ইডেনে আজ মহারণ

SHARE

টি–টোয়েন্টি বিশ্বকাপ: মুখোমুখি ভারত-পাকিস্তান
eden-gardens_650_041114065113
একটা দল ভারত। আরেকটি পাকিস্তান।
একটা দল বিশ্বকাপে কখনো অন্য দলের কাছে হারেনি।
আরেকটা দল ইডেন গার্ডেনে কখনো ওভার-নির্দিষ্ট ম্যাচে হারেনি।
আজ কোনো একটা বদলাবে।
বিশ্বকাপে ভারত-পাকিস্তান ক্রিকেটের এক অনন্ত রহস্য। ৫০ ওভারের বিশ্বকাপে ৬ বার দেখা হয়েছে। টি-টোয়েন্টিতে ৪ বার। দল বদলেছে, ভেন্যু বদলেছে, খেলাটাও কি বদলায়নি! বদলায়নি শুধু একটা ব্যাপারই—প্রতিবারই শেষ হাসি ভারতের মুখে। প্রথম টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে গ্রুপ ম্যাচটা ‘টাই’ হয়েছিল। সেটির বোওল-আউটেও জিতেছিল সেই ভারতই!
এবার ইতিহাসের আরেকটা পৃষ্ঠা। ইডেন গার্ডেনে দুদলের টি-টোয়েন্টি এই প্রথম। ইতিহাসের এই পৃষ্ঠাটা তাই সাদা। সেটি ওলটালেই ওয়ানডে। যেখানে দেখতে পাবেন, ইডেনে ভারত-পাকিস্তান ৪টি ম্যাচেই জিতেছে পাকিস্তান।
আজ কোনো একটা বদলাবেই।
এত ইতিহাস-ইতিহাস করছি কেন? এই দুই দেশের খেলায় ইতিহাসই কি সবচেয়ে বড় হয়ে ওঠে না! সেটি তো শুধু খেলার সীমায় আটকে থাকা ইতিহাস নয়। একসময়কার অভিন্ন দেশ থেকে প্রতিবেশী দুই দেশ। ভালোবাসা-বৈরিতা-সম্প্রীতি-হিংসা সব মিলিয়ে এমন এক আশ্চর্য সম্পর্ক যে, ‘চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী’ কথাটাকেও খুব জোলো শোনায়। খেলার মূলমন্ত্র ভুলে গিয়ে ‘চিরশত্রু’ বললে বরং কাছাকাছি কিছু হয়।
এই ম্যাচের আগে সংবাদ সম্মেলনে অবধারিতভাবেই প্রশ্নটা উঠবে এবং দুই দল থেকেই বলা হবে, এটা খেলা, এটাকে খেলার মতোই দেখা উচিত। কী আশ্চর্য, ভারতীয় দলের প্রতিনিধি হয়ে আসা রবিচন্দ্রন অশ্বিন একদমই সেই পথে হাঁটলেন না। সোজা বলে দিলেন, এটা শুধুই খেলা নয়, ‘সীমান্তযুদ্ধ’!
খেলোয়াড়েরা কি এমনই ভাবেন? তাঁরা না ভাবলে কী হবে, দুই দেশের মানুষ যে ম্যাচটিকে এভাবেই দেখে। সেই আবেগ এমনই তীব্র যে, এর আঁচ খেলোয়াড়দের ওপর না পড়ে পারেই না। দুই দেশের প্রতিদ্বন্দ্বিতা নিয়ে প্রশ্নটা এক ব্রিটিশ সাংবাদিক করলেন বলেই কি না অশ্বিন বলে দিলেন, ‘এই ম্যাচ কত বড়? ঠিক করে বলা কঠিন। তবে এটা বলতে পারি, অ্যাশেজের চেয়েও বড়।’
এই ম্যাচ চিরদিনই বড় ছিল। এবার আরও বড় হয়ে উঠছে পরিস্থিতির কারণে। গ্রুপ পর্বের খেলা, অথচ ভারতের জন্য এটি নকআউট ম্যাচ। হারলেই ধূলিসাৎ সেমিফাইনালে ওঠার স্বপ্ন। নাগপুরে কিউই স্পিনের নাগপাশ টুর্নামেন্ট-পূর্ব ফেবারিট ভারতকে শুরুতেই দাঁড় করিয়ে দিয়েছে খাদের সামনে।
অশ্বিন খুব গুছিয়ে কথা বলেন। যাতে বুদ্ধির দীপ্তি ফুটে ওঠে। রসবোধও আছে। নাগপুরে দুই দলের স্পিনারদের তুলনামূলক কী একটা প্রশ্ন হলো, তিনি উত্তর দিলেন, ‘যদি জানতাম আমরা ৭৯ রানে অলআউট হয়ে যাব, তাহলে ওদের আরও কম রানে আউট করে দিতাম।’
ওই ৭৯ রানে অলআউট হয়ে ৪৭ রানে পরাজয় ভারতের নেট রানরেটের বারোটা বাজিয়ে দিয়েছে। তা নেট রানরেট নিয়ে প্রশ্নটা শেষও হতে পারল না, অশ্বিন হেসে বললেন, ‘আগে জিতে নিই, নেট রানরেট নিয়ে পরে ভাবা যাবে।’
বড় টুর্নামেন্টে ভারতের দুশ্চিন্তা শুধু ভারতেরই থাকে না। ক্রিকেট বাণিজ্যিকীকরণের এই যুগে ভারতের ছিটকে পড়া মানেই স্পনসর, বিজ্ঞাপনদাতা, টেলিভিশন, সম্প্রচার কর্তৃপক্ষ সবার মাথায় হাত। অশ্বিনের এই কথাটা তাদের কানে নিশ্চয়ই অমৃতবাণীর মতো শোনাবে, ‘কোনো দল যদি ৭৯ অলআউট থেকে ঘুরে দাঁড়াতে পারে, সেটি আমরা। এর আগেও আমরা তা করে দেখিয়েছি।’
ম্যাচ-পূর্ব সংবাদ সম্মেলনে অধিনায়কের আসাটাই নিয়ম। ধোনি যে সেই নিয়মের থোড়াই তোয়াক্কা করেন, তা সবারই জানা। পাকিস্তানও তাদের অধিনায়ককে পাঠাল না। এটিও অনুমিতই ছিল। ভারতেই বেশি ভালোবাসা পান বলে এমন বিতর্কে জড়িয়েছেন যে, সংবাদমাধ্যমের ছায়াও মাড়াচ্ছেন না শহীদ আফ্রিদি। অগত্যা সংবাদ সম্মেলনে কোচ ওয়াকার ইউনিস। যিনি বিশ্বকাপে দুদলের ইতিহাসকে একটুও পাত্তা না দেওয়ার ভান করে বর্তমানকেই বড় করে দেখিয়ে ভারতের ওপর চাপটা আরও বাড়িয়ে দিতে চাইলেন। ‘ইতিহাস বদলায়। এই ম্যাচটা হারলে ভারত টুর্নামেন্ট থেকে ছিটকে যাবে। ওদের ওপর চাপটা তাই অনেক বেশি’—এখানেই থামলেন না ওয়াকার। বিশ্বকাপে দুই দলের আগের সব ম্যাচের সঙ্গে এটির পার্থক্য আরও সবিস্তারে বুঝিয়ে দিতে চাইলেন, ‘আগের সব ম্যাচে পাকিস্তানের ওপর বেশি চাপ ছিল। এবার আমাদের ওপর কোনো চাপই নেই। আমরা প্রথম ম্যাচে জিতেছি। হারলেই বা কী! ভারত স্বাগতিক, প্রথম ম্যাচে হেরেছে। এটা হারলেই শেষ। আমি নিজে ক্রিকেট খেলেছি, তাই জানি এই চাপ কী ভয়ানক! এটা ওরা টের না পেয়ে পারেই না।’
দুই বছর আগের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের চেয়ে এবার যে চ্যালেঞ্জটা অনেক বড়, সেটি বলে গেছেন অশ্বিন, ‘সেবার আমরা সব ম্যাচই খেলেছিলাম মিরপুরে। এখানে এক ভেন্যু থেকে আরেক ভেন্যুর উইকেট-কন্ডিশন এসবের সঙ্গে মানিয়ে নেওয়ার কাজটা অনেক কঠিন।’
অন্তত এই ম্যাচে পাকিস্তানের এই সমস্যাটা কম। অতিথি হয়েও পাকিস্তান যেন এখানে ‘স্বাগতিক’! গত পরশু দুদলের অনুশীলন সূচি নিয়ে কী একটা ঝামেলা হয়েছিল। আফ্রিদি নাকি তাতে একটু মাইন্ড করে বলে দিয়েছেন, ‘ইন্ডিয়া যা চায় তা-ই করুক। ওরা তো আমাদের মেহমান! আমরা কলকাতায় এসেছি সাত দিন আগে। ওরা তো মাত্র কালই এখানে এল।’
এই শহরের আলো-হাওয়ায় সাত দিন কাটানোর সঙ্গে বাংলাদেশের বিপক্ষে দাপুটে জয় যোগ হয়ে পাকিস্তানের আত্মবিশ্বাসের পালে এখন জোর হাওয়া। যে কারণে ‘নড়বড়ে’ ব্যাটিং নিয়ে প্রশ্ন করতেই ওয়াকার বলে দিতে পারেন, ‘আরে, গত ম্যাচেই না আমরা ২০০ করলাম। আমাদের ব্যাটিং নড়বড়ে বলেন কীভাবে?’ দুই দলের পেস আক্রমণ নিয়ে প্রশ্নে বলতে পারেন, ‘আমি তুলনায় যাব না। শুধু এটুকু বলতে পারি, আমাদের পেসাররা এক স্পেলে বা এক ওভারেই ম্যাচের রং বদলে দিতে পারে।’ সঙ্গে মনে করিয়ে দিলেন শহীদ আফ্রিদির ফর্মে ফেরার কথা। হালকা চালে পাকিস্তানের সংবাদমাধ্যমকে খোঁচা দেন, ‘আগেই আমি বলেছিলাম কি না, ওর ফর্মে ফেরা মাত্র একটি ইনিংসের ব্যাপার!’
ইডেনে আজ মহারণ। ইতিহাস বদলানোর ম্যাচ! তা ভারতই জিতুক বা পাকিস্তান!