মন্ত্রী নন, তিনি শ্রমিক নেতা!

SHARE

shajahan14পানিতে ডুবে তিন ভাগ্নী নিহত হওয়ার ঘটনাটি নৌ-পরিমহনমন্ত্রী শাহজাহান খানের জন্য একটি ট্রাজেডি। গত আগস্ট মাসে পদ্মায় লঞ্চডুবির এ ঘটনায় আরো ১০০ যাত্রী প্রাণ হারিয়েছিল। যাত্রী বোঝাই ক্ষমতার তিনগুণ অর্থাৎ ২৫০ জন যাত্রী নিয়ে সেদিন যাত্রা করেছিল পিনাক-৬ নামের লঞ্চটি। আর সেটিকে অস্থায়ী চলাচলের অনুমতি দিয়েছিলেন নৌ-বিভাগের জাহাজ জরিপকারী মির্জা সাইফুর রহমান।

তিন ভাগ্নীর মধ্যে মন্ত্রীর শুধু এক ভাগ্নীর লাশ পাওয়া গিয়েছিল। নিখোঁজ অন্যান্য যাত্রীর মতো বাকি দুই ভাগ্নির লাশের আর সন্ধান পাওয়া যায়নি। ধারণা করা হয়, এরা সবাই মারা গেছে। ডুবে যাওয়া লঞ্চের আর কোনো হদিস মেলেনি, পরিত্যক্ত ঘোষণা করা হয় উদ্ধার অভিযানের। তবে অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে নৌ-মন্ত্রী শাহজাহান খান তার মন্ত্রিত্বের ব্যর্থতা একেবারে ভুলে গেছেন। ভুলে গেছেন তার ভাগ্নীদের কথাও।

দায়িত্বে অবহেলার অভিযোগে সেই সাইফুরকে বরখাস্ত করার পর মন্ত্রী তাকে আবারো বহাল তবিয়তে ফিরে আসার জন্য মন্ত্রণালয়কে নির্দেশ দিয়েছেন। সূত্র জানায়, সাইফুরের শ্বশুরের দ্বারা প্ররোচিত হয়ে এ সিদ্ধান্ত নিয়েছেন মন্ত্রী। তার শ্বশুর পরিবহন শ্রমিক সংগঠনের এক প্রভাবশালী নেতা। তার সঙ্গে মন্ত্রীর সখ্যতা রয়েছে।

মন্ত্রীর চাপ এতই বেশি ছিল যে, গত ১৩ নভেম্বর নৌ-বিভাগের পক্ষ থেকে নৌ-মন্ত্রণালয়ে আবেদন জানানো হয়- মির্জা সাইফুরের বরখাস্ত আদেশ যেন প্রত্যাহার করে নেয়া হয়। নভেম্বরের শেষ দিকে তাকে পুনরায় নিয়োগ দেয় মন্ত্রণালয়। ঢাকা নদীবন্দরের জাহাজ জরিপে তাকে পদায়ন করা হয়। পিনাক ট্রাজেডির সময় তিনি একই জায়গায় ছিলেন।

সাইফুরের নৌ-বিভাগের পক্ষ থেকে দণ্ড দেয়ায় আবেদন করা হয়েছিল তাকে যেন ঢাকার বাইরে পোস্টিং করা হয়। কিন্তু তাও উপেক্ষা করা হয়েছে। পিনাক-৬ ডুবির ঘটনায় প্রাণহানিতে অক্টোবরে শুরুতে  সাইফুরকে অভিযুক্ত করে নৌ-বিভাগ। নৌ-মন্ত্রণালয়ের গঠিত তদন্ত কমিটি গত ১৪ সেপ্টেম্বর তাদের প্রতিবেদনে লঞ্চডুবির ঘটনায় দায়ী হিসেবে সাইফুরকে সরাসরি অভিযুক্ত করে। এর এক সপ্তাহ পরই তাকে বরখাস্ত করা হয় এবং নৌ-মন্ত্রণালয়কে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের আহ্বান জানানো হয়।

এবিষয়ে নৌ-মন্ত্রী শাহজাহান খান বলেন, “জাহাজ জরিপকারী লোকের কমতি থাকায় সাইফুরকে পুনরায় পদায়নের নির্দেশ দেয়া হয়েছে। আর তা না করা হলে নৌপথের যানগুলোর চলাচল অনিরাপদ হয়ে উঠতো।”

তিনি বলেন, “সারা দেশের দশ হাজার নিবন্ধিত নৌ-যানের জন্য চারজন জরিপকারী রয়েছেন। এ পরিপ্রেক্ষিতে আমরা একজনকে বরখাস্ত করে রাখতে পারি না।”

মন্ত্রণালয়ের জরিপে সাইফুরকে লঞ্চডুবিতে ১০০ জন নিহত হওয়ার জন্য দায়ী, নৌ-আদালতে এ বিষয়ে একটি মামলা প্রক্রিয়াধীন আছে, দুর্নীতি ঘটনা দুদক তদন্ত করছে –এসব বিষয়ে মন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে তিনি বলেন, “যেটা হয়েছে সেটা বাস্তবতা। বাধ্য হয়েই তাকে পুনরায় নিয়োগ দিতে হয়েছে।”

সাইফুরের শ্বশুরের দ্বারা প্রভাবিত হয়েছেন কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে শাহজাহান খান বলেন, “এটা একটা মিথ্যা অভিযোগ।”

পিনাক-৬ লঞ্চটিতে বিভিন্ন ত্রুটি নিজ হাতে ধরার পরও সাইফুর আইন ভঙ্গ করে এটিকে ফিটনেস সনদ প্রদান করেন। এ আইনের বর্ধিত সুবিধায় যানটিকে একবারের জন্য ৪৫ দিন চলাচলের সুযোগ দেয়া হয়।

নৌ-বিভাগের পরিচালক জেনারেল কমোডর এম জাকির রহমান ভূঁইয়া বলেন, “বরখাস্ত আদেশ প্রত্যাহার করে নেয়া আইনসম্মত নয়। যেহেতু বিষয়টি নিয়ে নৌ-বিভাগের সাজা চলছে।”

তিনি বলেন, “বিষয়টিতে আমরা নৌ-মন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্ত জানতে চাচ্ছি।”

মির্জা সাইফুরের ৫৬ টি নৌযান রেজিস্ট্রেশন ও জরিপে অসঙ্গতি খতিয়ে দেখতে গত বছরের এপ্রিল থেকে এ বছরের এপ্রিল মাসে তদন্ত চালায় দুদক। সূত্র জানায়, নৌযানের অসঙ্গতিতে কোটি কোটি টাকা রাজস্ব ক্ষতি হতে পারে।

পিনাক-৬ ডুবির ঘটনায় নৌ-আদালতে লঞ্চ মালিক আবু বকর সিদ্দিক ও তার পুত্র ওমর ফারুক লিমন, সাবেক মালিক মনিরুজ্জামান খোকন, লঞ্চ মাস্টার সহকারী গোলাম নবী বিশ্বাস, গ্রেসার সবদার মোল্লা, টার্মিনাল লিজ হোল্ডার মোতালেব হাওলাদার, ইয়াকুব বেপারি ও আবদুল হাই শিকদারের নামে মামলা করা হয়েছে।
মামলায় সবাইকে অভিযুক্ত করা হলেও কালু ও লিমন রয়ে গেছে আড়ালে। গত ২ অক্টোবর আদালত তাদের গ্রেফতারের নির্দেশ দেন। ২০০৯ সাল থেকে নৌমন্ত্রীর দায়িত্ব নেয়ার পর থেকে ৬৪টি লঞ্চ দুর্ঘটনা ঘটেছে। যাতে প্রাণ হারিয়েছে শতাধিক লোক।–ডেইলি স্টার।