তিস্তা ফুঁসছে, দেমোহনী থেকে বাংলাদেশ পর্যন্ত হলুদ সংকেত জারি ভারতের

SHARE

গত কয়েক দিনের টানা বর্ষণে বিপর্যস্ত উত্তরবঙ্গের পাহাড় ও সমতল। দার্জিলিংয়ের সিবকে ধস নামায় শিলিগুড়ির সঙ্গে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে সিকিম ও দার্জিলিংয়ের। ধস সরানোর কাজ চলছে। আজ সকালে লিস নদীর বাঁধ ভেঙে প্লাবিত হয়েছে মালবাজারের বিস্তীর্ণ এলাকা। তিস্তায় পানি বাড়ায় দেমোহনী থেকে বাংলাদেশ পর্যন্ত হলুদ সংকেত জারি করা হয়েছে। পাহাড় ও সমতলের বিস্তীর্ণ এলাকার স্বাভাবিক জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে।

টানা বৃষ্টিতে পানি বাড়তে শুরু করেছে উত্তরবঙ্গের নদীগুলিতে। সেখানকার সেচ দপ্তর জানিয়েছে, তিস্তা ব্যারেজ থেকে ইতোমধ্যেই ২৩২২.২৪ কিউসেক পানি ছাড়া হয়েছে। তাই তিস্তার অসংরক্ষিত এলাকায় (দেমোহনী থেকে বাংলাদেশ পর্যন্ত) জারি করা হয়েছে হলুদ সংকেত।

লাগাতার বৃষ্টিতে সিবক কালিবাড়িসহ বিভিন্ন এলাকায় ধস নামায় ১০ নম্বর জাতীয় সড়ক ও ৩১ নম্বর জাতীয় সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। গতকাল বুধবার সিবকের কাছে তিস্তায় পর্যটকসহ একটি গাড়ি পড়ে যায়। বিকেলেই উদ্ধারে নামে এনডিআরএফ’র একটি দল। কিন্তু প্রবল স্রোতে বাধা পায় উদ্ধার কাজ। একটি পর্যটন সংস্থার ওই গাড়িতে দুজন ছিলেন বলে জানা গেছে। আজ বৃহস্পতিবার সকালে ফের তল্লাশির কাজে গেলে সিবকে ধসের কারণে আটকে যায় এনডিআরএফ’র গাড়ি। দার্জিলিং জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ধস সরানোর কাজ শুরু হয়েছে।

গত ২৪ ঘণ্টায় ১৪২.২০ মিলিমিটার বৃষ্টির ফলে ডুয়ার্সের মাল মহকুমার লিস নদীর বাঁধ ভেঙে প্লাবিত সাওগাও বস্তি। সেখানে বহু মানুষ পানিবন্দি হয়ে আছেন। তাদের ত্রাণ দেওয়ার প্রস্তুতি চলছে। বাসিন্দাদের বক্তব্য, প্রতি বছরই বর্ষায় লিস নদীর বাঁধ ভেঙে পানি প্রবেশ করে তাদের বস্তিতে। ত্রাণ দেওয়া হলেও স্থায়ী কোনো সমাধান হয় না।

ডুয়ার্সের ওদলাবাড়ির কাছে রেলের আন্ডারপাসে পানি জমায় ডুয়ার্স রুটের চলাচলও ব্যাহত হচ্ছে। ঘুরপথে শিলিগুড়ি থেকে এনজেপি, জলপাইগুড়ি হয়ে আলিপুরদুয়ারে পাঠানো হচ্ছে ট্রেনগুলিকে।

আলিপুরদুয়ার শহর লাগোয়া কালজানি, ডিমা ও নোনাই নদীতে পানিবৃদ্ধির কারণে বৃষ্টিতে জমে থাকা পানি নদীতে পড়তে পারছে না। পরিস্থিতির দিকে নজর রাখছে পুরপ্রশাসন। তিত, বাঙ্গরি ও হাউরি নদীর পানি বেড়ে যাওয়ায় ফের বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে টোটোপাড়া। এছাড়া ভুটান পাহাড়েও বৃষ্টি হচ্ছে বলে জানা গেছে।
আগামী ৪৮ ঘণ্টায় ভারী থেকে অতিভারী বর্ষণের পূর্বাভাস দিয়েছে সেখাকার আবহাওয়া দপ্তর। এই মৌসুমে সব থেকে বেশি বৃষ্টি হয়েছে আলিপুরদুয়ারের হাসিমারাতে। আজ সকাল ৮টা পর্যন্ত হাসিমারাতে ২৩৬৩.০০ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে। পরিস্থিতির দিকে নজর রাখছে সেচ দপ্তর। আলিপুরদুয়ার জেলা সেচ দপ্তরের কর্মকর্তা নীরজ কুমার সিং বলেন, কোনো নদীতে এখনও বন্যা পরিস্থিতি তৈরি হয়নি। তবে আমরা পরিস্থিতির দিকে নজর রাখছি। পরিস্থিতি মোকাবিলায় আমরা প্রস্তুত আছি।

গত ২৪ ঘণ্টায় বৃষ্টিপাতের পরিমাণ:

১) জলপাইগুড়ি- ১১.৫০ মিলিমিটার

২) আলিপুরদুয়ার- ৩৮.২০ মিলিমিটার

৩) কোচবিহার- ২৮.৮০ মিলিমিটার

৪) শিলিগুড়ি- ৫৭.০০ মিলিমিটার

৫) মালবাজার- ১৪২.২০ মিলিমিটার

৬) হাসিমারা- ১১৩.০০ মিলিমিটার

৭) বানারহাট- ১৩৭.০০ মিলিমিটার

৮) মাথাভাঙা- ১৮.২০ মিলিমিটার

৯) তুফানগঞ্জ- ৪৭.৪০ মিলিমিটার

১০) ময়নাগুড়ি- ৩৫.০০ মিলিমিটার

সূত্র: দ্য ওয়াল