শেখ হাসিনা পদত্যাগ করেননি, এখনও তিনি বৈধ সরকার: রয়টার্সকে জয়

SHARE

সম্পাদক-ইমারত হোসেন
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মুখে গত ৫ আগস্ট বোন শেখ রেহানাকে নিয়ে দেশ ছেড়ে চলে ভারত চলে যান শেখ হাসিনা। তবে তিনি কখনোই পদত্যাগ করেননি বলে দাবি করেছেন তার ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয়। বললেন, সংবিধান অনুযায়ী তার মা এখনও বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী।

শনিবার (১০ আগস্ট) ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম রয়টার্সকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি এমন দাবি করেন।

ওয়াশিংটন থেকে বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে দেয়া সাক্ষাৎকারে জয় বলেন, আমার মা কখনোই আনুষ্ঠানিকভাবে পদত্যাগ করেননি। সেই সময় তিনি পাননি। একটি বিবৃতি দিয়ে পদত্যাগপত্র জমা দেয়ার পরিকল্পনা ছিল তার। কিন্তু এরপর আন্দোলনকারীরা প্রধানমন্ত্রীর বাসভবনের দিকে অগ্রসর হতে লাগলো এবং তখন আর সময় ছিল না। এমনকি আমার মা গোছানোর সময়টুকুও পায়নি।

জয় জানান, প্রধানমন্ত্রী আনুষ্ঠানিকভাবে পদত্যাগ না করা সত্ত্বেও অন্তর্বর্তী সরকার গঠনের প্রক্রিয়াকে আদালতে চ্যালেঞ্জ করা যেতে পারে। শেখ হাসিনা চলে যাওয়ার পর গত বৃহস্পতিবার অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে শপথ নেন নোবেলজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূস। এই সরকারের মেয়াদ এখনও নির্ধারণ করা হয়নি।

তবে আগামী তিন মাসের ভেতর বাংলাদেশে নির্বাচন দেখতে চান জয়। যেখানে অংশ নেবে আওয়ামী লীগও। আওয়ামী লীগ আবারও ক্ষমতায় আসবে জানিয়ে জয় বলেন, সেটা না হলে আমরা বিরোধী দল হব। যেটাই হোক ভালো হবে।

এদিকে, শেখ হাসিনার দেশত্যাগের দুদিনের মাথায় ঢাকায় বিএনপির প্রথম সমাবেশে দেয়া এক ভিডিও বার্তায় বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া বলেন, প্রতিশোধ-প্রতিহিংসা নয়, দেশ হোক শান্তির।

এ প্রসঙ্গে জয় বলেন, আমি খালেদা জিয়ার ভাষণ শুনে খুশি হয়েছি। বাংলাদেশে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার ও গণতান্ত্রিক নির্বাচন করতে আমি বিএনপিকে নিয়ে একসঙ্গে কাজ করতে আগ্রহী। তাদের সঙ্গে কাজ করে নিশ্চিত করতে হবে যে, আমাদের শান্তিপূর্ণ গণতন্ত্র রয়েছে যেখানে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন হবে। আমি বিশ্বাস করি, রাজনীতিতে আলাপ-আলোচনা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আমরা তর্ক করতে পারি এবং সবসময় একটি সমঝোতার পথ খুঁজে বের করতে পারি।

হাসিনাপুত্র বলেন, আসুন আমরা অতীতকে ভুলে যাই। আমরা যেন প্রতিহিংসার রাজনীতি না করি। ঐক্যবদ্ধ সরকার হোক বা না হোক, আমাদের একসঙ্গে কাজ করে যেতে হবে।

ছাত্রদের ওপর গুলি চালানোর বিষয়ে সাক্ষাৎকারে জানতে চাওয়া হলে জয় দাবি করেন, তার মা শেখ হাসিনা গুলি চালানোর কোনো নির্দেশনা দেননি। তার মতে, সরকার একটি বড় বিষয়। প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শেখ হাসিনা ছাত্রদের ওপর গুলি চালানোর পক্ষে ছিলেন না। যে বা যারা গুলি চালিয়েছেন তাদের আইনের আওতায় আনার দাবিও তোলেন তিনি।

জয়ের দাবি, পুলিশ সহিংসতা বন্ধ করার চেষ্টা করেছে, কিন্তু কিছু পুলিশ অফিসার অতিরিক্ত শক্তি প্রয়োগ করেছে।

সাক্ষাৎকারে দল এবং দেশের জনগণ চাইলে মায়ের অবসরের পর আওয়ামী লীগের হাল ধরতে পারেন বলে জানান জয়। তিনি বলেন, দল যদি আমাকে চায়, আমি অবশ্যই বিবেচনা করব। আরেক প্রশ্নে জয় বলেন, যখন ইচ্ছা তিনি দেশে ফিরতে পারেন। তিনি কখনও কোনো অন্যায় করেননি জানিয়ে পাল্টা প্রশ্ন করে বলেন, তাহলে আমি দেশে ফিরতে চাইলে কেউ ঠেকাতে যাবে কেন?

শেখ হাসিনা দেশে ফিরে যেকোনো বিচারের মুখোমুখি হতে প্রস্তুত বলেও জানান জয়। তিনি বলেন, গ্রেফতারের হুমকিতে আমার মা আগে কখনো ভয় পাননি। আমার মা কোনো অন্যায় করেননি। শুধু তার সরকারের লোকেরা বেআইনি কাজ করেছে, তার মানে এই নয় যে, আমার মা আদেশ দিয়েছেন এবং এজন্য তিনি দায়ী।

গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠায় আওয়ামী লীগকে প্রয়োজন উল্লেখ করে জয় বলেন, আমাদের সাহায্য ছাড়া, আমাদের সমর্থক ছাড়া আপনারা দেশে কখনও স্থিতিশীলতা ফেরাতে পারবেন না।

রয়টার্সের দেয়া তথ্যমতে, সরকারি চাকরির কোটা সংস্কারের দাবিতে শুরু হওয়া শিক্ষার্থী ও চাকরিপ্রত্যাশীদের আন্দোলন আগস্টের শুরুতে সরকার পতনের আন্দোলনে পরিণত হয়। জেলায় জেলায় সহিংসতায় মাত্র তিন সপ্তাহের মধ্যে প্রায় তিনশ মানুষের প্রাণ যায়। ৫ অগাস্ট আন্দোলনারীদের ঢাকামুখী লংমার্চের মধ্যে শেখ হাসিনার দেশত্যাগের খবর আসে। সেদিন বিকালে সেনাপ্রধান ওয়াকার-উজ-জামান সাংবাদিকদের বলেন, পদত্যাগ করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

প্রথমে হেলিকপ্টর ও পরে সামরিক বিমানে চড়ে আগরতলা হয়ে সেদিন রাতেই দিল্লি পৌঁছান বাংলাদেশের টানা ১৫ বছরের প্রধানমন্ত্রী। এখনও তিনি সেখানেই আছেন বলে জানিয়েছে রয়টার্স।