জাহাজে আগুন, ঘোর সঙ্কটে ৩০০ যাত্রী

SHARE

মাঝসমুদ্র থেকে পাক খেয়ে উঠছে কালো ধোঁয়া। একটা ইতালীয় জাহাজ জ্বলছে দাউদাউ করে। নাম, ‘নরম্যান আটলান্টিক’। অথৈ জলে তখন প্রবল আতঙ্কের প্রহর গুনছেন সাড়ে চারশোরও বেশি মানুষ। অপেক্ষা, কখন আসবে উদ্ধারকারী দল। কেউ কেউ রেলিং বেয়ে উঠে যেতে চাইছেন যথাসম্ভব উঁচুতে।image_111944_0

ঘণ্টা চারেক অপেক্ষার পর দেখা গেল প্রথম উদ্ধারকারী জাহাজটাকে। রেডিও বিকল হওয়ায় প্রথমে বিপদবার্তাই পাঠাতে পারেনি ‘নরম্যান আটলান্টিক’। গ্রিসের কর্ফু দ্বীপের কাছে আড্রিয়াটিক সাগরে রোববার ভোরের এই অগ্নিকাণ্ডে মারা গিয়েছেন এক জন। ইতালির নৌসেনা সূত্রে খবর, সন্ধে নামার আগে পর্যন্ত ১৫১ জনকে উদ্ধার করা গিয়েছে। যাত্রী-জাহাজকর্মী মিলিয়ে এখনও আটকে তিনশোরও বেশি মানুষ। সারা রাত উদ্ধারকাজ চলবে। হাতে হাত মিলিয়ে কাজ করছে গ্রিস ও ইতালির সেনা। তবে অন্ধকার ও ঝোড়ো হাওয়ায় কিছুটা ব্যাহত হচ্ছে উদ্ধারকাজ।

কয়েকশো গাড়ি ও যাত্রী নিয়ে গ্রিসের পাত্রাস থেকে ইতালির অ্যানকোনা যাতায়াত করে ২৭ হাজার টন ওজনের ‘নরম্যান আটলান্টিক’। রোববার ভোর সাড়ে পাঁচটা নাগাদ পশ্চিম গ্রিসের ব্যস্ত বন্দর পাত্রাস ছেড়েছিল জাহাজটি। তাতে গাড়ি ছিল প্রায় দু’শো। সঙ্গে ৫৫ জন জাহাজকর্মী ও ৪২৩ জন যাত্রী। এদের মধ্যে ২৬৮ জন গ্রিক।

পুলিশ সূত্রে খবর, নীচের ডেকে গাড়ি রাখার জায়গাতেই রোববার ভোরে প্রথম আগুন লাগে। উপকূলরক্ষীরা জানান, কিছুটা পথ পাড়ি দেওয়ার পর কর্ফু দ্বীপের কাছে খারাপ আবহাওয়ার জন্য জাহাজটির সঙ্গে কিছুক্ষণ রেডিও যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। পরে ফের যোগাযোগ করা যেতেই এল বিপদবার্তা ‘নীচের ডেকে আগুন!’ তত ক্ষণে হুড়োহুড়ি পড়েছে জাহাজের ডেকে। এক যাত্রী ফোন করে গ্রিসের একটি চ্যানেলে বলছেন, “আগুন লেগেছে। ধীরে ধীরে ডুবে যাচ্ছি। বাঁচাও! আমাদের ফেলে যেও না!” অন্য এক যাত্রী জানালেন, বিস্ফোরণের শব্দ শুনেছেন তারা। ধোঁয়ায় শ্বাসকষ্ট হচ্ছে। ডেকে দাঁড়িয়ে কান্নাকাটি শুরু করে দেন অনেকে।

ডাঙা কাছেই। অথচ উদ্ধারকারী জাহাজ, বিমান কিছুই চোখে পড়ছিল না তখন! পরে গ্রিসের জাহাজমন্ত্রী জানিয়েছেন, ওই সময়ে হাওয়া বইছিল ঘণ্টায় প্রায় ৯০ কিলোমিটার বেগে। সমুদ্র ছিল অস্থির। আগুনও ছড়াচ্ছিল দ্রুত। তবে খবর পাওয়ার পর আর রওনা হতে দেরি করেনি নৌ ও বিমানবাহিনী। গোটা ছয়েক হেলিকপ্টার ও বেশ কয়েকটি জাহাজ পৌঁছনোর পর গতি আসে উদ্ধারকাজে। উঁচু ঢেউ থেকে ‘নরম্যান আটলান্টিক’-কে আড়াল করতে তার চারপাশে ব্যারিকেড করে দাঁড়িয়ে পড়ে অন্য জাহাজগুলি। যাত্রীদের উদ্ধারের পাশাপাশি আগুন নেভানোর কাজও চলতে থাকে পুরোদমে।

আপাতত আবহাওয়াই সবচেয়ে বড় শত্রু। তবে আশ্বাস দিয়েছেন গ্রিসের জাহাজমন্ত্রী। বলেছেন, “আগে কখনও এই ধরনের প্রতিকূল পরিস্থিতির মধ্যে দিয়ে আমরা যাইনি। সময় লাগছে ঠিকই। তবে আশা করি সকলকেই সাহায্য করতে পারব। ইতালির সেনাবাহিনীও ভালো কাজ করছে।” -সংবাদ সংস্থা