কলা ও মোচার পুষ্টিগুণ

SHARE

bananaঅত্যন্ত উপকারী ফল কলা। এতে রয়েছে শরীরের শক্তি বর্ধনকারী সুকরোজ, ফ্রুক্টোজ, গ্লুকোজ এবং ফাইবারের মত উপাদান। গবেষণায় জানা যায় মাত্র দুইটি কলা প্রায় ৯০ মিনিট পূর্ণোদ্যমে কাজ করার মতো শক্তি যোগায়। এছাড়া বিশ্বের ক্রীড়াবিদদের ডায়েটের অন্যতম ফল হলো কলা। এই কলা কেবল শরীরে শক্তিই যোগায় না  বরং মানসিক, শারীরিক অনেক অসুস্থতা থেকে রক্ষা করে।

জেনে নেয়া যাক কলার প্রাকৃতিক গুণ বৈশিষ্ট্য।

কলার পুষ্টিগুণ 

কলা একটি প্রাকৃতিক ঔষধ এতে রয়েছে শর্করা, আমিষ, ভিটামিন ও খনিজ লবণের সমন্বয়। কলায় শর্করা, সামান্য আমিষ, কিঞ্চিত ফ্যাট, পর্যাপ্ত খনিজ লবণ ও যথেষ্ট আঁশ আছে। খনিজ লবণের মধ্যে আছে পটাশিয়াম, ক্যালসিয়াম, ফসফরাস ও লৌহ।

হতাশা কাটায়

ভয় পাবেন না, কলা খেলে আপনার হতাশা বাড়বেনা। কলাতে ট্রিপ্টোফ্যান নামক রাসায়নিক উপাদান রয়েছে যেটা সেরোটোনিনে রূপান্তরিত হয়। যারা হতাশাগ্রস্থ তাদের সেরোটোনিন লেভেল কম থাকে। কলা খেলে সেরোটোনিন লেভেল বেড়ে যায়, মন-মেজাজ ফুরফুরে থাকে, হতাশা কেটে যায়।

প্রি-মিনস্ট্রুনাল সিন্ড্রোম

মেয়েদের প্রতি মাসে হরমোনাল পরিবর্তন জনিত কারণে ঋতুস্রাব হয়, তার পূর্বে যে প্রি-মিনস্ট্রুয়াল সিন্ড্রোম দেখা যায় কলা খেলে সেটা অধিকাংশে কমে যায়। কলাতে ভিটামিন বি-৬ থাকে, যা রক্তের সুগার নিয়ন্ত্রণ করে, মুড ভালো রাখে।

রক্তশূন্যতা বা এনিমিয়া

কলাতে প্রচুর আয়রণ থাকে যা হিমোগ্লোবিন তৈরিতে সাহায্য করে, ফলস্বরূপ রক্তশূন্যতা বা এনিমিয়া প্রতিরোধ হয়।

উচ্চ রক্তচাপ

কলাতে পর্যাপ্ত পরিমাণ পটাশিয়াম থাকে এবং লবণ কম থাকে যা উচ্চরক্তচাপ ও স্ট্রোকের সম্ভাবনা প্রায় ৪০% কমিয়ে দেয়।

কোষ্ঠকাঠিন্য

কলাতে যথেষ্ট ফাইবার থাকে তাই রেগুলার কলা খেলে কোষ্ঠকাঠিন্য থেকে মুক্তি পাবেন।

হ্যাংওভার

যারা মাদকাসক্ত তাদের জন্য কলার সাথে মধু এবং দুধ মিশিয়ে খেলে আসক্তি পরবর্তি ইফেক্ট কমে যাবে। কলা আমাদের পাকস্থলিকে কার্যক্ষম করতে সহায়তা করে, মধু রক্ত সুগার বৃদ্ধি করে শক্তি যোগায় আর দুধ পুরা শারীরিক ব্যবস্থাপনাকে সচল রাখতে সাহায্য করে।

বুকে জ্বালা-পোড়া

যাদের গ্যাস্ট্রিক বা আলসার রয়েছে, যারা বুকে জ্বালা পোড়া অনুভব করেন তাদের জন্য কলা প্রাকৃতিক এন্টাসিড হিসাবে কাজ করে। তাই গ্যাস্ট্রিকের রোগীদের নিয়মিত কলা খাওয়া উচিত।

পোকামাকড়ের কামড়

কোথাও পোকামাকড় কামড় দিলে কোনো মলম দেবার আগেই যদি কলা সেই জায়গাতে দেয়া যায়, তাহলে লাল হয়ে ফুলে যাওয়া ভাবটা কমে যায়।

অতিরিক্ত ওজন

কলা অতিরিক্ত ওজন কমাতে সাহায্য করে। কলাতে পর্যাপ্ত শক্তি বর্ধনকারী সুগার রয়েছে যা একই সাথে ক্ষুধা নিবারণ করে এবং অতিরিক্ত ওজন থেকে রক্ষা করে। তাই কাজের ফাঁকে ফাঁকে ফাস্ট ফুড না খেয়ে কলা খান।

তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ

গর্ভবতী মহিলাদের শারীরিক ও মানসিক যে চাপের জন্য উচ্চতাপমাত্রা হয়ে থাকে সেটা কলা খেলে ঠাণ্ডা এবং নিয়ন্ত্রণে আসে।

ধূমপান ও টোব্যাকো আসক্তি

যারা ধূমপায়ী তাদের ধূমপান ত্যাগ করার জন্য কলা অন্যতম উপকারী ফল। কলাতে ভিটামিন বি-৬, বি-১২, ম্যাগনেসিয়াম, পটাশিয়াম থাকে যা নিকোটিনের ক্ষতিকর প্রভাব থেকে শরীরকে রক্ষা করে এবং ধূমপান ত্যাগের জন্য শরীরকে তৈরি করে।

অতিরিক্ত চাপ

কলাতে পটাশিয়াম রয়েছে যা আমাদের ব্রেইনে অক্সিজেন সরবরাহতে সাহায্য করে, পানির সাম্যতা নিয়ন্ত্রণ করে। যখন আমরা কাজের জন্য অতিরিক্ত চাপের মধ্যে থাকি তখন পটাশিয়াম লেভেল কমে যায় তাই কলা খেলে অতিরিক্ত চাপের সময়ও শারীরিকভাবে সুস্থ থাকা যায়।

কলাকে বিভিন্ন রোগের প্রাকৃতিক ঔষধ বলা হয়। একটি আপেলের সাথে তুলনা করে দেখা গেছে যে, কলাতে প্রায় চারগুণ বেশি আমিষ, দুইগুণ বেশি শর্করা, তিনগুণ বেশি ফসফরাস, পাঁচ গুণ বেশি ভিটামিন-এ, আয়রণ, ভিটামিন ও অন্যান্য খনিজ উপাদান রয়েছে। এছাড়াও রয়েছে পর্যাপ্ত পরিমাণ পটাশিয়াম।

এছাড়া কলাতে রয়েছে ভিটামিন এ, বি ও কিছু ভিটামিন-সি আছে। একটি কলা প্রায় ১০০ ক্যালরি শক্তির জোগান দেয়।

কলায় আছে সহজে হজমযোগ্য শর্করা, যা শরীরে দ্রুত শক্তি সরবরাহ করে ক্লান্তি দুর করতে সহায়ক। কলা হজমে সাহায্য করে।

অ্যাসিডিটি বা গ্রাস্টিক আলসারের রোগীরা কলা খেতে পারেন উপকারী ভেবে। অ্যাসিডিটির জন্য বুক জ্বালা কমাতেও কলা সহায়ক।

পাকা নরম কলা অ্যাসিডিটি নিরাময়ে সক্ষম। পাকস্থলীর আবরণীতে নরম কলার প্রলেপ আলসারের অস্বস্তিও কমায়। কলা যেমন কোষ্টকাঠিন্য দুর করে, তেমনি পাতলা পায়খানাও উপকারী।

বাতের ব্যথার জন্য কলা উপকারী। কলা লৌহ রক্তের হিমোগ্লোবিন তৈরিতে কাজে লাগে। কলা তাই রক্তশূন্যতায়ও উপকারী। কলা রক্তচাপ কমাতে সহায়ক এবং স্ট্রোক প্রতিরোধেও কার্যকরী

কলার থোড় বা মোচা এবং শিকড় ডায়াবেটিস, আমাশয়, আলসার, পেটের পীড়া নিরাময়ে ব্যবহৃত হয়।

আনাজী কলা পেটের পীড়ায় আক্রান্ত রোগীর পথ্য হিসেবে ব্যবহৃত হয়। পাকা বীচিকলার বীজ কৃমিনাশক।