বোর্ডের তালিকায় ভুলের ছড়াছড়ি, ভোগান্তি

SHARE

hsc sখিলগাঁও সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় থেকে বাণিজ্য শাখায় এ বছর এসএসসি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছে আবু বকর সিদ্দিক সাগর। শিক্ষা বোর্ড থেকে প্রকাশিত ভর্তির ফল অনুসারে, তার ভর্তির জন্য নির্ধারণ করে দেওয়া হয়েছে সরকারি বিজ্ঞান কলেজ। গতকাল সোমবার সকালে অভিভাবকসহ কলেজে ভর্তি হতে গিয়ে সাগর দেখতে পায়, ওই কলেজে কোনো বাণিজ্য শাখাই নেই। অধ্যক্ষ তাদের সাফ জানিয়ে দেন, ‘এটা কলেজের কোনো বিষয় নয়।

আপনারা শিক্ষা বোর্ডে যোগাযোগ করুন।’ সাগরের বাবা বিমানবন্দরের গাড়িচালক শহীদুল ইসলাম গতকাল দুপুরে কলেজের সামনে দাঁড়িয়ে সমকালকে বলেন, ‘কী এক বিপদে পড়লাম! যে কলেজে বাণিজ্য শাখা নেই সে কলেজের বিপরীতে কেন এসএমএসের মাধ্যমে আবেদন গ্রহণ করা হলো? মাত্র তিন দিন ভর্তির সময় আছে। কোথায় গিয়ে এখন সমাধান পাব?’ বিজ্ঞান কলেজের কয়েকজন শিক্ষক জানান, গতকাল দিনভর বাণিজ্য শাখার বহু শিক্ষার্থী ভর্তি হতে এসে ফিরে গেছে।

রোববার মধ্যরাতে ঢাকা বোর্ড প্রকাশিত ২০১৫-১৬ সেশনে একাদশ শ্রেণীতে ভর্তির জন্য মনোনীতদের প্রথম মেধা তালিকায় এমন অসংখ্য ভুলের ছড়াছড়ি। এতে চরম ভোগান্তিতে পড়েছে ভর্তিচ্ছুরা। রাজধানীর কয়েকটি কলেজ ঘুরে দেখা গেছে, বিভিন্ন কলেজে জোরেশোরে ভর্তি কার্যক্রম শুরু হয়েছে। সোমবার সকাল ১০টায় রাজধানীর বিভিন্ন কলেজে ভর্তি প্রক্রিয়া শুরু হয়। শিক্ষার্থীদের পাশাপাশি অভিভাবকরাও কলেজগুলোতে ভিড় করেন। এ সময় শিক্ষার্থীরা জানায়, পছন্দের কলেজে ভর্তি হতে পেরে খুশি তারা। তবে অনেক শিক্ষার্থী অভিযোগ করে, ভালো ফল করেও তারা পছন্দের কলেজে ভর্তির সুযোগ পায়নি। ঢাকা বোর্ড কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, ২৯ জুন শুরু হয়ে আগামী ২ জুলাই পর্যন্ত ভর্তি চলবে। এ ছাড়া আগামীকাল ১ জুলাই থেকে ক্লাস শুরুরও ঘোষণা দেওয়া হয়েছে।

মিরপুর বাঙ্লা উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ শাহীনুর রহমান শাহীন জানায়, সে পাঁচটি প্রতিষ্ঠানে ভর্তির ইচ্ছা প্রকাশ করে আবেদন করেছিল। তার মোবাইলে ফিরতি কোনো এসএমএস আসেনি। সে কোনো ফলই পায়নি। এমন করে তার মতো আরও ৬০ হাজার ভর্তিচ্ছু তাদের ফল জানতে পারেনি বলে জানা গেছে। ফলে ‘স্মার্ট অ্যাডমিশন সিস্টেম’-এর জটিলতা কিছুতেই কাটছে না। দেখা গেছে, ১১ লাখ ৫৭ হাজার ২২৪ আবেদনকারীর মধ্যে প্রথম মেধা তালিকায় স্থান পেয়েছে ১০ লাখ ৯৩ হাজার ৩৭৪ শিক্ষার্থী। যোগাযোগ করা হলে বোর্ড কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, বাকিদের ফল দ্বিতীয় মেধা তালিকায় (২ জুলাই) দেওয়া হবে।

এদিকে নিজের কলেজে ভর্তির সুযোগ না পেয়ে রাজধানীর ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজের শিক্ষার্থীদের মধ্যে দেখা দিয়েছে কান্নার রোল। অধ্যক্ষ সুফিয়া আক্তার সমকালকে বলেন, তালিকায় অন্তত ১৫-২০ ছাত্রীর নাম আসেনি। বোর্ডের সঙ্গে এ ব্যাপারে তিনি যোগাযোগের চেষ্টা করছেন বলে জানান। আবার, বোর্ডের প্রকাশ করা তালিকায় ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজের জন্য নির্দিষ্ট ভর্তিচ্ছুদের মনোনয়ন দেওয়া হলেও কলেজ কর্তৃপক্ষ সাফ জানিয়ে দিয়েছে, তাদের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে এসএসসি উত্তীর্ণদের এই কলেজে আগে ভর্তি করা হবে।

শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নির্দেশ অনুযায়ী, শিক্ষা বোর্ড মনোনীত তালিকা ধরেই সব কলেজকে একাদশ শ্রেণীতে শিক্ষার্থী ভর্তি করাতে হবে। এ নিয়মের বাইরে এবার ভর্তির কোনো সুযোগ নেই। তবে ভিকারুননিসার অধ্যক্ষ সুফিয়া আক্তার সোমবার বলেন, যোগ্যতা থাকা সত্ত্বেও তার স্কুল থেকে পাস করা বেশ কয়েকজন ছাত্রীর নাম বোর্ডের মেধা তালিকায় আসেনি। তালিকায় তাদের নাম আসুক আর নাই আসুক, আমরা তাদের ভর্তি করাব। কারণ দশ বছর ধরে তারা এখানে পড়াশোনা করছে।’

অন্যদিকে, সোমবার দুপুর আড়াইটা পর্যন্ত কোনো তালিকা পাননি বলে জানিয়েছেন মিরপুরের মনিপুর স্কুল অ্যান্ড কলেজের অধ্যক্ষ ফরহাদ হোসেন। তিনি বলেন, ‘কোনো তালিকা না পাওয়ায় কাউকেই ভর্তি করাতে পারছি না। শিক্ষার্থীদের সঙ্গে তাদের অভিভাবকরাও কলেজে ভিড় করছেন। আমরা সবাই বেশ উদ্বিগ্ন।’ একই কথা জানিয়ে মতিঝিল আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজের অধ্যক্ষ শাহান আরা বেগম বলেন, দুপুর ২টা পর্যন্ত কোনো তালিকা পাননি তারা। ঢাকা সিটি কলেজ, ট্রাস্ট কলেজ, উত্তরা সিটি কলেজসহ রাজধানীর বিভিন্ন কলেজে শিক্ষার্থী ভর্তিতে জটিলতা সৃষ্টি হয়েছে বলে ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থীরা জানিয়েছে।

ভর্তি কমিটির সভাপতি ও শিক্ষা সচিব নজরুল ইসলাম খান ও ঢাকা বোর্ডের চেয়ারম্যান আবু বক্কর ছিদ্দিক এ নিয়ে গতকাল কোনো কথা বলেননি।

অভিভাবক সমন্বয় পরিষদের সাধারণ সম্পাদক নিপা সুলতানা বলেন, ‘অনেকে বিজ্ঞান শাখা থেকে পাস করলেও তাদের কমার্সের তালিকায় রাখা হয়েছে। আবার অনেকে কম জিপিএ পেয়েও ভর্তির সুযোগ পেয়েছে। এসব কীভাবে হলো? কোন মানদ ের ভিত্তিতে মেধা তালিকা করা হয়েছে?’