দুনিয়া কাঁপানো দলবদল

SHARE
Brazilian superstar Neymar poses with his new jersey during his official presentation at the Parc des Princes stadium on August 4, 2017 in Paris after agreeing a five-year contract following his world record 222 million euro ($260 million) transfer from Barcelona to Paris Saint Germain's (PSG). Paris Saint-Germain have signed Brazilian forward Neymar from Barcelona for a world-record transfer fee of 222 million euros (around $264 million), more than doubling the previous record. Neymar said he came to Paris Saint-Germain for a "bigger challenge" in his first public comments since arriving in the French capital. / AFP PHOTO / Lionel BONAVENTURE (Photo credit should read LIONEL BONAVENTURE/AFP/Getty Images)

স্পোর্টস ডেস্ক:

ক্লাব ফুটবলের ইতিহাসে সবচেয়ে দামি খেলোয়াড় এখন নেইমার। ২০০ মিলিয়ন পাউন্ড রিলিজ ক্লজে বার্সেলোনা থেকে তাকে দলে ভিড়িয়েছে প্যারিস সেইন্ট জার্মেই (পিএসজি)। নতুন ক্লাবটির সঙ্গে পাঁচ বছরের চুক্তি করেছেন নেইমার। ব্রাজিলের এ স্ট্রাইকারের দল বদল ও মূল্য নিয়ে ফুটবল বিশ্ব এখন সরগম। ক্লাব ফুটবলের ইতিহাসে যুগে যুগে এমন আরো অনেক ঘটনা ঘটেছে। সর্বশেষ ২০ বছর ক্লাব ফুটবলের দল বদলে আলোচনার ঝড় তুলেছে এমন ঘটনাগুলো নিচে তুলে ধরা হলো-

পল পগবা (জুভেন্টাস থেকে ম্যানইউ, ২০১৬)
নেইমারের আগে ক্লাব ফুটবলের সবচেয়ে বেশি অর্থের দল বদল ছিল পল পগবার। ২০১৬ সালের ৯ আগস্ট ইংলিশ ক্লাব ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডে সাইন করেন তিনি। ইতালির ক্লাব জুভেন্টাস থেকে তার ট্রান্সফার ছিল ৮৯ মিলিয়ন পাউন্ড। ফ্রান্সের এ মিডফিল্ডার এখনো ম্যানইউতে খেলে চলেছেন।

গ্যারেথ বেল (টটেনহ্যাম থেকে রিয়াল মাদ্রিদ, ২০১৩)
২০১৩ সালের ১লা সেপ্টেম্বর ইংলিশ ক্লাব টটেনহ্যাম থেকে স্প্যানিশ ক্লাব রিয়াল মাদ্রিদে নাম লেখান গ্যারেথ বেল। ওয়েলসের এ ফরোয়ার্ড সপ্তাহে ৩০০,০০০ পাউন্ড বেতন পাবেন বলে চুক্তি হয়। টটেনহ্যাম থেকে রিয়াল মাদ্রিদে তার ট্রান্সফার ফি ছিল ৮৫ মিলিয়ন পাউন্ড। যা তখন পর্যন্ত সবচেয়ে বেশি অর্থের চুক্তি।

ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো (ম্যানইউ থেকে রিয়াল মাদ্রিদ, ২০০৯)
ক্লাব ফুটবলে ট্রান্সফার ফি’তে সর্বপ্রথম দামে চমক দেখান ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো। ২০০৯ সালে ইংলিশ ক্লাব ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড থেকে তাকে ৮০মিলিয়ন পাউন্ডে দলে ভেড়ায় স্পেনের ক্লাব রিয়াল মাদ্রিদ। তখন ৮০ মিলিয়ন পাউন্ডে কোনো খেলোয়াড়কে দলে ভেড়ানো ছিল অনেকটা কল্পনার মতো। বিশ্বের সবচেয়ে দামী খেলোয়াড়ের খেতার দীর্ঘদিন ছিল তার দখলে। সেই রোনালদো এখন রিয়াল মাদ্রিদের কিংবদন্তিতে পরিণত হয়ে উঠেছেন।

কাকা (এসি মিলান থেকে রিয়াল মাদ্রিদ, ২০০৯)
বর্তমানে অখ্যাতঅনেক ডিফেন্ডারকেও ৫০ মিলিয়ন পাউন্ডে কেনা হচ্ছে। কিন্তু ২০০৯ সালের দিকে সেটা ছিল প্রায় অসম্ভব। ২০০৯ সালের ৯ জুন ইতালির ক্লাব এসি মিলান থেকে স্প্যানিশ ক্লাব রিয়াল মাদ্রিদে যোগ দেন ব্রাজিলিয়ান প্লে মেকার কাকা। তখন তার ট্রান্সফার ফি’টা ছিল চোখ কপালে তোলার মতো- ৫৬ মিলিয়ন পাউন্ড। তখনকার সেই বিশ্বরেকর্ড নিয়ে দীর্ঘদিন আলোচনা হয়। বছরে তার ৮ মিলিয়ন পাউন্ড বেতন অনেকে তখন বিশ্বাস করতে পারেনি।

জিনেদিন জিদান (জুভেন্টাস থেকে রিয়াল মাদ্রিদ, ২০০১)
রিয়াল মাদ্রিদের বর্তমান কোচ জিনেদিন জিদান। ২০০১ সালের ১০ জুলাই ইতালির ক্লাব জুভেন্টাস ছেড়ে যোগ দেন স্প্যানিশ ক্লাব রিয়াল মাদ্রিদে। রিয়ালে যোগ দিয়ে জিদান বলেন, ‘এটা অনেক অর্থ। আমার দাম হয়তো এত বেশি না। আমার হাতে এখন নতুন চ্যালেঞ্জ। সত্যিই আমি ভিন্ন কিছু করতে চাই।’ তখন তার মূল্য নিয়ে ছিল এমন মন্তব্য। অথচ জুভেন্টাস থেকে রিয়ালে জিদানের ট্রান্সফার ফি ছিল ৪৫ মিলিয়ন। যা এখনকার যুগে ডালভাত। জিদান রিয়াল থেকে বছরে পেতেন ৩.৫ মিলিয়ন পাউন্ড।

লুইস ফিগো (বার্সেলোনা তেকে রিয়াল মাদ্রিদ, ২০০০)
২০০০ সালে অসম্ভবকে সম্ভব করা এক কাজ করে ফেলেন ফ্লোরেন্তিনো পেরেজ। পর্তুগালের ফরোয়ার্ড লুইস ফিগো তখন খেলতেন বার্সেলোনায়। অন্যদিকে তখন রিয়াল মাদ্রিদের প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব নেন পেরেজ। জানিয়ে দেন, বার্সেলোনা থেকে ফিগোকে দলে ভেড়াবেন তিনি। চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী এই ক্লাব থেকে কোনো খেলোয়াড়কে রিয়ালে ভেড়ানো চাট্টিখানি কথা নয়। কিন্তু সেটাইকরে ছাড়েন পেরেজ। ওই বছর ২৪ জুলাই ৩৭ মিলিয়ন পাউন্ডে বার্সেলোনা থেকে রিয়ালে যোগ দেন লুইস ফিগো। ক্লাব ফুটবলের ইতিহাসে এখন পর্যন্ত দল বদলের আলোচিত ঘটনার মধ্যে উল্লেখযোগ্য এটি।

হারনান ক্রেসপো (পার্মা থেকে ল্যাজিও, ২০০০)
২০০০ সালের ১৩ জুলাই ইতালির ক্লাব পার্মা থেকে ল্যাজিওতে যোগ দেন হারনান ক্রেসপো। অথচ চুক্তিতে সাইন করার ২৪ ঘণ্টা আগেও আর্জেন্টাইন এ তারকা নিশ্চিত জানতেন না, কোথায় হতে যাচ্ছে তার ভবিষ্যত। একদিন আগে তিনি বলেন, ‘আমি খুবই অবাক। আমি কোথাও সাইন করিনি। কারো সঙ্গে কোনো ব্যাপারে কথাও হয়নি। জানি না, কী হতে যাচ্ছে।’ এমন মন্তব্যের ২৪ ঘণ্টা পর ৩৬ মিলিয়ন পাউন্ডে পার্মা থেকে ল্যাজিওতে চুক্তিবদ্ধ হন তিনি।

ক্রিস্টিয়ান ভিয়েরি (ল্যাজিও থেকে ইন্টার মিলান, ১৯৯৯)
হারনান ক্রেসপোর লাজিওতে যোগ দেয়ার আগের বছর আরেকটি ঘটনা ঘটে। ওই ল্যাজিও থেকে সেবার ইন্টার মিলানে যোগ দেন ইতালিয়ান স্ট্রাইকার ক্রিস্টিয়ান ভিয়েরি। ১৯৯৯ সালে ইউরোর ঠিক আগ মুহূর্তে তাকে ২৮ মিলিয়ন পাউন্ডে দলে ভেড়ায় ইন্টার মিলান।

ডেনিলসন (সাও পালো থেকে বেতিস, ১৯৯৮)
১৯৯৮ সালে অবাক করা এক কা- করে বসে স্পেনের ক্লাব রিয়াল বেতিস। খুব বেশি ধনী ক্লাব বলে তাদের নাম কখনোই ছিল না। কিন্তু সেবার কী মনে করে ব্রাজিলের সাও পাওলো থেকে একজন উইঙ্গারকে দলে ভেড়ায়। নাম ডেনিলসন। ব্রাজিলিয়ান খেলোয়াড় হিসেবে তখন তার পরিচিতি ছিল। কিন্তু নৈপুণ্য তেমন অহমারি ছিল না। সাও পালোতে তিনি ১৯৯৪ থেকে ১৯৯৮ সালের মধ্যে ৪৬ ম্যাচে করেন ৪ গোল। কিন্তু এই খেলোয়াড়টিতেই রিয়াল বেতিস দলে ভেড়ায় ২২ মিলিয়ন পাউন্ডে। ১৯৯৮ সালে কোনো খেলোয়াড় কেনার পেছনে ২২ মিলিয়ন পাউন্ড খরচ করার কথা কল্পনাই করা যেতো না। বিষয়টি নিয়ে তখন বেশ হাস্য কৌতুকও বের হয়। শুধু এখানেই থেমে থাকেনি বেতিস। ডেলিনসনের সঙ্গে ১১ বছরের চুক্তি করে তারা। বাই আউট ক্লজ করে ২৬০ মিলিয়ন পাউন্ড! চুক্তির পূর্ণ মেয়াদ শেষ করে ২০০৫ সালে ক্লাবটি ছাড়েন ডেনিলসন। তারপর খেলেছেন আরো আটটি ক্লাবে। কিন্তু তেমন সৌরভ ছড়াতে পারেননি তিনি।

রোনালদো (বার্সেলোনা থেকে ইন্টার মিলান, ১৯৯৭)
ব্রাজিলের ফেনোমেনন রোনালদো। ১৯৯৬ সালে যোগ দেন স্পেনের ক্লাব বার্সেলোনায়। প্রথম মৌসুমেই ক্লাবটির হয়ে দেখান দুর্দান্ত নৈপুণ্য। ৪৯ ম্যাচে করেন ৪৭ গোল। শূন্যে ভাসছেন তখন রোনালদো। ঠিক এই মুহূর্তে ইতালির ক্লাব ইন্টার মিলান তাকে প্রস্তাব দিয়ে বসে। রোনালদো বার্সেূলোনা ছেড়ে ইতালিতে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। বার্সেলোনা তাকে রাখার জন্য অনেক চেষ্টা করে। তারসঙ্গে ১০ বছরের চুক্তির প্রস্তাব দেয় কাতালানের ক্লাবটি। কিন্তু রোনালদোকে রাখতে পারেননি। বার্সেলোনায় এক মৌসুমে খেলে ১৯৯৭ সালের ২০ জুন তিনি নাম লেখান ইতালির ক্লাব ইন্টার মিলানে। বার্সেলোনায় দুর্দাান্ত নৈপুণ্য দেখানোর পর তখন তার ক্লাব ছাড়া নিয়ে অনেক আলোচনা হয়। বিষয়টি অনেকে রোনালদোর ভুল হিসেবে দেখেন তখন। ইন্টার মিলানে ২০০২ সাল পর্যন্ত ছিলেন তিনি। এরপর ফেরে স্পেনে ফেরেন রোনালদো। এবার যোগ দেন বার্সেলোনার চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী ক্লাব রিয়াল মাদ্রিদ। ২০০২ থেকে ২০০৭ পর্যন্ত সেখানেই খেলেন তিনি।