গাম্বিয়ার করা মামলার রায় নিয়েও আমরা আশাবাদী : পররাষ্ট্রমন্ত্রী

SHARE

পরারাষ্ট্রমন্ত্রী ড এ কে আবদুল মোমেন বলেছেন, ‘রোহিঙ্গা নিয়ে তৈরি সংকট বড় একটি চ্যালেঞ্জ। এ সমস্যার সমাধান মিয়ানমারের মাধ্যমেই আসতে হবে।’ রোহিঙ্গা গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে মিয়ানমারের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক বিচার আদালতে (আইসিজে) গাম্বিয়ার করা মামলার অন্তর্বতীকালীন আদেশ আগামী ২৩ জানুয়ারি। এ নিয়েও তিনি আশাবাদী। তবে তার পাশাপাশি সরকার দ্বি-পাক্ষিকভাবেও সমস্যা সুরাহার চেষ্টা করছে বলেও জানান পররাষ্ট্রমন্ত্রী।

মঙ্গলবার কালের কণ্ঠ ফেসবুক পেইজের মাধ্যমে নিয়মিত সাপ্তাহিক অনুষ্ঠান ‘কালের কণ্ঠ মন্ত্রীর মুখোমুখি’ অনুষ্ঠানে পরারাষ্ট্রমন্ত্রী এসব কথা জানান। কালের কণ্ঠের জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক পার্থ সারথি দাসের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানটি সম্প্রচারিত হয়।

অনুষ্ঠানে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন নিয়ে মিয়ানমার বার বার কথা দিয়েও কথা রাখছে না। অবশেষে এটি আন্তর্জাতিক আদালতে গড়িয়েছে। মিয়ানমারে রোহিঙ্গা নির্যাতনের বিচার চেয়ে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতে (আইসিজে) করা গাম্বিয়ার মামলার শুনানি হয়েছে। আমরা আশা করছি, একটি উপযোগী রায় আসবে। বিশ্বের বিভিন্ন দেশ বলছে মিয়ানমারের গণহত্যা হয়েছে। এখনও তারা মানবাধিকার লংঘন করে যাচ্ছে।’

পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘আগেও আমাদের দেশে মিয়ানমার থেকে রোহিঙ্গা এসেছিল। তাদের ফিরিয়েও দেওয়া হয়েছিল। সর্বশেষ তারা যে এসেছে তা সংখ্যায় বেশি-প্রায় ১১ লাখ। তাদের ফিরিয়ে নিতে আমরা চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। এটা একটা বড় চ্যালেঞ্জ। সমস্যা সৃষ্টি হয়েছে মিয়ানমার থেকে। কাজেই এ সমস্যার সমাধান মিয়ানমারের মাধ্যমেই আসবে। আমরা তাদের বলেছি, রোহিঙ্গাদের নিরাপত্তার নিশ্চয়তা দিতে হবে। বিশ্বাস ফিরিয়ে আনতে হবে। কিন্তু সমস্যা হলো মিয়ানমারের লোকেরাই তাদের লোককে বিশ্বাস করে না। রোহিঙ্গারা তাদের দেশের মানুষকে বিশ্বাস করে না। আমরা কিছু বললেই মিয়ানমার বলে তারা করবে । পরে তারা আর কিছু করে না। আমরা দ্বি-পাক্ষিক চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। চীনকে সঙ্গে নিয়েও চেষ্টা চালাচ্ছি। সামনে গাম্বিয়ার করা মামলার রায়। এটা নিয়েও আমরা আশাবাদী।’

সরকারের গত এক বছরের কাজকর্মের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘চ্যালেঞ্জ ছিল। চ্যালেঞ্জ অতিক্রম করে আমাদের সামনে এগোতে হচ্ছে। বঙ্গবন্ধু আমাদের স্বপ্ন দিয়েছেন, স্বাধীনতা দিয়েছেন, পতাকা দিয়েছেন, পরিচয় দিয়েছেন। আর তার কণ্যা জননেত্রী, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আমাদের আত্মপ্রত্যয়ের শক্তি দিয়েছেন। বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন আমাদের মধ্যে ছড়িয়ে গেছে। আমাদেরকে সোনার বাংলার স্বপ্ন বাস্তবায়ন করতে হবে। সেজন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রুপরেখা নির্ধারন করেছেন। ২০২১, ২০৩০, ২০৪১ এই সময়াবদ্ধ কর্মসুচি নির্ধারণ করা হয়েছে। আমরা সে লক্ষ্যে কাজ করছি উন্নয়নের মহাসড়কে যাত্রার কাংখিত অর্জন লাভের জন্য। সোনার বাংলা গড়তে হবে। এই সোনার বাংলা হচ্ছে একটি অসাম্প্রদায়িক, স্থিতিশীল বাংলাদেশ-যেখানে শিক্ষা, স্বাস্থ্যসহ সব ক্ষেত্রে অধিকার নিশ্চিত থাকবে।’

আগামী দুই বছর অনেক কর্মসুচি পালন করতে হবে উল্লেখ করে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘এগিয়ে যাবার অফুরান সম্ভাবনা রয়েছে এই দুই বছরে। আমরা মুজিববর্ষ পালন শুরু করবো চলতি বছরেই। মুজিববর্ষে আমরা বঙ্গবন্ধু অ্যাওয়ার্ড দেব। আমরা বহু আগে জর্জ হ্যারিসন, পন্ডিত রবি শংকরসহ সাত জনকে নাগরিকত্ব দেওয়ার প্রস্তাব করেছিলাম। শেষ পর্যন্ত ফ্রেন্ডস অফ বাংলাদেশ এর তালিকায় বিদেশি বন্ধুর সংখ্যা বেড়ে হয়েছে ৬২৮ জন। তারা আমাদের একাত্তরের স্বাধীনতাযুদ্ধে সহায়তা করেছেন।’

পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘ঢাকায় মুজিববর্ষের বড় অনুষ্ঠান হবে ১৭ মার্চ থেকে। পরের বছর ২৬ মার্চ পর্যন্ত অনুষ্ঠান হবে। এই সময়ের মধ্যে বিভিন্ন অনুষ্ঠানে বিদেশের বিভিন্ন দেশ থেকে রাষ্ট্র নায়ক, প্রধানমন্ত্রী, বিশিষ্ট রাজনীতিবিদদের আমন্ত্রণ জানানো হবে। অনেকে এরই মধ্যে অনুষ্ঠানে অংশ নিতে সম্মতি দিয়েছেন।’

‘বঙ্গবন্ধুর আত্মজীবনী বিভিন্ন ভাষায় অনুদিত হয়ে বিভিন্ন দেশে উপস্থাপন করা হচ্ছে। আরো একটি ভাষা- গ্রিক ভাষায় তা অনুবাদের ব্যবস্থা করা হচ্ছে সহসাই। আমরা এছাড়াও বঙ্গবন্ধু জীবিতাবস্থায় যেসব দেশে গেছেন সেসব দেশে তাঁর সফর নিয়ে প্রকাশনার উদ্যোগ নিচ্ছি। বঙ্গবন্ধুকে তুলে ধরা হবে সারা বিশ্বে। ’