কাশ্মীর নিয়ে সোচ্চার ছিলেন আবরার

SHARE

কাশ্মীরের নিয়ে বেশ সোচ্চার ছিলেন নিহত বুয়েট শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদ। নিজের ফেসবুক প্রোফাইল ছবিতে কাশ্মীরের জনগণের মুক্তি চেয়ে লোগো ব্য৭বহার করেছেন। শুধু তাই নয়, কাশ্মীরের জনগণের মুক্তি চেয়ে বিভিন্ন সময় নিজের সোশ্যাল হ্যান্ডেলে শেয়ার করেছেন নানা খবর। বুয়েটে একজন কাশ্মীরি পড়েন সে কথাও জানা যায় তার ফেসবুক টাইমলাইন থেকে।

কাশ্মীর ও সমসাময়িক গণমাধ্যমের ভূমিকা নিয়ে লিখেছেন, ‘একাত্তরে বিরূপ পরিবেশের মধ্যেও কিন্তু বিবিসি মুক্তিবাহিনীর খবর প্রচার করে গেছে। কাশ্মীর নিয়ে ভারতীয় বাহিনীর অপপ্রচার আর তাদের মিডিয়াতে শান্ত কাশ্মীরের যে খবর প্রচার করছে একাত্তরে পাকমিডিয়াও একই কাজ করেছিল।’ পোস্ট করেছিলেন ১১ আগস্টে।

কাশ্মীরের জনগণের পক্ষে কথা বলতে গিয়ে উপত্যকার সংস্কৃতি ও নানা অজানা খবর ফেসবুকে আলোচনা করত্যেন। আবার ফেসবুকে জানান কাশ্মীরে রয়েছে বাংলাদেশ নামের একটি গ্রামের। এই গ্রাম কীভাবে হলো? লিখেছেন বিস্তারিত

কাশ্মীরের এই গ্রামটির সাথেও ১৯৭১ এর যোগসূত্র রয়েছে। ১৯৭১ সালে জুরিমন নামক এক গ্রামের ৫-৬টি ঘরে আগুন লাগে। আগুনের শিখায়জ্বলে পুড়ে যায় ঘরগুলো। গৃহহীন হয়ে পড়েন নিরীহ সাধারণ এই মানুষগুলো। তারা তখন পুড়ে যাওয়া জায়গা থেকে কিছুটা দূরে পার্শ্ববর্তী ফাঁকা জায়গায় সবাই মিলে ঘর তোলেন। সেই বছরই ডিসেম্বরে পূর্ব পাকিস্তান স্বাধীন হয়ে বাংলাদেশ রাষ্ট্রের জন্ম হয়। সেই একই সময় গৃহহীন মানুষগুলো দুঃসময় মোকাবেলা করে শুরু করেন তাদের নবজনম। তাই তারাও তাদের নতুন গ্রামের নাম রাখেন বাংলাদেশ।

উলার হৃদের তীরে এই গ্রামটি সৌন্দর্যে কিন্তু কম যায় না! চারদিকে জল, পেছনে সুউচ্চ পর্বত, সব মিলিয়ে অসাধারণ প্রাকৃতিক সৌন্দর্য এই গ্রামটির। কিন্তু, নাগরিক কিছু সাধারণ সুবিধা এখনো ঠিক ঠাক ভাবে পৌঁছে না গ্রামবাসীর কাছে। ভিনদেশী মানুষ তাদের কাছে আশ্চর্য এক ব্যাপার। বাইরে থেকে সচরাচর কেউ যায় না সেখানে। তাই হটাত কেউ গেলেই তারা খুব অবাক এবং আশ্চর্য হয়।

যদিও তারা গ্রাম হিসেবে মর্যাদা পেয়েছে বেশিদিন হয়নি। বান্ডিপুরার ডিসিঅফিস ২০১০ সালে এই বাংলাদেশ নামক গ্রামটিকে আলাদা গ্রামের মর্যাদা দেন। ৫/৬ ঘর থেকে শুরু হওয়া বাংলাদেশ গ্রামে এখন আছে পঞ্চাশেরও বেশি ঘর! যদিও এই প্রজন্মের অনেকে গ্রামটির জন্ম ইতিহাস জানেন না। মাছ ধরা মূলত প্রধান জীবিকা নির্বাহের মাধ্যম তাদের। পাশাপাশি পানি বাদাম সংগ্রহ করাও গ্রামবাসীর অন্যতম প্রধান কাজ।

ভাসমান এই গ্রাম, বাংলাদেশ, মুক্তিযুদ্ধ, কাশ্মীর সব মিলিয়ে যেন আশ্চর্য কাকতালীয় যোগাযোগ! কোথায় যেনো একটা মায়া কাজ করে শুনলে, বিশেষ করে যে গ্রামটির জন্ম একাত্তরে, যে “বাংলাদেশ” গ্রামটি জন্মেছিলো স্বাধীন বাংলাদেশ নামের রাষ্ট্রটি জন্মের বছরে! এই বর্ষার ঝুপ ঝুপ বৃষ্টি পরা রাতে ঢাকা, বাংলাদেশ থেকে সেই “বাংলাদেশ”- এর প্রতি শুভকামনা। ভালো থাকুক, বাংলাদেশ।

দেশভাগ ও রাজনীতি নিয়েও আবরার সচেতন ছিলেন। ফেসবুকে লিখেছেন, ‘পাকিস্তান ভাঙার প্রকৃত কারণ মনে হয় ৪৬-৪৭ এর এই ঘটনাগুলো। ৪৭ এর পর পাকিস্তান বেঈমানী করেছে এদেশের ৭ কোটি মানুষের সাথে আর আগে করেছে পশ্চিম বাংলা আর আসামের ৬ কোটি মুসলমানের সাথে। খুব সহসায় হয়তাবা তা দৃশ্যমান হবে।’

২০১৮ সালের ১১ অক্টোবর তিনি ফেসবুক প্রোফাইলে যুক্ত করেছিলেন এই মন্তব্যটি ‘অনন্ত মহাকালে মোর যাত্রা অসীম মহাকাশের অন্তে।’ বছর ঘুরে এই অক্টোবরেরই প্রথম সপ্তাহে আবরার অনন্তকালের যাত্রী হলেন।

শিবির সন্দেহে পিটুনিতে নিহত বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদের পুরো পরিবার আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। তবে তাঁকে কোনো রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে থাকতে দেখা যায়নি। ছেলে হত্যার খবর পেয়ে তাদের বাড়িতে এখন শোকের ছায়া নেমে এসেছে।

মারধরের সময় ওই কক্ষে উপস্থিত ছিলেন বুয়েট ছাত্রলীগের সহ-সম্পাদক আশিকুল ইসলাম বিটু। তিনি বলেন, আবরারকে শিবির সন্দেহে রাত আটটার দিকে হলের ২০১১ নম্বর কক্ষে ডেকে আনা হয়। সেখানে আমরা তার মোবাইলে ফেসবুক ও মেসেঞ্জার চেক করি। ফেসবুকে বিতর্কিত কিছু পেইজে তার লাইক দেয়ার প্রমাণ পাই। সে কয়েকজনের সঙ্গে যোগাযোগও করেছে। শিবির সংশ্লিষ্টতার প্রমাণ পাই। এক পর্যায়ে আমি রুম থেকে বের হয়ে আসি। এরপর হয়তো তাকে মারধর করে থাকতে পারে। পরে রাত তিনটার দিকে শুনি আবরার মারা গেছে।

নাম প্রকাশ না করার অনুরোধ জানিয়ে ফাহাদের একজন রুমমেট ঘটনার বিষয়ে কালের কণ্ঠকে বলেন, টিউশনি শেষে রুমে রাত নয়টার দিকে আসি। তখন আবরার রুমে ছিলো না। অন্য রুমমেটদের কাছ থেকে জানতে পারি তাকে ছাত্রলীগের ভাইয়েরা ২০১১ নম্বর কক্ষে ডেকে নিয়ে গেছে। পরে রাত আড়াইটার দিকে হলের একজন এসে আবরার আমাদের রুমমেট কিনা জানতে চান। আমি হ্যাঁ বললে সিঁড়ি রুমের দিকে যাওয়ার জন্য বলেন। পরে সিড়ি রুমের দিকে গিয়ে একটা তোশকের ওপরে আবরার পড়ে আছে। পরে ডাক্তার এসে তাকে মৃত ঘোষণা করেন।

শেরে বাংলা হলের প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক জাফর ইকবাল খান বলেন, ডাক্তারের ফোন পেয়ে হলে আসি। এসে ছেলেটির লাশ পড়ে আছে। ডাক্তার জানান ছেলেটি আর নেই। পরে তাকে পুলিশের সহায়তায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়।

ব্যবস্থা নেওয়ার বিষয়ে তিনি বলেন, এখন পর্যন্ত কোনো অভিযোগ পাইনি। পুলিশ ঘটনাটি খতিয়ে দেখছে। হল প্রশাসনের পক্ষ থেকে তাদেরকে সব ধরনের সহায়তা করা হবে।