সাধারণ মানুষই অসাধারণ কাজটি করলো

SHARE

সাধারণ মানুষেরাই পারে অসাধারণ কাজ করতে। তার প্রমাণ দেশবাসী আরেকবার দেখলো শনিবার শাহজাহানপুরের শিশু জিহাদ উদ্ধারের ঘটনায়।

সরকারের পোষা বিভিন্ন বাহিনী যখন পরাস্থ সাধারণ মানুষেরা তখন বিজয়ী।

যেমনটি হয়েছিল একাত্তর সালে মহান মুক্তিযুদ্ধের সময়। সাধারণ জনতা যখন অস্ত্র হাতে তুলে নিল তখনই দেখা দিয়েছিল রক্তরাঙ্গা বিজয়।image_111781_0

কিন্তু তারপরও ক্ষমতাসীনরা সাধারণ মানুষকে মূল্যায়ন না করে নিজেদের ক্ষমতার জোর দেখিয়েছে বার বার। আর সাধারণ মানুষকে ঠেলে রেখেছে অনেক দূরে।

২০১৩ সালের ২৪ এপ্রিল সাভারের কুখ্যাত রানা প্লাজা ধ্বসে ভবনের নীচে আটকা পড়ে হাজার হাজার মানুষ। আর ওই ঘটনায় নিহত হয় শত শত মানুষ।

আটকে পড়া হাজার হাজার মানুষ উদ্ধারে এগিয়ে আসে উদ্ধারকারী বিভিন্ন বাহিনীসহ দেশের সাধারণ মানুষ। সাধারণ মানুষ তাদের জীবন বাজি রেখে অসাধারণ কাজ করে দেখিয়ে দিয়েছেন।

ওই ঘটনায় সরকারি বাহিনী প্রতি অভিযোগ উঠে সাধারণ মানুষ তাদের জীবন বাজি রেখে ভেতর থেকে আহতদেরকে উদ্ধার করলেও সুরঙ্গের গেটে দাড়িয়ে থেকে উদ্ধারের কৃতত্ব নিয়েছে সরকারী বাহিনী। তারপরও সাধারণ মানুষ বিনা স্বার্থে উদ্ধার অভিযানে অংশ নিয়েছেন।

এ ছাড়া চলতি বছরে আগস্ট মাসে পদ্মায় পিনাক-৬ লঞ্চ ডুবির ঘটনায় সাধারন মানুষ জীবন বাজি রেখে যাদেরকে উদ্ধার করতে সক্ষম হয়েছে তারাই জীবন ফিরে পেয়েছে। সরকারি বাহিনী যখন উদ্ধার অভিযান শুরু করেছেন তখন থেকে আর কাউকে জীবিত উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি। যেমন উদ্ধার সম্ভব হয়নি পিনাক-৬ লঞ্চটিও। মনে করা হয়, শুরু থেকে যদি সাধারণ মানুষকে লঞ্চটি উদ্ধারের সুযোগ দেয়া হতো তাহলে হয়তো লঞ্চটি উদ্ধার করা সম্ভব হতো। অনেকে তাদের হতভাগা স্বজনদের লাশটি পেয়েও সান্তনা পেত।

যেমনটি শাহজানপুরে সাধারণ মানুষ সুযোগ পেয়ে অসাধারণ কাজটি করে দেখিয়েছে।

শনিবার বেলা তিনটার দিকে শিশু জিহাদকে উদ্ধার করা হয়। এর ঠিক পাঁচ মিনিট আগে ফায়ার সার্ভিস উদ্ধারকাজ স্থগিত ঘোষণা করে।

শিশু জিহাদকে উদ্ধারের পর ঢাকা মেডিকেলে নেয়া হলে জরুরি বিভাগের আবাসিক সার্জন কে এম নিয়াজ মোর্শেদ মৃত ঘোষণা করেন।
শনিবার বেলা তিনটার দিকে সাধারণ মানুষের চেষ্টায় রাজধানীর শাহজাহানপুর রেলওয়ে কলোনির মৈত্রী সংঘ মাঠের কাছে রেলওয়ের পানির পাম্পের পাইপের ভেতর থেকে শিশু জিহাদকে উদ্ধার করা হয়।

সব ‘চেষ্টা ব্যর্থ’ হওয়ার পর ফায়ার সার্ভিসের মহাপরিচালক সংবাদ সম্মেলন করে উদ্ধার তৎপরতার সমাপ্তি ঘোষণা করলেন। কিন্তু তখনো হাল ছাড়েনি সাধারণ মানুষ। পেশাগত দায়িত্ব নয়, একান্ত মানবিক অনুভূতি থেকে যারা শুক্রবার রাত থেকে জিহাদকে উদ্ধারে কাজ করছিলেন তাদের চেষ্টাই গভীর পাইপের তল থেকে উঠে আসে শিশু জিহাদের নিথর দেহ। নিজস্ব উদ্ভাবনী শক্তি আর মানবতার মহান ব্রত নিয়ে কয়েক সঙ্গী নিয়ে জিহাদ উদ্ধারে নামেন আবু বকর। বেলা তিনটার দিকে  রাজধানীর মিরপুর থেকে ঘটনাস্থলে আসা আবু বকর সিদ্দিকের বানানো খাঁচার সাহায্যেই জিহাদকে উদ্ধার করা হয়।

আবু বকর সিদ্দিক বলেন, গণমাধ্যমে শিশুটিকে উদ্ধার করা যাচ্ছে না দেখে  শুক্রবার দিবাগত রাত ১২টায় তিনি ঘটনাস্থলে লোহার খাঁচা নিয়ে যান। রাতে একবার খাঁচাটি ভেতরে ঢুকিয়ে উদ্ধারের চেষ্টা করা হয়। কিন্তু তখন উদ্ধার করা যায়নি। খাঁচাটি কিছুটা ভেঙে যাওয়ায় সারা রাত ধরে তিনি এটি মেরামত করেন। পরে আরও কয়েকজনকে নিয়ে আবু বকর সিদ্দিক দুটি খাঁচা ভেতরে ঢোকান। এরপর তারা দেখেন, খাঁচায় কিছু একটা আটকে গেছে। ধীরে ধীরে খাঁচাটি টেনে তোলা হয়। এভাবে উদ্ধার হয় জিহাদ।

শুক্রবার বিকালে রেলওয়ের পরিত্যক্ত পানির পাম্পের কয়েক শ’ ফুট দীর্ঘ গভীর পাইপের ভেতরে পড়ে যায় জিহাদ। এরপরে শুরু হয় উদ্ধার অভিযান। একের পর এক যন্ত্র আর কৌশল খাটিয়ে চলতে থাকে উদ্ধার অভিযান। চলতে থাকে বুয়েটের বিশেষজ্ঞ, ফায়ার সার্ভিসের কর্মী আর সাধারণ মানুষের একের পর এক চেষ্টা। উচ্চ ক্ষমতা সম্পন্ন ক্যামেরা আর ভারি যন্ত্রপাতি ব্যাবহার করে শনিবার দুপুর পর্যন্ত যখন জিহাদের কোনো হদিস পাওয়া যায়নি।

শাহ মোহাম্মদ আবদুল্লাহ, শফিকুল ইসলাম ও রাহুল দাস দাবি করেন, তাদের বানানো বর্শার সাহায্যেই জিহাদকে উদ্ধার করা হয়েছে।

শাহ মোহাম্মদ আবদুল্লাহর দাবি, ফায়ার সার্ভিস উদ্ধারকাজ স্থগিত করার ঘোষণা দেওয়ার সময় তারা দড়ি বেঁধে বর্শাগুলো পাইপের মধ্যে ফেলেন। একবার চেষ্টাতেই তারা সফল হয়েছেন ।

এদিকে শিশু জিহাদকে উদ্ধারে মন্ত্রীদের বেফাঁস বক্তব্য এবং উদ্ধার হওয়ার আগেই কাজ সমাপ্তি ঘোষণায় বিক্ষোভ করে স্থানীয় জনগণ।

তারা পাম্পের কয়েকটি টিন শেডের ঘরে ভাঙচুর চালায়।