ভোট নিতে দুই সমস্যা ভ্যাসলিন-টিস্যু দিয়ে আঙুলের ছাপ স্পষ্ট করার চেষ্টা

SHARE

ভোট নিতে গিয়ে দুই ধরনের সমস্যায় পড়ছেন ভোট গ্রহণকারীরা। আঙ্গুলের ছাপ মেলাতে সমস্যা হচ্ছে অনেক ভোটারের। বিশেষ করে বৃদ্ধা এবং হাত দিয়ে পরিশ্রমের কাজ করতে হয় এমন ভোটারদের আঙুলের ছাপ সহজে মিলছে না। আঙুলের ছাপ স্পষ্ট করতে ব্যবহার করা হচ্ছে ভ্যাসলিন, সিল্কের কাপড় ও টিস্যু। নির্বাচন কমিশনের পক্ষ থেকে আগেই এসব জিনিস সরবরাহ করা হয়েছে। অন্যদিকে অভ্যাস না থাকায় ঠিকমত ইভিএমে ভোট দিতে পারছেন না ভোটাররা।

আজ শনিবার সকাল সাড়ে ৮টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের ২৬ নম্বর ওয়ার্ডে সরেজমিনে গিয়ে ৭টি ভোটকেন্দ্রের বেশিরভাগ বুথেই এ সমস্যা দেখা গেছে। আজিমপুর সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের ভোটার মো. শহিদ উল্লাহ। সরকারি এই কর্মচারি আজিপুর কলোনির পাম্পচালক। সকাল ১০টার দিকে ভোট দিতে আসেন কেন্দ্রে। কিন্তু কিছুতেই তার আঙ্গুলের ছাপ ইলেকট্রনিক ভোর্টি মেশিন (ইভিএম) গ্রহণ করছিল না। সহকারি প্রিজাইডিং অফিসারের টেবিলে থাকা সিল্কের কাপড় দিয়ে হাত মোছার পরামর্শ দেন। এতেও কাজ হয়নি। এরপর ছোট্ট একটি ভ্যাসলিন বক্স থেকে হাতের আঙুলে ভ্যাসলিন মেখে টিস্যু পেপার দিয়ে মুছতে বলেন, তাতেও আঙ্গুলের ছাপ মেলেনি।

এরপর সহকারি প্রিজাইডিং অফিসার তার জাতীয় পরিচয়পত্রের নম্বর ইভিএমে দেন। তখন শহিদ উল্লাহর ছবিসহ সকল তথ্য কম্পিউটারের মনিটরে ভেসে ওঠে। তথ্য ঠিক দেখালেও তার চার আঙুলের কোনোটিরই ছাপ ইভিএম মেশিন চিনতে পারেনি। এরপর প্রিজাইডিং অফিসার সিরাজুল ইসলামকে ডেকে সহকারি প্রিজাইডিং অফিসার এই সমস্যার সমাধান চান। প্রিজাইডিং অফিসার উপস্থিত প্রার্থী-এজেন্টদের শহিদ উল্লাহর তথ্য সঠিক আছে, তা নিশ্চিত করে নিজের ক্ষমতা প্রয়োগ করে ভোট দেওয়ার সুযোগ করে দেন।

এরপর শুরু হয় আরেক সমস্যা। শহিদ উল্লাহ আগে কখনো ইভিএমে ভোট দেননি। তাই গোপন বুথের ভেতরে গিয়ে কোনোভাবেই তার ভোট দিতে পারছিলেন না। বাইরে থেকে সহকারি প্রিজাইডিং অফিসার কীভাবে ভোট দিতে হবে তা বার বার বলে দিচ্ছিলেন, কিন্তু কোনো কাজ হয়নি। এক পর্যায়ে আরেকজন পোলিং অফিসার এ ভোটারকে গোপন বুথের বাইরে ডেকে এনে একটি ডামি ইভিএম ভোটিং মেশিনে আবারো ভোটিং পদ্ধতি দেখান।

এ সময় ভোটারের চোখে-মুখে বিরক্তির ছাপ ফুট ওঠে। তারা বিরক্তি নিয়ে বলছিলেন, ‘আগেই তো ভালো আছিল, ছাপ মাইরা ভোট দিতাম, এখন কী এক ঝামেলা’। পোলিং অফিসার দেখিয়ে দেওয়ার পর শহিদ উল্লাহ তার ভোট দিতে সক্ষম হন। এই প্রক্রিয়াটি শেষ করতে প্রায় ১০ মিনিট সময় চলে যায়। এ সময় ভোটার উপস্থিতি তেমন না থাকায় কোনো ঝামেলা হয়নি।

ভোট শেষ যখন বের হন তখন শহিদউল্লার মুখে হাসি। প্রতিক্রিয়ায় জানালেন, এইটা তো সহজ কাজ। প্রথমে একটু ঝামেলা হইছিলো আরকি।

ঢাকা দক্ষিণ সিটির ২৬ নম্বর ওয়ার্ডের ৭টি কেন্দ্রের অন্তত ১২টি বুথ ঘুরে ১০টিতেই কিছু ভোটারের ফিঙ্গার প্রিন্ট না মেলার তথ্য জানা গেছে। সহকারি প্রিজাইডিং অফিসাররা বলেছেন, অনেক ক্ষেত্রে প্রথমে ফিঙ্গার প্রিন্ট দিলে কোনো তথ্যই আসছে না। তবে জাতীয় পরিচয়পত্রের নাম্বার দিলে সহজেই কম্পিউটারে তথ্য প্রদর্শন করছে, এরপর ফিঙ্গারপ্রিন্ট দিলে ইভিএমে গ্রহণ হচ্ছে।

যাদের তথ্য ঠিক আছে কিন্তু কোনোভাবেই ফিঙ্গার প্রিন্ট ম্যাচ করছে না তাদের ক্ষেত্রে প্রিজাইডিং অফিসারের সহযোগিতায় ভোট দেওয়ার ব্যবস্থা করা হচ্ছে। এই প্রতিবেদকের পরিদর্শিত ৭টির মধ্যে ৫টি কেন্দ্রের প্রিজাইডিং অফিসারের সঙ্গে কথা হয়েছে। তারা মূলত দুইটি সমস্যার কথা বলেছেন, প্রথম ফিঙ্গার প্রিন্ট মিলছে না, দ্বিতীয়ত ভোটারকে ভোট দেওয়া বার বার শিখিয়ে দিতে হচ্ছে।

আজিমপুর লিটল এঞ্জেলস স্কুলের একটি বুথের পোলিং অফিসার বলেন, সকাল থেকে বোঝানো শুরু হয়েছে, কতবার যে বলতে হয়, তারপরও মানুষ সহজে বুঝতে চায় না। কিন্তু ভোট দেওয়ার পর বলে এইটা তো সহজ জিনিস। আজিমপুর অগ্রণী স্কুলের একটি কেন্দ্রের প্রিসাইডিং অফিসার বলেন, ইভিএমে সবাই নতুন ভোটার, প্রথম দিকে এমন একটু সমস্যা হতেই পারে, পরের ভোটে হয়তো এমন সমস্যা হবে না।