চীন থেকে ফেরার পর ১৪ দিনের পর্যবেক্ষণ

SHARE

করোনাভাইরাসের কারণে চীনের উহান নগরীতে আটকে পড়া ৩৬১ বাংলাদেশিকে একটি বিশেষ ফ্লাইটে করে ঢাকায় ফিরিয়ে আনা হচ্ছে। গতকাল শুক্রবার সন্ধ্যা ৬টার দিকে বিমানের এ বিশেষ ফ্লাইটটি শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে উহানের উদ্দেশে ছেড়ে গেছে। উহানের তিয়ানহে বিমানবন্দর থেকে যাত্রীদের নিয়ে রাত ২টার দিকে ফ্লাইটটি ঢাকায় ফেরার কথা রয়েছে।

ফেরত আসা যাত্রীদের প্রথমে কোয়ারেন্টাইনে (সংক্রমণ প্রতিরোধে নিয়ন্ত্রণমূলক ব্যবস্থা) রাখার জন্য আশকোনা হজ ক্যাম্পে নিয়ে যাওয়া হবে। সেখানে তাদের ১৪ দিন পর্যবেক্ষণে রাখা হবে। তবে যারা চীন থেকেই ১৪ দিনের হিসাবে পর্যবেক্ষণে ছিল, তাদের অবশিষ্ট দিনগুলোর জন্য পর্যবেক্ষণে রাখা হবে। হজ ক্যাম্পে তাদের নিরাপত্তার দায়িত্বে পুলিশের সঙ্গে সেনা সদস্যরাও থাকবেন। পরিবারের সদস্যদের হজ ক্যাম্পে অযথা ভিড় না করে ধৈর্য ধরার আহ্বান জানিয়েছেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক।

বিমানবন্দর সূত্র জানায়, বিমানের বিশেষ ফ্লাইট বিজি-৭০০১ গতকাল বিকেল ৫টার দিকে যাওয়ার কথা থাকলেও নানা প্রক্রিয়াগত কাজ শেষে সন্ধ্যা ৫টা ৫২ মিনিটে ঢাকা ছেড়ে যায়। ৪১৯ আসনের বোয়িং ৭৭৭-৩০০ ইআর উড়োজাহাজটিতে পাইলট ছাড়াও ১১ জন কেবিন ক্রু, তিনজন ককপিট ক্রু, দুজন প্রকৌশলী এবং ডাক্তার-নার্সসহ চারজন রয়েছেন। চীনে অধ্যয়রত শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন স্থান থেকে উহানের তিয়ানহে আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে নিয়ে গেছে চীনে বাংলাদেশ দূতাবাস।

বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) মো. মোকাব্বির হোসেন কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘সরকারের নির্দেশনা অনুযায়ী বাংলাদেশিদের আনতে বিকেল ৫টা ৫২ মিনিটে ছেড়ে যায় বিমানের বিশেষ ফ্লাইট। যাওয়া-আসা মিলে মোট আট ঘণ্টার এই পথ পাড়ি দিয়ে রাত ২টায় শাহজালালে অবতরণ করবে বিমানের উড়োজাহাজটি।’

বাংলাদেশিদের চীন থেকে ফিরিয়ে আনার প্রস্তুতি সম্পর্কে জানাতে গতকাল সকালে বিমানবন্দরে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য দেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক, পররাষ্ট্রন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন এবং দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী এনামুর রহমান।

সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, ঢাকায় ফেরার পর সবাইকে আশকোনো হজ ক্যাম্পে ১৪ দিন পর্যবেক্ষণে রাখা হবে। পর্যবেক্ষণে যাদের সুস্থ পাওয়া যাবে, তাদের বাড়ি যেতে দেওয়া হবে। আর কেউ অসুস্থ হলে হাসপাতালে নিয়ে যথাযথ চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হবে।

জাহিদ মালেক বলেন, ‘যারা স্বজনদের দেখা করার জন্য ব্যাকুল হবে, আমরা তাদের আহ্বান করব তারা যেন দেখার জন্য ব্যাকুল না হয়, জোরাজুরি না করে। হজ ক্যাম্পে যেন কোনো বিশৃঙ্খল পরিস্থিতির সৃষ্টি না হয়। আমরা তাদের টাইম টু টাইম খবর দেব।’

পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্দুল মোমেন বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী অত্যন্ত সংবেদনশীল। ছাত্র-ছাত্রীদের দুর্গতির কথা শুনে আমাদের নির্দেশ দিয়েছেন তাদের স্বদেশে নিয়ে আসার জন্য। চীন সরকার বলেছিল ১৪ দিন আগে তাদের রিলিজ করবে না। গতকাল আমাদের জানিয়েছে একটা পকেট পেয়েছে, যখন আমাদের দেওয়া যাবে। সঙ্গে সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেছেন আপনারা নিয়ে আসেন।’

চীন থেকে দেশে ফিরতে ১৯টি পরিবার, ১৮ শিশু এবং দুই বছরের কম বয়সী দুই শিশুসহ ৩৬১ জন নিবন্ধন করেছে বলে জানান পররাষ্ট্রমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘খুব সেনসিটিভলি তাদের হ্যান্ডল করব, কোয়ারেন্টাইনে রাখব। এই সময় পরিবারের কেউ যেন দেখা করার চেষ্টা না করেন। তারা কেউ অসুস্থ না, কিন্তু আমরা জানি এই সংক্রমণের ভ্যাকসিন তৈরি হয়নি।’

সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (আইইডিসিআর) পরিচালক ডা. মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা বলেন, চীন থেকে আনা যাত্রীদের আশকোনার হজ ক্যাম্পে রাখতে প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। এর অংশ হিসেবে এরই মধ্যে কাজে নেমেছেন বিশেষজ্ঞ ড. মুশতাক হোসেন, যিনি আইইডিসিআরের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা হিসেবে কিছুকাল আগে অবসরে গেছেন। সংস্থাটি এই সংকটে তাঁর অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগাচ্ছে।

এদিকে গত রাতে চীন থেকে নিয়ে আসা সব যাত্রীকেই ১৪ দিন পর্যবেক্ষণে থাকতে হবে না জানানো হয়েছে। যারা চীনে আগে থেকেই যে কয়েক দিন পর্যবেক্ষণে ছিল, তাদের ক্ষেত্রে সেই সময়সহ ১৪ দিন হিসাব করা হবে। আইইডিসিআরের পরিচালক কালের কণ্ঠকে এ তথ্য জানিয়েছন। ফলে চীনফেরত যাত্রীদের পরিবারের সদস্যদের এ বিষয়ে উদ্বেগের কারণ নেই।

গত রাতে পরিচালক জানান, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের কর্মকর্তারাসহ বিশেষজ্ঞ টিম বিমানবন্দরে অবস্থান করছে। রাতে চীন থেকে ফিরতি বিমান আসা এবং তাদের প্রাথমিক পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা পর্যন্ত বিশেষজ্ঞরা সেখানে অবস্থান করবেন।

বেইজিংয়ে বাংলাদেশ দূতাবাসের একজন কর্মকর্তা জানান, যোগাযোগের জন্য বেইজিংয়ে বাংলাদেশ দূতাবাস একটি হটলাইন চালু করা হয়েছে। +৮৬ ১৭৮-০১১১-৬০০৫ নম্বরে ফোন করে ২৪ ঘণ্টা সহায়তা পাওয়া যাবে।

মধ্য চীনের উহান শহরে গত ৩১ ডিসেম্বর করোনাভাইরাসের প্রথম সংক্রমণ শনাক্ত করা হয়। এ ভাইরাস মূলত শ্বাসতন্ত্রে সংক্রমণ ঘটায়। এর লক্ষণগুলো হয় অনেকটা নিউমোনিয়ার মতো।

গত এক মাসে কেবল চীনেই ১০ হাজার মানুষ এ ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছে, মৃত্যু হয়েছে ২১৩ জনের।

চীনের বাইরে আরো ১৮টি দেশে প্রায় ১০০ মানুষ নতুন করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ায় এবং কয়েক জায়গায় মানুষ থেকে মানুষে ছড়ানোর খবর আসায় বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা নতুন করোনাভাইরাসের এ প্রাদুর্ভাবকে ‘বৈশ্বিক জরুরি অবস্থা’ ঘোষণা করেছে।