নীরব অন্ধত্বের অন্যতম প্রধান কারণ গ্লুকোমা

SHARE

রক্তচাপের মতো চোখেরও নির্দিষ্ট চাপ রয়েছে। কোনো কারণে চোখের এই চাপ বেড়ে গেলে অপটিক নার্ভের ক্ষতি হয়, ধীরে ধীরে সেটি শুকিয়ে যায়। কোনো রকম উপসর্গ ছাড়াই এভাবে দৃষ্টির পরিসীমা কমতে কমতে এক পর্যায়ে চোখ অন্ধ হয়ে যায়। এ অবস্থাই হলো গ্লুকোমা যা যেকোনো বয়সেই হতে পারে। নীরব অন্ধত্বের অন্যতম প্রধান কারণ এই গ্লুকোমা যাতে বিশ্বের প্রায় ৭০ মিলিয়ন মানুষ ভুগছে। বাংলাদেশে ২ ভাগেরও বেশি মানুষের গ্লুকোমা রয়েছে এবং দেশে ৩০ লাখের ওপর গ্লুকোমা রোগী।

এটা এমন এক জটিল অসুখ যে চিকিৎসার আগ পর্যন্ত যেটুকু দৃষ্টি কমে গেছে সেটা আর ফেরত পাওয়া সম্ভব নয়। তবে উপসর্গহীন এবং অপরিবর্তনীয় এই রোগটিকে শুরুতে সনাক্ত করে চিকিৎসা নিলে জটিলতা এড়ানো যায়। কারো চোখের পাওয়ার বা দৃষ্টিক্ষমতা হয়তো ৯০ শতাংশ নষ্ট হয়ে গেছে কিন্তু ১০ শতাংশ হয়তো ভালো আছে। উপযুক্ত চিকিৎসা করালে ওই ১০ শতাংশ ভালো থাকতে পারে কিন্তু ৯০ শতাংশ আর ফেরত পাওয়া যাবে না। অর্থাৎ যেটুকু দৃষ্টি বিদ্যমান আছে, ওষুধ ও অপারেশনের মাধ্যমে সেটুকু রক্ষা করা যায়। তাই কারো গ্লুকোমা হোক বা না হোক প্রতিবছর উচিৎ অন্তত একবার চোখের নিয়মিত চেকআপ করা বিশেষ করে ৩৫ বছরের পর। আর চল্লিশোর্ধ ব্যক্তিদের নিয়মিত চেকআপ করা আরো জরুরি। মূল সমস্যা হলো, গ্লুকোমা নিয়ে সাধারণ মানুষ ততটা সচেতন নয়। অথচ এটা প্রতিরোধের প্রধান শর্ত হলো এ বিষয়ে ব্যাপক জন-সচেতনতা সৃষ্টি করা। আশার কথা যে, গ্লুকোমা যে পর্যায়ে নির্ণয় হোক না কেন তার আধুনিক চিকিত্সা বাংলাদেশেই রয়েছে।

আজ শনিবার বিশ্ব গ্লুকোমা সপ্তাহ উপলক্ষে বাংলাদেশ গ্লুকোমা সোসাইটির আয়োজনে রাজধানীর একটি রেস্টুরেন্টে আয়োজিত সাংবাদিক সম্মেলন ও মতবিনিময় সভায় বক্তারা এসব কথা বলেন।

বাংলাদেশ গ্লুকোমা সোসাইটির সভাপতি ডা. এম জিয়াউল করীমের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন ছিলেন প্রধানমন্ত্রীর সাবেক স্বাস্থ্যবিষয়ক উপদেষ্টা অধ্যাপক ডা. সৈয়দ মোদাচ্ছের আলী। অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন এশিয়া প্যাসিফিক একাডেমি অব অফথালমোলজির (এপিএও) নব নির্বাচিত সভাপতি অধ্যাপক ডা. আভা হোসেন, হারুন আই ফাউন্ডেশন লিমিটেডের চেয়ারম্যান ডা. খন্দকার ইমতিয়াজ হোসেন, ব্যবস্থাপনা পরিচালক অধ্যাপক ডা. শেখ এম এ মান্নাফ, বাংলাদেশ গ্লুকোমা সোসাইটির সাবেক সভাপতি ও বাংলাদেশ আই হাসপাতালের গ্লুকোমা বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. এম. নজরুল ইসলাম, বাংলাদেশ চক্ষু চিকিৎসক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ডা. সারফুদ্দীন আহমেদ, বাংলাদেশ গ্লুকোমা সোসাইটির মহাসচিব ডা. মো. কামরুল ইসলাম খান প্রমূখ।

এর আগে সচেতনতা মূলক লিফলেট, পোস্টার ও ব্যানার বিতরণ, ফ্রি স্ক্রিনিং, বিমামূল্যে চক্ষু দেখার ব্যবস্থা, বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা আয়োজন করে তারা।

বক্তারা আরো বলেন, জন্মগত, বংশগত কারণ, চোখের যেকোনো অসুখ, অনিয়ন্ত্রিত ডায়াবেটিস, চোখে আঘাত, ওষুধের পাশ্বপ্রতিক্রিয়া, দীর্ঘদিন স্টেরয়েড ব্যবহারের কারণ ছাড়াও স্বাভাবিকভাবেও যে কারো গ্লুকোমা হতে পারে। কেউ হয়তো চোখে ভালো দেখতে পাচ্ছেন, তাই বলে এটা মনে করার কোনো কারণ নেই যে তার কখনো গ্লুকোমা হবে না। যাদের ইতোমধ্যে গ্লুকোমা ধরা পরেছে, তাদের উচিৎ কমপক্ষে তিন মাস অন্তর চোখ পরীক্ষা করা, চিকিৎসকের পরামর্শে নির্ধারিত মাত্রার ওষুধ নিয়মিত ব্যবহার, চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া স্টেরয়েড ব্যবহার না করা, দীর্ঘদিন একটি ওষুধ ব্যবহারে এর কার্যকারিতা কমে গেলে বা পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা দিলে আবার চিকিৎসকের শরণাপন্ন হয়ে প্রয়োজনে শল্য চিকিৎসা নেওয়া।