রূপরেখা চূড়ান্ত, যে কোন সময় আন্দোলন

SHARE

bnp logoনির্দলীয় সরকারের অধীনে জাতীয় নির্বাচনের দাবিতে আন্দোলনের রূপরেখা প্রায় চূড়ান্ত করা হয়েছে। এখন যে কোনো সময়ে আন্দোলনের ডাক দিতে পারেন বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া। একটি বিশ্বস্ত সুত্র এ তথ্য নিশ্চিত করছে।

জানা যায়, অত্যন্ত গোপনীয়তার সঙ্গে আগামী দিনের আন্দোলন কৌশল নির্ধারণ করা হচ্ছে। যাতে করে আন্দোলনকে তার অভিষ্ঠ লক্ষ্যে পৌঁছে দেয়া যায়। আর তাই অসহযোগ আন্দোলনে যাবার পরিকল্পনায় কঠোর কর্মসূচি অব্যাহত রাখার বিষয়ে নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছে দলটি। এমন কি আগামী দিনে যেখানেই বাধা দেয়া হবে সেখানেই গণ প্রতিরোধ গড়ে তোলা নীতিকে যে কোনো মূল্যে বাস্তবায়ন করতে রাজপথে আন্দোলনের নেতৃত্বে মাঠে থাকবেন খালেদা জিয়া।

সূত্র মতে আরো জানা যায়,  আগামী ২ জানুয়ারি ঢাকায় সমাবেশ করবে বিএনপি। আর তা করতে না দিলে ৫ জানুয়ারি থেকে টানা হরতাল আসতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

সূত্র জানায়, আওয়ামী লীগ ৫ জানুয়ারি সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সমাবেশ করার ঘোষণা দিয়েছে। তাই  বিএনপি ৫ জানুয়ারির আগেই ঢাকায় একটি সমাবেশ করার বিষয়ে ঐক্যমতে পৌঁছেছেন। সেক্ষেত্রে যদি অনুমতি না পায় দলটি তাহলে টানা ৭২ ঘণ্টার হরতাল কর্মসূচি ঘোষণা করা হতে পারে। পাশাপাশি ৫ জানুয়ারি অনুমতি উপেক্ষা করে ঢাকার রাজপথে শোডাউন দিবে বিএনপি। যা আগামী ২৭ ডিসেম্বর গাজীপুর জনসভা থেকে খালেদা জিয়া ইঙ্গিত দিতে পারেন।

দলীয় সূত্রে জানা যায়, সম্প্রতি বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার সঙ্গে যারাই দেখা করেছেন তাদের প্রত্যেককে (খালেদা জিয়া) তিনি নিজ নিজ এলাকায় ক্ষমতাসীনদের বিরুদ্ধে আন্দোলনের প্রস্তুতি নিতে আহ্বান জানিয়েছেন। খালেদা জিয়া বলেন, ক্ষমতাসীনদের আচরণের উপর ভিত্তি করে আন্দোলনে এবার একেক সময় একেক রকমের নতুন কৌশল নেয়া হবে। ‘রাজপথের আন্দোলনে আমি (খালেদা) থাকবো সামনের কাতারে, আপনারাও থাকবেন, দেখি সরকারের অন্যায় নির্দেশ মেনে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কি করে গুলি চালায়’।

সরকার পতনের দাবিতে জানুয়ারি মাসে যে কোনো সময় সারাদেশে একসঙ্গে কঠোর আন্দোলন গড়ে তোলা হবে। প্রয়োজনে ঢাকার সঙ্গে চট্টগ্রাম, রাজশাহী, সিলেটসহ সব বিভাগীয় শহরের যোগাযোগ ব্যবস্থা বন্ধ করে দেয়ার পরিকল্পনাও নিতে হতে পারে। বিশেষ করে সড়ক ও রেলপথ যোগাযোগ বিছিন্ন করে দেয়া হতে পারে।

দলটির দফতর সূত্রে জানা গেছে, খালেদা জিয়া প্রতিনিয়ত ঢাকা মহানগর ও ৭৫টি সাংগঠনিক জেলা ও থানা পর্যায়ের নেতাদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছেন। ইতিমধ্যে আগামী দিনে রাজপথে আন্দোলন করতে সক্ষম এমন নেতাদের একটি তালিকা তৈরির কার্যক্রম শেষ পর্যায়ে নিয়ে এসেছেন। যেখানে শুধু বিএনপি কিংবা ২০ দলীয় জোটই নয়, জোটের বাহিরে থাকা দলের অনেক নেতাকর্মীর নামও রয়েছে।

দলের সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নির্দেশনায় সরকার পতনের আন্দোলন কর্মসূচি এবার বেগম জিয়া নিজেই মনিটরিং করবেন। যাতে প্রয়োজনে কেন্দ্রীয় ও তৃণমূল নেতাকর্মীদের তাৎক্ষণিক নির্দেশনা প্রদান করা যায়।

দলীয় সূত্র জানায়, ক্ষমতাসীন সরকার টিকে থাকতে যেভাবে বিরোধী দলীয় আন্দোলন দমনে মরিয়া হয়ে উঠেছে। তেমনি অনেকটাই বাধ্য হয়ে নিজেদের অস্তিত্ব রক্ষায় সরকার পতনের আন্দোলন কে চূড়ান্ত আন্দোলনে রূপদানে বিএনপি রাজপথে সমাধানের দিকেই বেশি অগ্রসর হচ্ছে। দলটির অধিকাংশ নেতাই মনে করেন আওয়ামী সরকারের কাছে দাবি করে কোনো লাভ হবে। বরং এদের কিভাবে দ্রুত ক্ষমতাচ্যূত করা যায় তা নিয়েই ভাবা উচিত।

সম্প্রতি রাজপথে আন্দোলনের মাধ্যমে ক্ষমতাসীন সরকারের পতন ঘটাবে বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ও ঢাকা মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক মির্জা আব্বাস। আওয়ামী লীগকে উদ্দেশ্য করে তিনি বলেন, গুলি করা বাদ দেন, সাহস থাকলে রাজপথে মোকাবেলা করেন। আমরা বাংলাদেশে ভেসে আসি নাই। আগামী দিন বাংলাদেশের কোথাও আন্দোলন না হলেও নগর বিএনপির নতুন কমিটির নেতৃবৃন্দ ঢাকার রাজপথে আন্দোলন গড়ে তুলতে  বুকের তাজা রক্ত দিতে প্রস্তুত রয়েছে।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, দলের তৃণমূল নেতাকর্মীদের চাঙ্গা ও তাদের সঙ্গে দৃঢ়বন্ধন তৈরি করেছেন বিএনপির জ্যেষ্ঠ সহ-সভাপতি তারেক রহমান। তিনি দেশের প্রতিটি জেলা, উপজেলা, থানা ও ইউনিয়ন পর্যায়ের সভাপতি, সিনিয়র সহ-সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক, প্রথম যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক, সাংগঠনিক সম্পাদক, এবং বিগত দিনে আন্দোলন করতে গিয়ে দলের যেসব নেতাকর্মী হতাহত হয়েছেন তাদের প্রতিটি পরিবার এবং উপজেলা নির্বাচনে বিএনপি থেকে নির্বাচিত উপজেলা চেয়ারম্যান এবং ভাইস চেয়ারম্যানদের কাছে আন্দোলনের নির্দেশনা জানিয়ে যোগাযোগের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন।

আন্দোলন প্রসঙ্গে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ও সাবেক সেনাপ্রধান লে. জেনারেল (অব.) মাহবুবুর রহমান বলেন, জাতীয় নির্বাচনের দাবিতে ক্ষমতাসীন সরকার পতন ঘটানোর আন্দোলন চলছে। তবে এবারের আন্দোলন সংগ্রামে বেশ কিছু কলা কৌশল, পরিকল্পনা গ্রহণ করা হচ্ছে। আন্দোলনে জনসম্পৃক্ততা বাড়ানো, আন্তর্জাতিক লবিং জোরদার এবং আন্দোলনকে চাঙ্গা করার ব্যাপারে বিএনপি ইতিমধ্যে কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে নিয়ে এসেছি। আমি মনে করি গণআন্দোলনের মুখে সরকার বিএনপির দাবি মানতে বাধ্য হবে।

বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল্লাহ আল নোমান বলেন, ‘বিএনপির মতো বড় দল যে কোনো প্রতিকূল অবস্থা মোকাবেলা করতে সচেষ্ট। সরকারের পতন না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চলবে।’ তিনি বলেন, ‘ইতিহাস কথা বলে। ইতিহাসের দিকে তাকালেই দেখা যায়, অত্যাচারিত সরকারের পতন হয়-ই হয়।

বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা শামসুজ্জামান দুদু বলেন, ক্ষমতাসীনদের আচরণের উপর নির্ভর করে আগামীর আন্দোলনের ছক অনুসারে শিগগিরই মাঠে নামবে বিএনপি। চলতি মাসের শেষ দিকে কিংবা জানুয়ারি মাসের যে কোনো সময় একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের দাবিতে সরকার পতনের জন্য রাজপথে চূড়ান্ত আন্দোলন গড়ে তোলা হবে। যার নেতৃত্বে থাকবেন দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া।

আরেকটি সূত্র জানায়, রাজধানীতে আন্দোলন সফল করতে এবার এককভাবে কাউকে দায়িত্বও দেয়া হবে না। এমনকি ঢাকাকে আন্দোলনের জন্য ভাগ করা নাও হতে পারে। স্বল্প সময়ের জন্য তাৎক্ষণিকভাবে কর্মসূচি ঘোষণা করবেন দলের চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া। যার কিছুটা আভাস ঢাকা মহানগর ও দলের প্রতিটি অঙ্গ সহযোগী সংগঠনের নেতৃবৃন্দের সঙ্গে খালেদা জিয়ার বৈঠকে জানা গেছে।