পেঁয়াজ ফের ১৮০ ছুঁয়েছে, অস্থিরতা চালের বাজারেও

SHARE

টানা চার মাস ভোক্তাদের পকেট উজাড় করে দিন দশেকের জন্য শত টাকায় নেমেছিল পেঁয়াজের কেজি। কিন্তু ভরা মৌসুমেও সেই আপাত স্বস্তিটুকু স্থায়ী হয়নি। নির্দিষ্ট কোনো কারণ ছাড়াই আবার সেই অস্থিরতা। দেশি পেঁয়াজ বাজারভেদে বিক্রি হচ্ছে ১৬০ থেকে ১৮০ টাকা কেজি। আর আমদানি করা বড় আকারের পেঁয়াজের কেজি ৮০ থেকে ১০০ টাকা। রাজধানী ঢাকাসহ সারা দেশেই বাজারে এমন নৈরাজ্যকর অবস্থা। আর ব্যবসায়ীদের বরাবরের সেই খোঁড়া যুক্তি, সরবরাহ ঘাটতির কারণেই দাম বেড়েছে পেঁয়াজের।

এদিকে চালের বাজারেও রয়েছে অস্থিরতা। গত ১০ দিনে পাইকারি বাজারে ৫০ কেজির বস্তায় দাম বেড়েছে ১০০ থেকে ১৫০ টাকা। আর খুচরা বাজারে কেজিতে বেড়েছে দুই থেকে চার টাকা পর্যন্ত। তা ছাড়া ভরা শীত মৌসুমেও দু-একটি বাদে বেশির ভাগ সবজির কেজি ৫০ টাকার ওপরে। তবে বাজারে ইলিশের সরবরাহ বাড়ায় দাম কমেছে সব ধরনের মাছের। স্থিতিশীল রয়েছে মুরগি, ডিম ও সব ধরনের মাংসের দাম।

গতকাল শুক্রবার রাজধানীর বিভিন্ন বাজার ঘুরে পেঁয়াজ, চাল ও নানা ধরনের সবজির বাজারে অস্থিরতা দেখা গেছে। পেঁয়াজের দাম হঠাৎ বেড়ে যাওয়ার বিষয়ে কারওয়ান বাজারের বিক্রেতা কবীর হোসেন বলেন, দাম বেশি হওয়ায় চাষিদের একটি অংশ নির্ধারিত সময়ের আগেই মুড়ি কাটা পেঁয়াজ তোলা শুরু করে। বাজারে মুড়ি কাটা পেঁয়াজের জোগান শেষের পথে। পুষ্ট পেঁয়াজ এখনো পুরোপুুরি ওঠেনি। এ কারণে বাজারে পেঁয়াজের সরবরাহ তুলনামূলক কম। ফলে দাম কমার বদলে উল্টো বাড়ছে। একই বাজারের আরেক ব্যবসায়ী শফিকুল ইসলাম বলেন, ‘পেঁয়াজের দাম নিয়ে অস্বস্তিতে আছি। যখন-তখন দর উঠানামা করায় বাড়তি দামে পেঁয়াজ কিনে দুই দফা ধরা খেয়েছি।’

তবে পোড় খাওয়া ক্রেতাদের অভিযোগ, এসব খোঁড়া যুক্তি। সিন্ডিকেট করে পেঁয়াজের দাম বাড়ানো হচ্ছে। কার্যকর নজরদারি না থাকায় সিন্ডিকেট চক্র ইচ্ছামতো বাজার নিয়ন্ত্রণ করছে। রাজধানীর তেজকুনীপাড়ার বাসিন্দা আনিসুর রহমান বলেন, ‘এখন ভরা মৌসুমে পেঁয়াজের কেজি ৫০ টাকার নিচে থাকার কথা। আবার ভারতও নিষেধাজ্ঞা তুলে নিয়েছে। তার পরও পেঁয়াজের কেজি ১৮০ টাকা হওয়াটা মোটেই স্বাভাবিক নয়।’ কারওয়ান বাজারের আরেক ক্রেতা আব্দুল আওয়াল বলেন, ‘শুধু পেঁয়াজ নয়, চালের দামও কেবলই বাড়ছে। সব ধরনের সবজির দামও চড়া। বাজারে গেলে কোনো কিছুর দামই ভোক্তাকে স্বস্তি দিচ্ছে না।’

পাইকারি বাজারে চালের দাম বেড়ে যাওয়ায় প্রভাব পড়েছে খুচরা বাজারেও। এক সপ্তাহের ব্যবধানে পাইকারি বাজারে দাম বেড়ে ৫০ কেজির চালের বস্তা বিক্রি হচ্ছে ১০০ থেকে ১৫০ টাকা বেশি দামে। পাইকারি দামে নাজিরশাইল প্রতি বস্তা দুই হাজার ৬০০, জিরাশাইল দুই হাজার ৩০০, মিনিকেট এক হাজার ৭০০, স্বর্ণা এক হাজার ৫০০, মিনিকেট আতপ এক হাজার ৮০০, কাটারিভোগ আতপ দুই হাজার ৬৫০, দিনাজপুরি পাইজাম এক হাজার ৭০০, চিনিগুঁড়া চাল পাঁচ হাজার এবং মোটা সিদ্ধ চাল এক হাজার ২০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। খুচরা বাজারে কেজিতে চালের দাম বেড়েছে দুই থেকে চার টাকা। ভালো মানের মিনিকেট ৫৫ থেকে ৫৮, নাজিরশাইল ৫৮ থেকে ৬০, মাঝারি মানের মিনিকেট ৫০ থেকে ৫২, বিআর-২৮ চাল ৪৪ থেকে ৪৬ এবং মোটা চাল ৪০ থেকে ৪২ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে।

গত সপ্তাহে ২০ থেকে ৩০ টাকা কেজি বিক্রি হওয়া শসার দাম বেড়ে ৪০ থেকে ৬০ টাকায় দাঁড়িয়েছে। এ ছাড়া ৫০ থেকে ৭০ টাকা কেজির করলা ১০০ থেকে ১২০, পেঁপে ৩০ থেকে ৫০ টাকা এবং দেশি পাকা টমেটোর কেজি বিক্রি হচ্ছে ৪০ থেকে ৬০ টাকা।

পার্বতীপুর (দিনাজপুর) প্রতিনিধি জানান, দিনাজপুরের পার্বতীপুর পৌরসভা ও ১০ ইউনিয়নের হাট-বাজার নতুন পেঁয়াজে ভরপুর। তা সত্ত্বেও পুনরায় দাম বেড়ে ১৩০ থেকে ১৪০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। অথচ চার-পাঁচ দিন আগেও তা ছিল ৮০ টাকা কেজি।

বিক্রেতারা বলছেন, উত্পাদক চাষি ও আড়তদারদের লোভের কারণে পেঁয়াজের দাম আবারও বেড়ে গেছে। আড়তদার হাসান আলী বলেন, আমদানি করা মোটা পেঁয়াজ ক্রেতারা নিতে চায় না। তবে প্রচুর সরবরাহ সত্ত্বেও দেশি পেঁয়াজের মূল্যবৃদ্ধির যৌক্তিক কারণ তিনি দেখাতে পারেননি।

জমিরহাট থেকে আসা ক্রেতা আব্দুল মতিন বলেন, পাঁচ-ছয় দিন আগেও পেঁয়াজ ছিল ৮০ টাকা কেজি। তা বেড়ে হয়েছে ১৪০ টাকা। ১৬ টাকা কেজির আলু কিনতে হচ্ছে ৩২ টাকায়। টমেটোর দাম কেজিতে বেড়েছে ২০ টাকা।

জাহানাবাদের কৃষক রইচ উদ্দীন বলেন, সব কিছুতেই অস্থির অবস্থা চলছে। কৃষকের ধান বিক্রি শেষ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ধান ও চালের দাম বেড়ে চলেছে। আটাশ জাতের চাল এখানে ১০-১২ দিন আগে প্রতি মণ বিক্রি হয়েছে এক হাজার ৭৫০ টাকায়, এখন বিক্রি হচ্ছে দুই হাজার ২৭০ টাকায়।