বাংলাদেশে কয়েক লাখ ফেসবুক অ্যাকাউন্ট নিষ্ক্রিয়

SHARE

২৪আওয়ার ডেস্ক :   বাংলাদেশে গত ৩ দিনে কয়েক লাখ ফেসবুক অ্যাকাউন্ট বন্ধ ও নিষ্ক্রিয় হয়ে গেছে। এর ফলে বাংলাদেশ থেকে পরিচালিত বিপুলসংখ্যক

ফেসবুক লাইক পেজের লাইক ও ফলোয়ার দুইই কমে গেছে। এর শিকার হয়েছে বিভিন্ন গণমাধ্যম প্রতিষ্ঠান, সংগীতশিল্পী, গ্লামার জগতের তারকা এবং ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানের ফেসবুক পেজ। হঠাৎ তাদের ফেসবুক পেজে লাইক ও ফলোয়ার অস্বাভাবিকভাবে কমে গেছে। ফেসবুক ব্যবহারকারীর সংখ্যার দিক থেকে ঢাকা বিশ্বের মধ্যে দ্বিতীয়।

বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠিত এক সংগীতশিল্পী আমাদের সময়কে বলেছেন, তার ফ্যান পেজে হঠাৎ একসঙ্গে ৩৫ হাজার লাইক ও ফলোয়ার কমে গেছে। কেন এমনটি হলো এ প্রশ্ন তার।

একটি অনলাইন নিউজ পোর্টালের সম্পাদক বলেছেন, তার অনলাইনের ফেসবুক পেজে গত ১৪ এপ্রিল হঠাৎ একসঙ্গে ৯১৮টি আনলাইক হয়। যেখানে গড়ে প্রতিদিন আনলাইক হতো ১০ থেকে সর্বোচ্চ ৩০। সেখানে একসঙ্গে ৯১৮টি আনলাইক তাকে ভাবনায় ফেলে। ১৫ এপ্রিল থেকে আবার আনলাইক হওয়ার গড় হার আগের মতো স্বাভাবিক।

একটি জাতীয় দৈনিকের সাংবাদিক আরিফ মামুন বলেন, গত ১৫ এপ্রিল হঠাৎ তার ফেসবুক অ্যাকাউন্ট ডিজেবল (নিষ্ক্রিয়) করা হয়। শুধু তার একার নয়, তার পত্রিকার আরও ৪ সাংবাদিকের ফেসবুক অ্যাকাউন্ট নিষ্ক্রিয় হয়ে গেছে। তারা এখন আর নিজেদের অ্যাকাউন্টে ঢুকতে পারছেন না। পরবর্তীকালে মামুনসহ তার অপর ৪ সহকর্মী ফেসবুক কর্তৃপক্ষের কাছে অ্যাকাউন্টের বিপরীতে থাকা তাদের সব পরিচয়পত্র শনাক্তকরণ সংক্রান্ত ডকুমেন্ট ই-মেইল করেন ফেসবুক কর্তৃপক্ষের কাছে। তারা ফিরতি বার্তায় বলেন ‘অপেক্ষায় থাকুন।’

আইসিটি বিশেষজ্ঞ এসএম আলতাফ হোসেন আমাদের সময়কে বলেন, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের ক্ষেত্রে ফেসবুক এখন বড় একটি মাধ্যম। শিক্ষাদীক্ষা থেকে শুরু করে নানা ক্ষেত্রে এর উপকারী দিক রয়েছে। পক্ষান্তরে এর অপকারী দিকও আছে। আমরা জানি ফেসবুকের কারণে কত মা-বোনের চোখের জল ঝরেছে। কিছু খারাপ প্রকৃতির মানুষের কারণে তাদের এটা হয়েছে। আমরা জানি ফেসবুক হলো একটি স্বায়ত্তশাসিত ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান। এর মাধ্যমে তারা বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার বাণিজ্য করছে। কিন্তু হুট করে যে কোনো অ্যাকাউন্ট নিষ্ক্রিয় বা বন্ধ করার আগে ফেসবুক কর্তৃপক্ষের নোটিশ করা উচিত। একটি সময়সীমা বেঁধে দিয়ে তারা আইডি বিষয়ে পরবর্তী পদক্ষেপ নিতে পারত। তাদের এই পদক্ষেপের কারণে কিছু খারাপ মানুষের সঙ্গে ভালো মানুষও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তবে ফেসবুকের অপব্যবহার বন্ধে এ ধরনের পদক্ষেপ গ্রহণ করাটা দরকার বলে আমি মনে করি। কিন্তু যে প্রক্রিয়ায় তারা কাজটি করছে তা মনে হয় যথাযথ হচ্ছে না।

তিনি বলেন, আপনি ফেসবুক ব্যবহার করবেন কিন্তু নিয়মের মধ্যে থাকবেন না তা হতে পারে না। অ্যাকাউন্ট খোলার পর আমরা এর রক্ষণাবেক্ষণ যদি ঠিকমতো করতে না পারি এ দায় কিন্তু আমাদের। যাদের অ্যাকাউন্ট নিষ্ক্রিয় হয়ে গেছে বা বন্ধ হয়ে গেছে তাদের উচিত ঠা-া মাথায় চিন্তা করা আপনি কোনো ভুল করেছেন কিনা। সঠিক জন্মতারিখ লিখেছেন কিনা বা নকল ফোন নম্বর বা ইমেইল নম্বর ব্যবহার করেছেন কিনা। এ ব্যাপারে হোমওয়ার্ক করে আপনার পরিচয় সংক্রান্ত যাবতীয় ডুকমেন্ট যারা ফেসবুক সম্পর্কে বোঝেন তাদের সহায়তা নিয়ে ফেসবুক কর্তৃপক্ষের কাছে দাখিল করা।

বার্তা সংস্থা রয়টার্সের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, অ্যাকাউন্টের আচরণ পর্যবেক্ষণ করে ভুয়া অ্যাকাউন্ট বন্ধের কার্যক্রম শুরু করেছে ফেসবুক কর্তৃপক্ষ। তারা আচরণ বিশ্লেষণ করে সন্দেহজনক মনে হলে এবং তদন্তের পর ভুয়া আইডি প্রমাণিত হলে সেই অ্যাকাউন্ট স্থায়ীভাবে বন্ধ করে দেবে।

দীর্ঘদিন ধরে ভুয়া অ্যাকাউন্টের কারণে ফেসবুক সমালোচিত হয়ে আসছে। এই সমালোচনা এড়াতে এবং নিরাপত্তা ব্যবস্থা আরও উন্নত করতে ফেসবুক কর্তৃপক্ষ ভুয়া অ্যাকাউন্ট শনাক্ত ও বন্ধের পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে।

ভুয়া অ্যাকাউন্ট সম্পর্কে ফেসবুকের সুরক্ষা টিমের সদস্য শবনম শেখ এক ব্লগ পোস্টে বলেছেন, ফেসবুকে যখন কেউ নিজের প্রতিনিধিত্ব করেন, তখন তিনি বাস্তব জীবনের মতো দায়িত্বশীলতা দেখান। ভুয়া অ্যাকাউন্টে এ নিয়ম মানা হয় না। এখান থেকে স্প্যাম ছড়ায়। এ রকম ভুয়া অ্যাকাউন্ট পেলে তা বন্ধ করা হবে এবং অ্যাকাউন্টধারীকে তাদের পরিচয় শনাক্ত করতে বলা হবে। এতে করে দুষ্কৃতকারীরা ধরা পড়বে। ফেসবুক কর্তৃপক্ষ বলছে, পরিবর্তন আনলে অনিশ্চিত উৎস থেকে ছড়ানো তথ্য, স্প্যাম, ভুয়া খবর ঠেকানো যাবে। প্রতারণামূলক বা ছদ্মবেশী অ্যাকাউন্টগুলোকে কমানো যাবে।

পুলিশ সদর দপ্তরের এক কর্মকর্তা আমাদের সময়কে বলেছেন, ফেসবুকে ভুয়া আইডি খুলে নানা ধরনের অপরাধমূলক কর্মকা- পরিচালনা করা হচ্ছে। এমনকি সাম্প্রতিক সময়ে ফেসবুকের মাধ্যমে জঙ্গিবাদ বিস্তারলাভ করছে। নতুন সদস্য সংগ্রহ করতে বিভিন্ন জঙ্গিগোষ্ঠী ফেসবুক ব্যবহার করে থাকে। আবার নিজেদের মধ্যে তথ্য আদান-প্রদানে বিভিন্ন অ্যাপসের পাশাপাশি ফেসবুক ব্যবহার করছে জঙ্গিরা।