হাইকোর্টে ডিএমপি কমিশনারের নিঃশর্ত ক্ষমা প্রার্থনা

SHARE

রাজধানীর আজিমপুর কবরস্থানের সীমানা প্রাচীর পুনঃনির্মাণে সহায়তা না করার বিষয়ে হাইকোর্টে ব্যাখ্যা দিলেন ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি) কমিশনার বেনজির আহমেদ।

বুধবার বিচারপতি ফারাহ মাহবুব ও বিচারপতি কাজী মো. ইজারুল হক আকন্দের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চে বেনজিরসহ তিন পুলিশ কর্মকর্তা হাজির হয়ে এ বিষয়ে ব্যাখ্যা দেন।
image_97691_0
আদালতে ডিএমপির পক্ষে শুনানি করেন তানজিবুল আলম। রাষ্ট্রপক্ষে উপস্থিত ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল আমাতুল করিম। অপরদিকে আবেদনের পক্ষে ছিলেন আসাদ উল্লাহ।

মামলার শুনানির শুরুতে আইনজীবী তানজিবুল আলম দাঁড়ালে তাকে বসিয়ে দিয়ে আদালত ডিএমপি কমিশনারকে সামনে আসতে বলেন। তখন আদালত তাকে বলেন, আপনি তো বিখ্যাত ব্যক্তিত্বসম্পন্ন মানুষ। আপনাকে প্রায়ই টিভিতে দেখি। আপনি জানেন এ মামলার বিষয়বস্তু কী ছিল। এরপর আদালত মামলার সম্পূর্ণ মামলার ঘটনা বর্ণনা করেন।

আদালত বলেন, কবরের সীমানা পুনঃনির্মানের কী সমস্যা ছিল, তা জানতে আমরা আদেশ দিয়েছিলাম।

তখন বেনজির আহমদ বলেন, মামলার পুরো বিষয়টাকে আমরা স্টাডি করেছি। আদালতের আদেশ সবাইকে মানতে হবে। সিটি করপোরেশন এ বিষয়ে আমাদেরকে ১৬টি চিঠি দিয়েছিল। এর মধ্যে কয়েকটিতে বলা হয়েছে, সহায়তা করার জন্য, কয়েকটিতে বলা হয়েছে ফোর্স দেয়ার জন্য। তবে কবে কখন করতে হবে তার দিনক্ষণ ঠিক করে বলা হয়নি।

বেনজির বলেন, গত বছর দেশে ক্রান্তিকাল ছিল। প্রায় দিনই হত্যা, অবরোধের মধ্য দিয়ে গেছে। আমরা এগুলো নিয়েই ব্যস্ত ছিলাম। এর মধ্যেও গত ২৯ নভেম্বরের আগে ৯০ শতাংশ দেয়াল ভাঙা হয়েছিল। তারপর গত ১ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত কোনো চিঠি দেয়া হয়নি।

এরপর আদালতের আদেশ যাওয়ার পর গত ২ সেপ্টেম্বর থেকে দেয়াল পুনঃনির্মাণের কাজ শুরু হয়েছে। কাজের কিছু ছবি আদালতকে দেখান বেনজির আহমেদ।

“এতকিছুর পরও যদি আমাদের কোনো ক্রটি থাকে, তাহলে আমরা নিঃশর্ত ক্ষমা চাচ্ছি” বলেন ডিএমপি কমিশনার।

আদালত বলেন, কাজ শেষ না হওয়া পর্যন্ত আপনি নিয়মিত তদারকি করবেন। আপনি খেয়াল রাখবেন যেন কেউ কবরস্থানের পবিত্রতা নষ্ট না করতে পারে। আপনার প্রতি এটাই আমাদের আদেশ।

ডিএমপি কমিশনার বলেন, আদালতের আদেশ অবশ্যই পালন করা হবে।

আজিমপুর কবরস্থানের সীমানা প্রাচীর পুনঃনির্মাণে সহায়তা না করার বিষয়ে গত ১ সেপ্টেম্বর ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি) কমিশনার বেনজির আহমেদ, লালবাগ জোনের উপ-কমিশনার (ডিসি) ও লালবাগ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে (ওসি) তলব করে হাইকোর্ট।

আদালত সূত্র জানায়, ২০১২ সালে কবরস্থানটির সীমানা প্রাচীর ভেঙে ফেলে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন (ডিসিসি) একটি রাস্তা নির্মাণের উদ্যোগ নেয়। কিন্তু রাস্তাটি জাকির হোসেন নামের এক ব্যক্তির বাবার কবরের ওপর দিয়ে তৈরি হওয়ায়, প্রাচীর ভেঙে রাস্তা নির্মাণের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে হাইকোর্টে রিট করা হয়।

জাকির হোসেনের এই রিট আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে গত বছরের জুলাই মাসে হাইকোর্ট কবরস্থানের ভেতর দিয়ে রাস্তা নির্মাণকে অবৈধ ঘোষণা করেন। পাশাপাশি রায়ে অতিদ্রুত ওই সীমনা প্রাচীর পুনঃনির্মাণের আদেশ দেন। কিন্তু রায় বাস্তবায়ন না হওয়ায় পরবর্তী সময়ে রিটকারী আদালত অবমাননার মামলা দায়ের করেন। এরপর সীমানা প্রাচীর নির্মাণের উদ্যোগ নিলে ডিসিসির কর্মকর্তা-কর্মচারীরা এলাকাবাসীর তোপের মুখে পড়ে। এ অবস্থায় ডিসিসির পক্ষ থেকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সহযোগিতা দেয়ার নির্দেশনা চাওয়া হয় আদালতের কাছে।

হাইকোর্ট গত বছরের ১ আগস্ট যাতে কোনো ধরনের বাধা-বিপত্তি ছাড়াই ওই সীমানা প্রাচীর নির্মাণ করা যায় সে জন্য ডিএমপি কমিশনারকে পর্যাপ্তসংখ্যক পুলিশ সদস্যকে নিয়োজিত রাখার নির্দেশ দেন। একই সঙ্গে সীমানা প্রাচীর নির্মাণের পরেও যেকোনো ধরনের অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা এড়াতে তিন মাস পুলিশ সদস্যদের সেখানে নিয়োজিত রাখার নির্দেশ দেন।

এই নির্দেশের পরও ডিএমপির পক্ষ থেকে ডিসিসিকে কোনো ধরনের সহযোগিতা না করায় বিষয়টি হাইকোর্টকে অবহিত করা হয়। তারপর আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে তাদেরকে ব্যাখ্যা দেয়ার জন্য তলব করা হয়।