোকাবেলার জন্য কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতাল, সংক্রামক ব্যাধি হাসপাতাল ও কুয়েত বাংলাদেশ মৈত্রি সরকারি হাসপাতাল সার্বক্ষণিক প্রস্তুত রাখা হয়েছে।

মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা বলেন, আমরা বহু চিন্তা করেও হাজি ক্যাম্পের এখন থাকা ২৯৭জনকে অন্য কোথাও সরানোর মত উপযুক্ত আবাসন পাচ্ছি না। তাদেরকে হাসপাতালে নিয়ে রাখাও যুক্তিযুক্ত নয় নানা কারণে।
শনিবার মোট ৩১২ জনকে চীন থেকে দেশে ফিরিয়ে আনে সরকার। তাদের মধ্যে ওই দিনই ১০ জনকে হাসপাতালে পাঠানো হয়। আর গতকাল পাঠানো হয় আরও ৫ জনকে।