ট্রাইব্যুনালে আজহার

SHARE

মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় আটক জামায়াতে ইসলামীর ভারপ্রাপ্ত সেক্রেটারি জেনারেল এটিএম আজহারুল ইসলামকে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে আনা হয়েছে।

মঙ্গলবার সকাল ৮.৫৫ মিনিটে  ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের একটি মাইক্রোবাসে করে  তাকে ট্রাইব্যুনালে নেয়া হয়।সোমবার বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিমের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ মামলাটি রায়ের জন্য তারিখ ধার্যি করেন। ট্রাইব্যুনাল অন্য সদস্য হলেন- বিচারপতি জাহাঙ্গীর হোসেন ও বিচারপতি আনোয়ারুল হক।image_112071_0

এর আগে গত ১৮ সেপ্টেম্বর এ মামলাটির কার্যাক্রম শেষে রায়ের জন্য সিএভি (অপেক্ষমান) রাখেন। দীর্ঘ প্রায় সাড়ে তিন মাস মামলাটি অপক্ষেমান থাকার পর রায়ের জন্য দিন ধার্যে হলো।

আজহারের পক্ষে যুক্তি উপস্থাপন করেন আইনজীবী আব্দুস সোবহান তরফদার ও শিশির মো. মুনির। রাষ্ট্রপক্ষে যুক্তি উপস্থাপন করেন প্রসিকিউটর জেয়াদ আল মালুম ও তুরিন আফরোজ।

এসময় উপস্থিত ছিলেন প্রসিকিউটর গোলম আরিফ টিপু, প্রসিকিউটর জিয়াদ আল মালুম।

এটিএম আজহারের বিরুদ্ধে গণহত্যা, হত্যা, লুণ্ঠন, ধর্ষণ, নির্যাতন, আটক, অপহরণ, গুরুতর জখম ও অগ্নিসংযোগের ৬টি অভিযোগ আনা হয়েছে। এছাড়া সুপিরিয়র রেসপনসিবিলিটিতেও (ঊর্ধ্বতন নেতৃত্বের দায়) অভিযুক্ত হয়েছেন তিনি।

গত বছরের ২৫ জুলাই এটিএম আজহারুলের বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ (ফরমাল চার্জ) আমলে নেন ট্রাইব্যুনাল। ১৮ জুলাই আনুষ্ঠানিক অভিযোগটি দাখিল করেন প্রসিকিউটর একেএম সাইফুল ইসলাম ও প্রসিকিউটর নুরজাহান বেগম মুক্তা। চারটি ভলিউমে ৩০০ পৃষ্ঠায় দাখিল করা আনুষ্ঠানিক অভিযোগে আজহারের বিরুদ্ধে মুক্তিযুদ্ধকালে ৯ ধরনের মানবতাবিরোধী অপরাধের ৬টি সুনির্দিষ্ট অভিযোগ আনা হয়।

এটিএম আজহারের বিরুদ্ধে অভিযোগে বলা হয়, ১৯৭১ সালের ২৪ মার্চ থেকে ২৭ মার্চের মধ্যে মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক, ভাষানী (ন্যাপ) নেতা ও বিশিষ্ট আইনজীবী এ ওয়াই মাহফুজ আলীসহ ১১ জনকে অপহরণের পর নির্যাতন করা হয়। এরপর তাদের ৩ এপ্রিল রংপুর শহরের দখিগঞ্জ শ্বশানে নিয়ে ব্রাশফায়ার করে গণহত্যার সঙ্গে এ আসামি জড়িত ছিলেন।

দ্বিতীয় অভিযোগে বলা হয়, একাত্তরের ১৬ এপ্রিল রংপুরের বদরগঞ্জ থানার ধাপপড়ায় ১৫ জন নিরীহ, নিরস্ত্র বাঙ্গালীকে গুলি করে গণহত্যার সঙ্গে এ আসামি জড়িত ছিলেন।

তৃতীয় অভিযোগে  হচ্ছে, এ আসামি একইবছরের ১৭ এপ্রিল রংপুরের বদরগঞ্জের ঝাড়–য়ার বিল এলাকায় ১২শ’র বেশী নিরীহ লোককে ধরে নিয়ে গণহত্যা চালানোর সঙ্গে জড়িত।

চতুর্থ অভিযোগে বলা হয়, ১৭ এপ্রিল কারমাইকেল কলেজের চারজন অধ্যাপক ও একজন অধ্যাপক পত্মীকে ধরে দমদম ব্রীজের কাছে নিয়ে গুলি করে হত্যার সঙ্গে এ আসামি জড়িত।

পঞ্চম অভিযোগে বলা হয়, ২৫ মার্চ থেকে ১৬ ডিসেম্বরের মধ্যে রংপুর শহর ও বিভিন্ন অঞ্চল থেকে মহিলাদের ধরে এনে টাউন হলে আটকে রেখে ধর্ষণসহ শারীরীক নির্যাতনের সঙ্গে এ আসামি জড়িত। একইসঙ্গে তাদের হত্যা ও গণহত্যার সঙ্গে জড়িত ছিলেন এ আসামি।

ষষ্ঠ অভিযোগে বলা হয়, একাত্তরের নভেম্বরের মাঝামাঝি সময়ে রংপুর শহরের গুপ্তাপাড়ায় একজনকে শারীরিকভাবে নির্যাতন করা হয়।

একই বছরের ১ ডিসেম্বর রংপুর শহরের বেতপট্টি হতে এজনকে অপহরণ করে রংপুর কলেজের মুসলিম ছাত্রাবাসে নিয়ে আটক রেখে নির্যাতন করে গুরুতর জখম করার সঙ্গে এ আসামি জড়িত ছিলেন।

মুক্তিযুদ্ধের সময় সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ এর আদেশে ২০১২ সালের ২২ আগস্ট আজহারের ঢাকার মগবাজারের বাসা থেকে গ্রেফতার করা হয় এটিএম আজহারুল ইসলামকে। এরপর থেকে তিনি কারাগারে রয়েছেন।