ছোট ফ্ল্যাটের অন্দরসজ্জা

SHARE

২৪আওয়ার ডেস্ক:  পৃথিবীর সবচেয়ে শান্তির আবাস হলো আমাদের ঘর। এই ঘর ছোট কিংবা বড় হতেই পারে। বর্তমানে শহুরে জীবনে সিঙ্গেল পরিবারগুলোর কাছে অবশ্য ছোট ফ্ল্যাটের কদর একটু বেশিই। কারণ এতে একদিনে যেমন অর্থের সাশ্রয় হয়, অন্যদিকে ঘর পরিস্কারের ঝামেলা থেকেও রেহাই মেলে। তবে ফ্ল্যাট ছোট হলেই যে তা দেখতে ভালো লাগবে কিংবা আপনার ঘরটা নিজের মনের মতো সাজাতে পারবেন না এমনটি নয়। বরং একটু মাথা খাটিয়ে ছিমছাপ সাজে ঘর সাজান। দেখবেন সাধ আর সাধ্যে সাজানো এই ঘরেই আপনার রুচিশীল ব্যক্তিত্ব ফুটে উঠবে।আধুনিক ফ্ল্যাটগুলো অনেক ছোট হওয়ায় এসব ঘরের ব্যাপ্তিও অনেক কম থাকে। তাই ছোট বাসার অন্দরসজ্জা নিয়ে আমাদের চিন্তার শেষ থাকে না। আমরা এখনও চিন্তা করি কোন ঘরে কোন আসবাব রাখব, কোথায় রাখলে সবচেয়ে বেশি ভালো লাগবে, কেমন আসবাব কিনলে ঘরের জায়গা ভালো দেখাবে, দেয়ালে কেমন রঙ হলে ভালো হয়, ঘর সাজানির জন্য আরও কি কি কিনতে হবে ইত্যাদি। সর্বোপরি আমাদের সমস্ত চিন্তাজুড়েই থাকে কীভাবে ছোট এই ঘরটাকে আর একটু সুন্দর করে সাজানো যায়। ঘরটা আর একটু বড় দেখানো যায়। এমন হাজারো প্রশ্নের সমাহারে ঘর সাজাতে গিয়ে আমরা  প্রায়ই খেই হারিয়ে ফেলি।

এক্ষেত্রে বিশেষজ্ঞরা বলেন, আপনার ছোট ফ্ল্যাটটি সাজাতে পছন্দ, চাহিদা, রুচিশীলতা এবং স্বক্ষমতা- এই চারটি বিষয়ের সমন্বয় ঘটান। দেখবেন আপনার সাজানো ঘর শুধু দেখতেই সুন্দর লাগবে না, একইসঙ্গে ছোট ঘরগুলো অনেক বড় দেখাবে। এক্ষেত্রে সাজসজ্জার কিছু টিপস দিয়েছেন তারা। সেগুলো হলো-আলো ও বাতাসের আনাগোনাআলো বাতাসের সঠিক সঞ্ছালন ঘরের অভ্যন্তরীণ পরিবেশের সুস্বাস্থ্য নিশ্চিত করে। তাই আলো বাতাসের ব্যাপারটি শুধু বড় ফ্ল্যাটের জন্য নয়, বরং ছোট ঘরের জন্যও আবশ্যক। এক্ষেত্রে ঘরে আলো বাতাস প্রবেশ করার রাস্তায় হাল্কা রঙের পর্দা ব্যবহার করুন। তবে এসব স্থানে কখনই ভারী আসবাব রাখবেন না। দেখবেন, ঘরের ভেতরে আলো-বাতাসের আনাগোনা ঠিক থাকলে আপনার মনটাও সবসময় প্রফুল্ল থাকবে।

পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতাএকটি প্রবাদ প্রচলিত আছে, মানুষের বাসার রান্নাঘর এবং বাথরুম, এই দুটি জায়গার অবস্থা দেখলেই নাকি তার রুচি এবং পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা নিয়ে ধারণা পাওয়া যায়। মনে রাখবেন, সাজানোটা অবশ্যই রুচির ব্যাপার। কিন্তু কখনই পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা নিয়ে গাফলতি করা উচিত নয়। বিশেষ করে ছোট ফ্ল্যাটের ক্ষেত্রে, কখনো এটা নিয়ে হেলা ফেলা করা ঠিক না। শুধু বাথরুম বা কিচেনই নয়, পুরো ঘরের সুস্বাস্থ্য নিশ্চিতে পরিচ্ছন্নতার বিকল্প নেই।

রঙের কারসাজিছোট ফ্ল্যাটের ক্ষেত্রে দেয়াল বা ফার্নিচারের রঙ একটি বিশাল অঞ্ছল জুড়ে থাকে। এক্ষেত্রে খেয়াল রাখবেন যেন আসবাবপত্রের রঙ হালকা হয়। এতে দম বন্ধ করার ব্যাপারটি আর থাকে না। তবে দেয়ালের রঙ হিসেবে উজ্জ্বল কিছু ব্যবহার করেও দেখতে পারেন।

আসবাবে বৈচিত্র্য ও আকারছোট ফ্ল্যাটের ঘরগুলো সাজাতে আসবাবপত্রে বৈচিত্র্য নিয়ে আসুন। সকল ফার্নিচার একই উচ্চতার কিনবেন না। এতে ছোট ফ্ল্যাট আরো ছোট দেখাবে। তাই কিছুটা নিচু উচ্চতার আসবাব ব্যবহার করে দেখতে পারেন। এতেও ঘর বড় দেখাবে।

সবুজের সমারোহ এবং কৃত্রিম ফুলসবুজ বা রঙ বেরঙ্গের গাছপালা দিয়ে ঘরে সজিবতা আনতে পারেন। যদি হাল্কা আসবাবপত্রের পাশে এগুলো সুন্দর করে সাজিয়ে রাখা যায় তাহলে ঘর অনেক প্রাণবন্ত দেখাবে। চাইলে ঘর সাজাতে কৃত্রিম ফুলও ব্যবহার করতে পারেন। এতে ঘর সুন্দর লাগবে।

ফ্লোরে টাইলসের ব্যবহারবড় ফ্ল্যাট সাজাতে বিভিন্ন প্যাটার্নের টাইলস ব্যবহার করা উত্তম। তবে ছোট ঘরের জন্য সাদা রঙের টাইলসই সবচেয়ে ভালো। যদিও এটি খুব সহজেই ময়লা হয়, তারপরও এটি ভালো। কারণ সাদা টাইলস ঘরের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি করার পাশাপাশি ঘরকেও বড় দেখাতে সাহায্য করে। তবে বাথরুম এবং রান্নাঘরে অন্য রঙের টাইলস ব্যবহার করে দেখতে পারেন। 

ভারি আসবাবপত্রের ভাবনাছোট ঘরে যত কম পারা যায়, তত কম ভারী আসবাব ব্যবহার করা উচিত। ভারি ফার্নিচার একাধারে বেশি জায়গা নেয়। এতে আলো বাতাস চলাচলে বাঁধা পায় এবং ঘরের সৌন্দর্য নষ্ট হয়। আবার ভারি ডিজাইনের আসবাব ছোট রুমের আকার আরো ছোট করে দেয়। তাই আইরন বা পারটেক্সের তৈরি আসবাব বানিয়ে নিতে পারেন। এতে একদিকে যেমন খরচ কম পরবে, অন্যদিকে ঘরের আকারও বড় দেখাবে।

দেয়ালের সাজছোট ঘরের দেয়ালে সাদা রঙ ব্যবহার করা উত্তম। সাদা টাইলসের পাশাপাশি সাদা দেয়াল ঘরকে বিশাল দেখাবে। তখন দেখতেও ভালো লাগবে। তবে দেয়ালে বৈচিত্র্য আনতে চাইলে নানা রঙের ওয়াল পেপার ব্যবহার করতে পারেন। এক্ষেত্রে ওয়াল পেপার অবশ্যই লম্বা লম্বি ভাবে লাগাবেন। চাইলে যে কোন ছবির ফ্রেমও দেয়ালে লম্বালম্বি ভাবে রাখতে পারেন।

কৃত্রিম আলোর ব্যবহারঘরে পর্যাপ্ত আলো না ঢুকলে কৃত্রিম আলোর ব্যবস্থা করুন। বর্তমানে ঘরের সাইজ অনুযায়ী নানা রঙের এবং বাহারের লাইট পাওয়া যায়। ড্রয়িং রুমে সঠিক জায়গায় লাইটটি রাখুন। চাইলে কর্নারে ল্যাম্প ও রাখতে পারেন। রাতে এটি আপনার ঘরকে আলোয় ভরিয়ে দিবে। 

আয়না রাখাছোট ঘরে আয়না জিনিসটা খুব গুরুত্ব বহন করে। চেষ্টা করুন ডাইনিং বা ড্রয়িং রুমের একপাশে সম্পূর্ণ আয়না দিতে। এতে রুমের আকার বিশাল দেখাবে আর ফ্ল্যাটও ছোট মনে হবে না। দরজা বা জানলায় থাই গ্লাস ব্যবহার করুন। এতেও খরচ কম হবে।

পরিপাটি ডাইনিং এবং ড্রয়িং রুমসবার প্রথমে ড্রয়িং রুমের আসবাব পছন্দ করুন। বেতের চেয়ার বা সোফা কিনে দেখতে পারেন ছোট ফ্ল্যাটের জন্য। এছাড়াও কর্নার গুলোয় তাকের ব্যবস্থা করে বই রাখতে পারেন। দারুণ দেখাবে আর ঘরের বাসিন্দার সুন্দর রুচিরও বহি:প্রকাশ ঘটাবে।  আবার আলাদা কোন ডাইনিং রুম না থাকলে, বসার ঘরের এক কোনায় ৪ ফিট বাই ৩ ফিট মাপের ডাইনিং টেবিল রেখে দেখতে পারেন। চারজন বসতে পারলেই হলো। তবে চেয়ারগুলো ছিপছাম এবং স্লিম হলেই ভালো হয়। সর্বোপরি আপনার ব্যক্তিত্ব এবং রূচির সঙ্গে মিল রেখেই ঘর সাজান। দেখবেন আপনার ঘরও হয়ে উঠবে আকর্ষণীয় এবং নান্দনিক।