অস্ট্রেলিয়ায় গরম কানাডায় শীত মরুতে বরফের স্তর

SHARE


বিশ্বের এক প্রান্তে তীব্র তাবদাহ আর অপর প্রান্তে তীব্র শীত। বর্তমানে পৃথিবীর দক্ষিণ-পূর্বের দেশ অস্ট্রেলিয়া ও উত্তর-পশ্চিমের দেশ কানাডায় সম্পূর্ণ বিপরীত অবস্থা চলছে। অস্ট্রেলিয়ায় অসহ্য গরম আর কানাডায় হাড়কাঁপানো শীতে জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। অন্যদিকে তপ্ত সাহারা মরুভূমির বুকেও বরফ শীতল তুষার জমে যাওয়ার ঘটনা ঘটেছে।

কনকনে শীতে কাঁপছে কানাডা: ঠাণ্ডায় রেকর্ড হয়েছে কানাডায়। শীতের দেশ হিসেবে পরিচিত হলেও এবার বছরের শুরুতেই মাইনাস ৪৮ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রার রেকর্ড হয়েছে। যা বিশ্বের সর্বনিন্ম তাপমাত্রা। ২ জানুয়ারি দেশটির কুইবেকের লা গ্রান্ডেতে সর্বনিন্ম এ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়। শুধু কুইবেকেই নয় আলবার্টা, অন্টারিওসহ দেশটির অন্তত চার প্রদেশেই সর্বনিন্ম তাপমাত্রা রেকর্ড এটি। তীব্র শীত ও তুষারপাতের কারণে দেশটিতে এ পর্যন্ত অসংখ্য ফ্লাইট বাতিল হয়েছে। ফ্লাইট অ্যাওয়ার নামে একটি পর্যবেক্ষণকারী সংস্থা জানিয়েছে, শুধু টরন্টো বিমানবন্দরেই প্রায় ৫০০ ফ্লাইট বাতিল করা হয়েছে। জনসাধারণকে জরুরি প্রয়োজন ছাড়া ঘর থেকে বের না হওয়ার জন্য নির্দেশ দেয়া হয়েছে।

এ দিকে তিন দশকের মধ্যে সবচেয়ে বেশি তুষারপাত দেখেছে ফ্লোরিডায় বাসিন্দারা। সেখানকার উত্তরাঞ্চলে বিগত ২৯ বছরে এমন তুষারপাত হয়নি। শুধু ফ্লোরিডাই নয় যুক্তরাষ্ট্রের বেশ কয়েকটি অঙ্গরাজ্যে তুষার ঝড় ও কনকনে ঠাণ্ডায় নতুন বছরের প্রথম সপ্তাহে ১১ জনের মৃত্যু হয়েছে। শীতকালীন ঝড়ের তাণ্ডবে কয়েকটি অঙ্গরাজ্যে বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ রয়েছে। বিজ্ঞানীরা শক্তিশালী ওই ঝড়ের নাম দিয়েছেন ‘বোমা ঝড়’। ৪ জানুয়ারি ওই তুষার ঝড় আঘাত হানার কথা থাকলেও একদিন আগেই ফ্লোরিডায় তা আঘাত হানে। ১৯৮৯ সালের পর এটিই ফ্লোরিডায় উল্লেখযোগ্য কোনো তুষারপাতের ঘটনা। এমনকি দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলের যেসব অঙ্গরাজ্যে বহু বছর তুষারপাত হয়নি, সেখানেও এর প্রভাবে তুষারপাতের ঘটনা ঘটেছে। বাজে আবহাওয়ার কারণে যুক্তরাষ্ট্রের বেশ কিছু রাজ্যে বাতিল করা হয় হাজারও ফ্লাইট। ঝড়ের আওতায় থাকা রাজ্যগুলোর অধিকাংশ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখা হয়। তুষারপাতের কারণে যান চলাচল বন্ধ হয়ে ভেঙে পড়ে যোগাযোগ ব্যবস্থা। সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় কয়েকটি অঙ্গরাজ্যে ঘোষণা করা হয় জরুরি অবস্থা।

প্রচণ্ড গরমে স্বস্তি নেই সিডনিতে : কানাডা, যুক্তরাষ্ট্রসহ ইউরোপের অনেক দেশে যখন হারকাঁপানো শীত তখনই একেবারেই উল্টো চিত্র দেখা গেছে অস্ট্রেলিয়ায়। কানাডায় যখন মাইনাস ৪৮ দশমিক ২ ডিগ্রি তাপমাত্রার রেকর্ড তখন ঠিক এর উল্টো ৪৭ দশমিক ৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রার রেকর্ড হয়েছে অস্ট্রেলিয়ায়।

৭ জানুয়ারি দেশটির নিউ সাউথ ওয়েলস রাজ্যের রাজধানী সিডনিতে এ রেকর্ড করা হয়। ৪৭ দশমিক ৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রার কারণে প্রচণ্ড গরমে অস্থির হয়ে পড়ে জনজীবন। দেশটির আবহাওয়া ব্যুরোর তথ্যমতে, সিডনির প্রায় ৮০ বছরের রেকর্ড ভেঙে এবারই সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে। ১৯৩৯ সালের পর সেখানে এটাই সর্বোচ্চ তাপমাত্রা। এর আগে ২০১৩ সালে সিডনির সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৪৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস ছাড়িয়েছিল।

দেশটির স্থানীয় গণমাধ্যমগুলোর খবরে বলা হয়েছে, তাপমাত্রা বেড়ে যাওয়ায় প্রচণ্ড গরমে অসুস্থ হয়ে পড়ছে মানুষ। ঠাণ্ডা সুপেয় পানির চাহিদা বেড়ে গেছে বহুগুণ। শুধু সিডনিতেই পানির চাহিদা প্রায় ২০০ কোটি লিটার ছাড়িয়ে গেছে। এছাড়া অনেকে অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। দেশটির আবহাওয়াবিদদের ধারণা, দিন দিন জলবায়ু বদলে যাওয়ার কারণে ক্রমেই তাপমাত্রা বাড়ছে। এভাবে বাড়তে থাকলে আগামী কয়েক দশকের মধ্যে দেশটিতে তাপমাত্রা ৫০ ডিগ্রি সেলসিয়াস ছাড়িয়ে যেতে পারে।

লাল মরুর বুকে সাদা তুষার : প্রায় ৯০ লাখ বর্গকিলোমিটার আয়তনের পৃথিবীর বৃহত্তম ও উষ্ণতর মরুভূমির নাম সাহারা। সাহারা মরুভূমির প্রবেশদ্বার হিসেবে পরিচিত আলজেরিয়ার এইন সেফরা এলাকায় ৭ জানুয়ারি তুষারে ছেয়ে যায়। রোদে পোড়া মরুভূমির লাল তপ্ত বালুর বুকে তুষারের পুরু স্তর জমে যায়। কোথাও কোথাও সেই পুরুত্বের পরিমাণ ছিল ১৫ থেকে ১৬ ইঞ্চি। গরমে যেখানে ওই এলাকার স্বাভাবিক তাপমাত্রাই থাকে ৩৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস, সেখানে তুষারপাত দেখে অবাক হয়েছেন স্থানীয়রা। রয়টার্স জানিয়েছে, সাহারার বুকে তুষারপাতের ঘটনা এটাই প্রথম নয়। এবার নিয়ে গত ৪০ বছরে তৃতীয়বারের মতো লাল মরুভূমির বুকে তুষারের এ সাদা চাদর দেখা গেল। এর আগে ১৯৭৯ সালের ১৮ ফেব্রুয়ারি একই এলাকায় সবচেয়ে কম সময়ে মাত্র আধাঘণ্টার মধ্যে তুষারে ছেয়ে গিয়েছিল বিশ্বের উষ্ণতর এ মরুভূমিটি।