বিশ্বকাপের পর্দা উঠছে রাতে

SHARE

আর কয়েক ঘণ্টা পরেই ব্রাজিলের সাও পাওলোতে পর্দা উঠছে বিশ্বকাপ ফুটবলের। বাংলাদেশে সময় রাত দশটায় জমকালো উদ্বোধনী অনুষ্ঠান শেষে রাত দুটোয় উদ্বোধনী ম্যাচে মুখোমুখি হবে স্বাগতিক ব্রাজিল ও ক্রোয়েশিয়া।image_86002_0

কিন্তু শুরুটা বোধহয় যতখানি নির্ঝঞ্ঝাট হবে বলে মনে হয়েছিল, তা হয়নি। নানা ধরনের ধর্মঘট, প্রতিবাদ, বিক্ষোভের কালো ছায়া পড়েছে ব্রাজিলে। তবে দেশের প্রেসিডেন্ট দিলমা রুসেফ বলছেন, তার দেশ বিশ্বকাপ হোস্ট করার জন্য এখন তৈরি।

মিজ রুসেফ বলছেন খেলা শুরু হওয়ার অপেক্ষায় রয়েছে আর নৈরাশ্যবাদীরা আমাদের দৃঢ়প্রতিজ্ঞা এবং কর্মক্ষমতার কাছে এরই মধ্যে পরাজিত হতে শুরু করেছে।
নৈরাশ্যবাদীরা বলতো আমাদের এখানে কখনো বিশ্বকাপ হবে না, কারণ আমাদের কখনো স্টেডিয়াম হবে না। কিন্তু আমাদের স্টেডিয়াম আছে আর সবগুলোই এখন প্রস্তুত।

এদিকে জনপ্রিয় সঙ্গীত তারকা জেনিফার লোপেজ আজ রাতে বিশ্বকাপের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে সঙ্গীত পরিবেশন করছেন। এ সপ্তাহের গোড়ার দিকে ফিফা বলেছিল, আজকের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে যোগ দিতে অস্বীকৃতি জানিয়েছেন জেনিফার লোপেজ।

কিন্তু মঙ্গলবার বার্তা সংস্থা অ্যাসোসিয়েটেড প্রেসকে তিনি বলেছেন, ওইদিন রাতেই তিনি ব্রাজিলের উদ্দেশ্যে উড়াল দিচ্ছেন, উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে তিনি যথাসময়ে উপস্থিত থাকবেন।

এবার বিশ্বকাপের থিম সঙ্গীতটিতে র্যা প সঙ্গীত শিল্পী পিটবুল এবং ব্রাজিলের শিল্পী ক্লডিয়া লেইটের সঙ্গে কণ্ঠ দিয়েছেন জেনিফার লোপজে। এই তিন শিল্পীই উই আর ওয়ান বা ওলা ওলা শিরোনামের গানটি নিয়ে সশরীরে আজ সাওপাওলোর মাঠে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে হাজির থাকবেন।

উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে যা থাকছে
২০তম বিশ্বকাপের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে স্থান পাবে ব্রাজিলের হাজার বছরের কৃষ্টি, ইতিহাস, ঐতিহ্য, ফুটবলসহ নানা কিছু। থাকবে চোখ ধাঁধানো বিজ্ঞানভিত্তিক আয়োজন। বিশ্বখ্যাত শিল্পীদের সঙ্গীত বিমোহিত করবে স্টেডিয়ামের ৬০ হাজার ও টিভির কোটি দর্শককে। অনুষ্ঠান শুরু হওয়ার কথা রোবোটিক এক্সোস্কেলেটন বা ধাতব পোশাক পরিহিত পক্ষাঘাতগ্রস্ত মানুষের পরিবেশনা দিয়ে। নেইমাররা মাঠে নামার আগেই ফুটবলে লাথি মারবে রোবটরা! এরপর একে একে থাকবে নাচ, জিমন্যাস্টিকস, ব্রাজিলীয় মার্শাল আর্ট পরিবেশনাসহ নানা কিছু। নানা বর্ণিল চরিত্রে ও সাজসজ্জায় বিশেষভাবে তুলে ধরা হবে স্বাগতিক ব্রাজিলকে। এখানে কোনো না কোনোভাবে তুলে ধরা হবে অংশগ্রহণকারী ৩২টি দেশকে।

সবচেয়ে আকর্ষণীয় ইভেন্ট হিসেবে আগ্রহের কেন্দ্রে থাকছে ফিফার অফিশিয়াল গান ‘ওলে ওলা’ বা ‘উই আর ওয়ান’। এ গানে পারফর্ম করবেন মার্কিন র্যাপার পিটবুল ও ব্রাজিলের খ্যাতিমান সঙ্গীতশিল্পী ক্লদিয়া লেইতে। মার্কিন পপ তারকা জেনিফার লোপেজ ‘প্রডাকশন ইস্যু’জনিত কারণে পারফর্ম করবেন না বলে জানিয়েছিল ফিফা। তবে গতকাল ফিফাই নিশ্চিত করেছে, লোপেজও থাকছেন বিশ্বকাপ উদ্বোধনীতে। এতে অনুষ্ঠানের জৌলুস আরেকটু বাড়বে নিশ্চিতভাবেই।

৬৪ বছর পর ব্রাজিলে বিশ্বকাপ আসর বসছে। একে সফল করতে যেমন নিরলস কাজ করে যাচ্ছে ব্রাজিল সরকার, তেমনি উদ্বোধনী অনুষ্ঠানকেও সফল করতে থাকছে নানা প্রয়াস। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে পারফর্ম করবে প্রায় ৬০০ মানুষ। বড় তারকাদের নিয়ে আলোচনা হলেও এ অনুষ্ঠানের মূল কারিগর শত শত স্বেচ্ছাসেবী ও কলাকুশলী। কয়েক মাস মহড়া করে তারা নিজেদের তৈরি করেছেন। আয়োজকরা জানিয়েছেন, প্রতি মিনিটের পরিবেশনার জন্য তারা ২০ ঘণ্টা করে মহড়া দিয়েছেন।

এতটা গুরুত্বের সঙ্গে নেয়ার কারণও রয়েছে। উদ্বোধনী অনুষ্ঠান গড়বড় করার ইতিহাস রয়েছে। ১৯৯৪ সালে যুক্তরাষ্ট্র বিশ্বকাপের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে মঞ্চে লজ্জাবরণ করতে হয়েছিল সঞ্চালক অপরাহ উইনফ্রে ও সঙ্গীতশিল্পী ডায়ানা রসকে। শিকাগোর সোলজার ফিল্ড স্টেডিয়ামে রসকে পরিচয় করিয়ে দিতে গিয়ে ডায়াস থেকেই পড়ে যান উইনফ্রে। এরপর রসের পালা। কথা ছিল তিনি পেনাল্টিতে গোল করলেই গোলবক্সটা ভেঙে দুই টুকরো হয়ে যাবে। কিন্তু রস বলটি মারেন বারের বাইরে দিয়ে!
ব্রাজিলে কোনো দুর্দশা যাতে না আসে, সেটা নিশ্চিত করতেই দিন-রাত চলছে মহড়া।

এ নিয়ে বেলজিয়ান ডিরেক্টর (আর্টিস্ট) ডাফনে কর্নেজ বলেন, ‘উদ্বোধনী অনুষ্ঠানটা ব্রাজিল এবং এর সম্পদ যেমন: প্রকৃতি, মানুষ ও ফুটবলের প্রতি উত্সর্গীকৃত।’

মহড়ার আবহ নিয়ে তিনি বলেন, ‘এখানকার আবহ রোমাঞ্চকর এবং সবাই খুবই উদ্দীপ্ত। কারো মধ্যে ক্লান্তির কোনো ছাপ আমি দেখিনি। তারা পরিপূর্ণ উদ্যমে, হাসিমুখে নিরলস কাজ করে যাচ্ছে। এটা সত্যিই বিস্ময়কর।’ সূত্র: ওয়েবসাইট