জলবায়ু সংকট মোকাবেলায় বাংলাদেশ ‘সেরা শিক্ষক’ : বান কি মুন

SHARE

জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবিলায় অভিযোজনের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ থেকে শিক্ষা নেওয়া উচিত বলে মন্তব্য করেছেন জাতিসংঘের সাবেক মহাসচিব বান কি মুন।

আজ বুধবার (১০ জুলাই) ঢাকার হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টোলে ‘ঢাকা মিটিং অব দ্য গ্লোবাল কমিশন অন অ্যাডাপটেশন’ শীর্ষক আন্তর্জাতিক সভার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে এ মন্তব্য করেন তিনি। এ সময় জলবায়ু সংকট মোকাবেলায় বাংলাদেশকে ‘সেরা শিক্ষক’ হিসেবে উল্লেখ করেন তিনি।

বান কি মুন বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনে ঝুঁকিপূর্ণ বাংলাদেশ। জলবায়ু পরিবর্তনের বিষয়ে আন্তঃরাষ্ট্রীয় প্যানেল (আইপিসিসি) বলছে, সাগরপৃষ্ঠের উচ্চতা আর যদি এক মিটারও বাড়ে তবে ২০৫০ সালের মধ্যে বাংলাদেশের ১৭ শতাংশ এলাকা পানির নিচে তলিয়ে যাবে।

সাম্প্রতিক ঘূর্ণিঝড় ফনিতে ১২ জনের প্রাণহানির সঙ্গে পাঁচ লাখ মানুষের প্রাণ নেওয়া ১৯৭০ সালের ভয়াবহ ঘূর্ণিঝড়ের তুলনা করেন বান কি মুন। তিনি বলেন, ‘যথার্থ আবহাওয়া পূর্বাভাস, কমিউনিটিভিত্তিক পূর্ব সতর্কীকরণ ব্যবস্থা ও সাইক্লোন সেন্টার থাকার ফলে ঘূর্ণিঝড় আঘাত হানার আগেই ১৬ লাখ মানুষকে নিরাপদে সরিয়ে নেওয়া সম্ভব হয়েছে।’

তিনি বলেন, ‘অভিযোজন অনুশীলনে বাংলাদেশের জনগণ ও সরকার যে নেতৃত্ব অর্জন করেছে তা অলৌকিকের চেয়ে কোনো অংশে কম নয়। বাংলাদেশের তুলনায় বিশ্বের বাকি দেশের অনেক কিছু শেখার আছে। এভাবেই অভিযোজনের বিষয়ে শেখার জন্য বাংলাদেশ সর্বশ্রেষ্ঠ।’

জাতিসংঘের এই সাবেক মহাসচিব বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের সঙ্গে অভিযোজন করে বাংলাদেশ সরকার ও জনগণ জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবেলায় যে প্রজ্ঞা ও কার্যকারিতার উদারহরণ দেখিয়েছে, তা আমাদের সবাইকে অনুপ্রেরণা যোগায়।’ তিনি বলেন, ‘অভিযোজনের প্রসঙ্গ যখন আসে তখন জলবায়ু পরিবর্তনের অভিঘাতের অগ্রভাগে থাকা আমাদের শেষ্ঠ শিক্ষকরা তাদের দুয়ার খুলে দিয়েছে।’

গ্লোবাল কমিশন অন অ্যাডাপটেশন আয়োজিত ঢাকা সম্মেলনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন মুন। গ্লোবাল কমিশন অন অ্যাডাপটেশনের চেয়ারম্যান হিসেবেও দায়িত্ব পালন করছেন তিনি। ঢাকা সম্মেলনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এতে আরও উপস্থিত ছিলেন মার্শাল দ্বীপপুঞ্জের প্রেসিডেন্ট হিলদা সি হেইন ও বিশ্ব ব্যাংকের সিইও ক্রিস্টালিনা জর্জিওভা।

বান কি মুন বলেন, বাংলাদেশই প্রথম দেশ ২০১৯ সালে অ্যাডাপটেশন নিয়ে একটি অ্যাকশন প্ল্যান তৈরি করেছে। ফলে খাদ্য নিরাপত্তা, সাইক্লোন সেন্টার প্রতিষ্ঠা, জলবায়ুখাতে গবেষণা ইত্যাদিতে জলবায়ু পরিবর্তন প্রভাব মোকাবিলায় এ উদ্যোগ অবশ্যই প্রশংসার দাবি রাখে।

জলবায়ু পরিবর্তনের ওপর দুই দিনের বিশেষ আন্তর্জাতিক সম্মেলন রাজধানীর হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে শুরু হয়েছে। এতে সভাপতিত্ব করছেন গ্লোবাল কমিশন অন এডাপ্টেশনের (জিসিএ) চেয়ারম্যান ও জাতিসংঘের সাবেক মহাসচিব বান কি মুন।

আন্তর্জাতিক এই সভার আয়োজনে প্রধান দায়িত্ব পালন করছে পরিবেশ বন ও জলবায়ু মন্ত্রণালয়। ওই মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত মন্ত্রী মো. শাহাব উদ্দিন কালের কণ্ঠকে জানান, আগামী সেপ্টেম্বরে নিউ ইয়র্ক জাতিসংঘ সদরদপ্তরে জাতিসংঘ মহাসচিবের উদ্যোগে একটি বিশেষ ক্লাইমেন্ট সামিট অনুষ্ঠিত হবে।

এই সামিটকে সামনে রেখে ঢাকায় দুই দিনের জিসিএ’র এই সম্মেলন আয়োজন করা হয়। ‌এতে জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাব মোকাবেলায় অভিযোজন সংশ্লিষ্ট সক্ষমতা ও অবদান কীভাবে বাড়ানো যায়, সে বিষয়ে আলোচনা হচ্ছে। এই সম্মেলনে চূড়ান্ত হওয়া অভিযোজন সংক্রান্ত প্রতিবেদন বিশেষ ক্লাইমেট সামিটে উত্থাপন করা হবে। যে কারণে এই সভা জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে সবচেয়ে ঝুঁকিতে থাকা বাংলাদেশের অভিযোজন প্রক্রিয়ায় বিশেষ ভূমিকা রাখবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।

সংশ্লিষ্টরা জানান, বাংলাদেশ জলবায়ুর অভিযোজনের ক্ষেত্রে অগ্রগামী। এ বিষয়ে বাংলাদেশের গৃহীত পদক্ষেপসমূহ সরজমিনে পরিদর্শনের জন্য গ্লোবাল কমিশনের সদস্যরা আশ্রায়ন প্রকল্প, নদী ভাঙন রোধ ও গাজীপুর ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট পরিদর্শন করবেন।

কমিশন সদস্যদের মধ্যে বান কি মুন ছাড়াও বিশ্ব ব্যাংকের চিফ একিকিউটিভ অফিসার ক্রিস্টালিনা জর্জিভা, মার্শাল আইল্যান্ডের প্রেসিডেন্ট হিল্ড হেইন, গ্লোবাল এনর্ভানমেন্টাল ফ্যাসিলিটি-এর প্রধান (সিইও) ড. নওকো ইশি, মেক্সিকোর সাবেক অর্থমন্ত্রী ড. জেসে এন্টনিও মিডে প্রমুখ।