খেলাপি ঋণ আদায়ে ব্যর্থ হলে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা

SHARE

২৪আওয়ার রিপোর্ট  :  দেশের ব্যাংকিং খাতে এক বছরে খেলাপি ঋণ ১০ হাজার কোটি টাকা বেড়ে যাওয়ায় বাংলাদেশ ব্যাংক গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। বেশির ভাগ ব্যাংকের খেলাপি ঋণ আদায়ের হার সন্তোষজনক না হওয়ায় একই সঙ্গে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়াও জানিয়েছে। সোমবার রাষ্ট্রায়ত্ত ও দেশি-বিদেশি বেসরকারি ২০টি ব্যাংকের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে অনুষ্ঠিত এক রুদ্ধদ্বার বৈঠকে এ বিষয়টি উঠে আসে। টানা দু’ঘণ্টার এ বৈঠক শেষে ব্যাংকগুলোকে বাংলাদেশ ব্যাংকের পক্ষ থেকে সাফ জানিয়ে দেয়া হয়, খেলাপি ঋণ আদায়ে ব্যর্থ হলে কঠোর শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়া হবে।
প্রসঙ্গত, ২০১৫ সালে খেলাপি ঋণ ছিল ৫২ হাজার কোটি টাকা। ২০১৬ সালে তা গিয়ে দাঁড়িয়েছে ৬২ হাজার কোটি টাকায়।
বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর এসকে সুর চৌধুরী। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ঊর্ধ্বতন এ কর্মকর্তা ব্যাংকিং খাতের ঋণ বিতরণ, আদায় ও খেলাপির সার্বিক বিষয় দেখভালের দায়িত্বে আছেন। দেশে অব্যাহতভাবে খেলাপি ঋণের পরিমাণ বেড়ে যাওয়াসহ ঋণ বিতরণে ভয়াবহ সব জালিয়াতি ও দুর্নীতির খবর গণমাধ্যমে ফলাও করে প্রকাশ হওয়ায় তিনি জরুরি ভিত্তিতে এ বৈঠক আহবান করেন।
বৈঠকে রাষ্ট্রায়ত্ত রূপালী ব্যাংক, বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক এবং রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংকের এমডি ও ডিএমডি ছাড়াও বেসরকারি খাতের বেশ কয়েকটি ব্যাংকের এ সারির কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। ব্যাংকগুলোর মধ্যে রয়েছে ফারমার্স ব্যাংক, প্রিমিয়ার ব্যাংক, ডাচ্-বাংলা ব্যাংক, ব্যাংক এশিয়া, এনসিসি ব্যাংক, উত্তরা ব্যাংক, এবি ব্যাংক, সিটি ব্যাংক, যমুনা ব্যাংক, এক্সিম ব্যাংক, আইসিবি ইসলামিক ব্যাংক, বিদেশি খাতের স্টেট ব্যাংক অব ইন্ডিয়া, কমার্শিয়াল ব্যাংক অব সিলন ও উরি ব্যাংক প্রভৃতি। সূত্র জানায়, আরও যেসব ব্যাংকের খেলাপি ঋণ আদায় সন্তোষজনক নয়, তাদের সঙ্গেও ধারাবাহিকভাবে বৈঠক করবে বাংলাদেশ ব্যাংক।

বৈঠক শেষে এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর এসকে সুর চৌধুরী বলেন, অস্তিত্বহীন প্রতিষ্ঠানকে দেয়া ঋণ আদায়ে কোনো ছাড় দেয়া হবে না। এর ফলে প্রতি বছর খেলাপি ঋণ বাড়ছে। এভাবে চলতে থাকলে ব্যাংকগুলো মূলধন ঘাটতিতে পড়বে। এছাড়া ক্যামেলস রেটিং (ব্যাংক ভালো না মন্দ তা পরিমাপের একটি প্রক্রিয়া বা পদ্ধতি) খারাপ হবে। তিনি বলেন, খেলাপি ঋণ আদায়ে ক্রমাগত অবনতি ঘটলে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। এনসিসি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) গোলাম হাফিজ যুগান্তরকে বলেন, ব্যাংকগুলোর খেলাপি ঋণ আদায়ের হার সন্তোষজনক ছিল না। বিষয়টি নিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংক উদ্বেগ জানিয়েছে। পাশাপাশি বেশ সতর্কও করা হয়েছে। এছাড়া ঋণ আদায়ে বিভিন্ন নির্দেশনা দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। ফারমার্স ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) একেএম শামীম যুগান্তরকে বলেন, দেশের ব্যাংকিং খাতে এক বছরে খেলাপি ঋণ ১০ হাজার কোটি টাকা বেড়ে যাওয়ায় বাংলাদেশ ব্যাংক উদ্বেগ জানিয়েছে। শাখা পর্যায়ে ঋণ আদায়ে কড়াকড়ি আরোপ করতে বলা হয়েছে।

রূপালী ব্যাংকের উপ-ব্যবস্থাপনা পরিচালক (ডিএমডি) আবু নাসের চৌধুরী যুগান্তরকে বলেন, মন্দ ঋণ আদায় প্রক্রিয়া আরও জোরদার করতে হবে। তাদের এমন নির্দেশনা দেয়া হয়। তারাও বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে নিয়েছেন।

ব্যাংক এশিয়ার ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) মো. আরফান আলী যুগান্তরকে বলেন, খেলাপি ঋণ আদায়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের পক্ষ থেকে চাপ সৃষ্টি করা হয়েছে।

এদিকে খেলাপি ঋণ সংক্রান্ত বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ প্রতিবেদন অনুযায়ী রাষ্ট্রায়ত্ত রূপালী ব্যাংকের খেলাপি ঋণ ২ হাজার ৭৯৪ কোটি টাকা। এর মধ্যে আদায় অনিশ্চিত ২ হাজার ৪৫৭ কোটি টাকা। বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকের খেলাপি ৪ হাজার ৬৭৯ কোটি টাকা। আদায় অনিশ্চিত ৩ হাজার ৬৮১ কোটি টাকা। রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংকের খেলাপি ১ হাজার ৫ কোটি টাকা। আদায় অনিশ্চিত ৭০৯ কোটি টাকা। এছাড়া ফারমার্স ব্যাংকের খেলাপি ঋণ ১৭১ কোটি টাকা। এর মধ্যে আদায় অনিশ্চিত ৯৬ কোটি টাকা। প্রিমিয়ার ব্যাংকের খেলাপি ৪৪৪ কোটি টাকা। আদায় অনিশ্চিত ৪১৩ কোটি টাকা। ব্যাংক এশিয়ার খেলাপি ৮০৫ কোটি টাকা। আদায় অনিশ্চিত ৭৪৪ কোটি টাকা। এনসিসি ব্যাংকের খেলাপি ৬৮২ কোটি টাকা। আদায় অনিশ্চিত ৫৫৩ কোটি টাকা। যমুনা ব্যাংকের খেলাপি ৪০৫ কোটি টাকা। আদায় অনিশ্চিত ৩৭৩ কোটি টাকা। সিটি ব্যাংকের খেলাপি ১ হাজার ৫৪ কোটি টাকা। আদায় অনিশ্চিত ৯২০ কোটি টাকা। ডাচ্-বাংলা ব্যাংকের খেলাপি ৮৬৩ কোটি টাকা। আদায় অনিশ্চিত ৮১৪ কোটি টাকা। এবি ব্যাংকের খেলাপি ৬৬৬ কোটি টাকা। আদায় অনিশ্চিত ৫৫৯ কোটি টাকা। আইসিবি ইসলামিক ব্যাংকের খেলাপি ৬৭২ কোটি টাকা। আদায় অনিশ্চিত ৬৬২ কোটি টাকা। উত্তরা ব্যাংকের খেলাপি ৬২৬ কোটি টাকা। আদায় অনিশ্চিত ৪৪৫ কোটি টাকা। এক্সিম ব্যাংকের খেলাপি ১ হাজার ১১৯ কোটি টাকা। এর মধ্যে আদায় অনিশ্চিত ১ হাজার ২৩ কোটি টাকা।

অপরদিকে বিদেশি ব্যাংকের মধ্যে স্টেট ব্যাংক অব ইন্ডিয়ার খেলাপি ঋণ ৫৭ কোটি টাকা। আদায় অনিশ্চিত ৪৪ কোটি টাকা। কমার্শিয়াল ব্যাংক অব সিলনের খেলাপি ৫০ কোটি টাকা। এ ব্যাংকেও আদায় অনিশ্চিত ৪৭ কোটি টাকা এবং উরি ব্যাংকের খেলাপি প্রায় ৩১ কোটি টাকা। আদায় না হওয়ার হিসাবে আছে ২৯ কোটি টাকা।