কক্সবাজারে বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি, নিহত ২১

SHARE

bonna coxটানা পাঁচ দিনের ভারী বর্ষণের পর রোববার বৃষ্টিপাত না হওয়ায় কক্সবাজারের বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হয়েছে। পানি নেমে যাওয়ার ফলে যানবাহন চলাচল শুরু হয়েছে কক্সবাজার-টেকনাফ সড়ক ও মেরিন ড্রাইভ সড়কে। আশ্রয়কেন্দ্রে অবস্থান নেওয়া লোকজনের অনেকেই বাড়ি ফিরেছেন।

প্লাবনে ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে রাস্তাঘাট, বসতবাড়ি, কৃষি ও মৎস্যচাষিদের। এ ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ নির্ধারণের প্রক্রিয়া শুরু করেছে জেলা প্রশাসন। জেলা প্রশাসনের তথ্যমতে, গত পাঁচ দিনে নানাভাবে ২১ জনের মৃত্যু হয়েছে এবং একজন নিখোঁজ রয়েছে।

কক্সবাজারের ভারপ্রাপ্ত জেলা প্রশাসক ড. অনুপম সাহা জানান, প্লাবন পরিস্থিতির উন্নতি হয়েছে। পানি নামতে শুরু করে বিপৎসীমার নিচে প্রবাহিত হচ্ছে। আশ্রয়কেন্দ্রে অবস্থান নেওয়া লোকজনের অনেকে বাড়ি ফিরতে শুরু করেছে। জেলার আটটি উপজেলার কন্ট্রোল রুমের মাধ্যমে দুর্গত এলাকার খোঁজখবর রাখা হচ্ছে।

পাশাপাশি জেলা সিভিল সার্জনের তত্ত্বাবধানে আটটি মেডিক্যাল টিম দুর্গত এলাকার লোকজনকে চিকিৎসাসেবা দিচ্ছে। প্লাবনে ৬৭০টি গ্রাম প্লাবিত হয়ে প্রায় দেড় লক্ষাধিক বসতবাড়ি সম্পূর্ণ ও আংশিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। আশ্রয়কেন্দ্রে অবস্থান নিয়েছিল ৬৫ হাজার ২০০ জন।

তিনি জানান, আশ্রয়কেন্দ্রে অবস্থান নেওয়া মানুষ ও দুর্গত লোকজনের মাঝে ইতিপূর্বে ১৪৫ মেট্রিক টন চাল, ১৪৫ বস্তা চিড়া, ১৪০ তা গুড় এবং নগদ ১১ লাখ টাকা বিতরণ করা হয়েছে। প্রাথমিকভাবে সরকারের কাছে ৭৫০ মেট্রিক টন চাল ও নগদ ৭৫ লাখ টাকা চাওয়া হয়েছে।

রোববার রাত সাড়ে ৯টায় জেলা প্রশাসনের ত্রাণ শাখার দেওয়া সর্বশেষ তথ্যমতে, কক্সবাজারে পাঁচ দিনে পাহাড়ধসে, প্লাবনে ভেসে, বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে মৃত্যু হয়েছে ২১ জনের। এ পর্যন্ত একজন নিখোঁজ হওয়ার তথ্য রয়েছে।

পানি উন্নয়ন বোর্ড কক্সবাজার কার্যালয়ের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. সবিবুর রহমান জানান, বাঁকখালী ও মাতামুহুরী নদীর পানি বিপৎসীমার নিচে বইতে শুরু করেছে। প্লাবনের কারণে উঁচু জায়গায় জমে থাকা পানি নিচের দিকে নামতে শুরু করেছে। শনিবারের চেয়ে পানি দুই ফুট নিচে নেমে গেছে।

আবহাওয়া অধিদপ্তরের কক্সবাজার কার্যালয়ের সহকারী আবহাওয়াবিদ এ কে এম নাজমুল হক জানান, রোববার সন্ধ্যা পর্যন্ত কক্সবাজারে বৃষ্টিপাত হয়নি। এর আগে শনিবার বৃষ্টিপাতের পরিমাণ ছিল ৮১ মিলিমিটার, শুক্রবার ২৬৩ মিলিমিটার, বৃহস্পতিবার ২১০ মিলিমিটার, বুধবার ৪৬৭ মিলিমিটার, মঙ্গলবার ৯৯ মিলিমিটার।

জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা মো. জাহাঙ্গীর আলম জানান, প্লাবনে কক্সবাজারে তিন শতাধিক কিলোমিটার সড়কের ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। এর মধ্যে সম্পূর্ণভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে পাকা সড়ক ১২ কিলোমিটার, কাঁচা সড়ক ১১৫ কিলোমিটার এবং আংশিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে পাকা সড়ক ২৫ কিলোমিটার ও কাঁচা সড়ক ১৭০ কিলোমিটার।

জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. অজিত কুমার সরকার প্রাথমিকভাবে প্লাবনে জেলায় সাতটি মুরগির খামার ভেসে যাওয়ার ও ৪০টি গবাদিপশু মারা যাওয়ার তথ্য জানান।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক আ ক ম শাহরিয়ার জানান, প্রাথমিকভাবে পানিতে ডুবে যাওয়া ফসল ও সম্পদের ক্ষয়ক্ষতি নির্ধারণ করা হয়েছে। পানি একেবারে নেমে গেলে চূড়ান্ত ক্ষতির পরিমাণ জানা যাবে।

ইতিমধ্যে পানিতে ডুবে গেছে রোপা আউশ ৫৬১ হেক্টর, শাকসবজি ১৬০০ হেক্টর, আমন বীজতলা ১৭৩ হেক্টর, আউশ বীজতলা ১৬৭ হেক্টর ও পান বরজ ১৯৮ হেক্টর।

জেলা মৎস্য কর্মকর্তা অমিতোষ সেন জানান, প্লাবনে মৎস্য খাতে ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। পানিতে তলিয়ে গেছে ১১ হাজার পুকুর ও দিঘি, ২২৩টি বাণিজ্যিক মৎস্যখামার, ৩১১৮টি সাধারণ চিংড়িঘের ও ১২৭টি উন্নত চিংড়িঘের।