বরগুনার আমতলীতে তরমুজের বাম্পার ফলন

SHARE

download (1)বরগুনা জেলার আমতলী (নবগঠিত তালতলী উপজেলাসহ) উপজেলায় বিগত বছরগুলোর মতো এ বছরও তরমুজের বাম্পার ফলন হয়েছে। তরমুজ চাষে গত কয়েক বছরের ধারাবাহিক সাফল্যে উৎসাহিত হয়ে আমতলী উপজেলার প্রতিটি গ্রামের কৃষকরা ব্যাপক হারে তরমুজ ফলিয়েছেন। এলাকার কৃষকদের কাছে ধানের পরেই এখন তরমুজ দ্বিতীয় প্রধান ফসল হিসেবে স্থান করে নিয়েছে। মাত্র আড়াই মাসে তরমুজ চাষ করে মোট উৎপাদন খরচের চারগুন আয় করা যায় বলে কৃষকদের মধ্যে তরমুজ চাষ ব্যাপক জনপ্রিয়তা পেয়েছে।
স্থানীয় কৃষকরা জানান, তারা নীচু জমিতে জোয়ারের পানি ঢোকা এবং ঝড়ের সাথে শিলা বৃষ্টির শংকায় রয়েছেন। এই প্রাকৃতিক প্রতিকুলতায় না পড়লে এবছরও তারা বড় অংকের লাভ আশা করছেন।
উপজেলার ১৪ টি ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভার প্রতিটি গ্রামেই ৭০ শতাংশ কৃষক এ বছর জানুয়ারী-ফেব্রুয়ারী মাসে তরমুজ চাষ করছেন। এদের মধ্যে অনেকে পারিবারিক চাহিদা মেটাতে ‘বাৎসরিক একটি ফল’ হিসাবে তরমুজ চাষ করেছেন। তবে মোট চাষের ৮০ শতাংশই বাণিজ্যিক ভিত্তিতে করা হয়েছে। অধিকাংশ খেতের তরমুজ পেঁকে গেছে। চলছে পাইকারী বেচা- কেনা।
বিভিন্ন এলাকার কৃষকদের তথ্য মতে এ বছর আমতলী (তালতলীসহ) উপজেলার ১৪ ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রামে চার হাজার হেক্টর জমিতে তরমুজ চাষ করা হয়েছে। প্রতি বছরের মতো এবছরও আঠারোগাছিয়া, কুকুয়া, চাওড়া গুলিশাখালী, আড়পাঙ্গাসিয়া, বগী, পঁচাকোরালিয়া, কড়ইবাড়িয়া, নিশানবাড়িয়, সোনাকাটা, তালতলী, আমতলী এবং হলদিয়া ইউনিয়নে ব্যাপক হারে তরমুজের উৎপাদন হয়েছে। প্রতি বছরই তরমুজ চাষীর সংখ্যা বাড়ছে বলে দক্ষিণ রাওঘা এলাকার ‘আদর্শ কৃষক’ নুরুল আমিন খান জানান।
আমতলী উপজেলা কৃষি দপ্তর সূত্রে জানা গেছে, কৃষি দপ্তরের সরাসরি তত্ত্বাবধানে তরমুজ আবাদী জমি রয়েছে প্রায় ৩৫’শ হেক্টর যা গত বছরের তুলনায় ৫’শ হেক্টর বেশী। তরমুজ কাটা, পরিবহন ও বিক্রির কাজে এখন ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন প্রায় ৩০ হাজার কৃষক। আমতলী শহরের বাঁধঘাটের তরমুজ ব্যবসায়ী নাননু আকন বলেন, উৎপাদিত তরমুজ, বরিশাল, ঢাকা, বগুড়া, যশোর প্রভৃতি এলাকায় রপ্তানী করা হচ্ছে।
আমতলীতে বানিজ্যিক ভাবে তরমুজ উৎপাদনের পথিকৃত আঠারোগাছিয়া ইউনিয়নের কৃষকরা। এ বছর ঐ ইউনিয়নের সোনাখালী, আঠারোগাছিয়া এবং গাজীপুর গ্রামের ১৫’শ হেক্টর জমিতে তরমুজের ব্যাপক ফলন হয়েছে। তরমুজ উৎপাদনে উপজেলায় ১ম স্থানে রয়েছে হলদিয়া ইউনিয়ন। সেখানে দুই হাজার হেক্টর জমিতে তরমুজের বাম্পার ফলন হয়েছে।
গাজীপুর গ্রামের কৃষক রইস উদ্দিন বলেন,“ গত বছর ৩ একর জমিতে তরমুজ চাষ করি। খরচাপাতি বাদ দিয়া প্রায় ১ লাখ টাকা ব্যবসা (লাভ) হইছিল। এই বছর ৫ একর জমির তরমুজ বেচা শুরু করছি। এহন খালি আল্লাহরে কই, বৃষ্টির সাথে যেন শিল (শিলা) না পড়ে। তাইলে ক্ষেতের তরমুজ শ্যাষ (শেষ)।
এ বছর আট একর জমিতে তরমুজ ফলিয়েছেন সোনাখালী গ্রামের মাননাফ গাজী। তিনি বলেন, ‘মাইনসের দেহাদেহি (অন্য চাষীদের দেখে) গত বছর ১ একর জমিতে তরমুজ ফলাইছিলাম। জমিতে জোয়ারের পানি ঢুইকা অনেক তরমুজের ক্ষতি হইছিল। তারপরও প্রায় ২ হাজার পিস তরমুজ হইছিল। গড়ে ৪০ টাকা পিস বেইচ্ছি। খরচা বাদ দিয়া ৫৫ হাজার টাকা ঘরে তুলছিলাম। এ বছর ইতিমধ্যে দুই ট্রাক তরমুজ তিন লাখ টাকায় বিক্রি করেছি।
চাওড়া কালীবাড়ী গ্রামের আলতাফ হোসেন বলেন, ‘আমাদের জমিতে উৎপাদিত ধান দিয়ে বছরের খোরাকি চলে যায়। ধান দিয়ে বাড়তি আয় নেই বললেই চলে। এ এলাকার বেশীরভাগ কৃষকেরই এ অবস্থা। তাই তরমুজ চাষের মাধ্যমে আমরা বাড়তি যে টাকা আয় করতে পারছি সেটাই আমাদের নিরেট সম্পদ হচ্ছে। এখন ধানের পরেই আমরা তরমুজ চাষে আগ্রহী।
গত ১০ বছর ধরে বরগুনায় জেলার তরমুজের চাষ চলছে। আমতলী ছাড়া বামনা ও পাথরঘাটা উপজেলায় তরমুজ চাষ হয়ে থাকে। তবে তরমুজ চাষে আমতলী উপজেলার কৃষকরাই পথিকৃত। এ বছরও আমতলী উপজেলায় তরমুজের বাম্পার ফলন হচ্ছে। জানালেন, আমতলী উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. শাহালম। তিনি আরও জানান, আমাদের পরামর্শ যথাযথ ভাবে চাষীরা কাজে লাগাচ্ছেন। সকলের সমন্বিত উদ্যোগে ধারাবাহিক সাফল্য আসছে। তিনি আরও জানান, সরকারী হিসেব মতে গত বছর আমতলী উপজেলায় ৩ হাজার ৫০ হেক্টর জমিতে প্রায় সাড়ে ১ লাখ ২০ হাজার মেঃ টন তরমুজ উৎপাদিত হয়েছিল। সে বছর তরমুজ চাষ করে আমতলীর কৃষকরা প্রায় ৫০ কোটি টাকা আয় করেন। এ বছর দেড় লাখ টনের বেশী ফলন হয়েছে। আবহাওয়া অনুকুলে থাকলে আমতলীর কৃষকরা ৭০ কোটি টাকার বেশী আয় করবেন বলে আশা করছি।