উত্তরে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থীর ছড়াছড়ি

SHARE

city22ঢাকা সিটি করপোরেশন (ডিসিসি) নির্বাচনে উত্তরের কাউন্সিলর পদে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থীর ছড়াছড়ি। ৩৬টি সাধারণ ওয়ার্ডের মধ্যে ৩৪টিতেই দল সমর্থিতদের বিরুদ্ধে একাধিক বিদ্রোহী প্রার্থী রয়েছেন। একটি ওয়ার্ডে প্রার্থী রয়েছেন ৮ জন। অন্য ওয়ার্ড থেকে বিদ্রোহী প্রার্থী হয়েছেন ৬ জন। সব মিলিয়ে ওয়ার্ডপ্রতি গড়ে প্রায় ৩ জন করে বিদ্রোহী প্রার্থী নির্বাচনী মাঠে রয়েছেন।

গত বুধবার রাতে প্রেস বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে দল সমর্থিত কাউন্সিলর প্রার্থীর তালিকা প্রকাশ করা হয়। এতে উত্তর সিটির ৩৬টি সাধারণ ও ১২টি সংরক্ষিত নারী এবং দক্ষিণ সিটির ৫৭টি সাধারণ ও ১৯টি সংরক্ষিত নারী ওয়ার্ড কাউন্সিলর পদে দলীয় সমর্থন পাওয়া প্রার্থীদের নাম জানানো হয়। তবে ওই রাতেই এই প্রার্থী তালিকার বিরুদ্ধে ক্ষোভ-বিক্ষোভ প্রকাশের পাশাপাশি মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের আহ্বান উপেক্ষা ও প্রার্থিতা অব্যাহত রাখার ঘোষণা দিয়ে রাখেন অনেক প্রার্থী। পরে দায়িত্বপ্রাপ্ত কেন্দ্রীয় নেতারাসহ ক্ষেত্রবিশেষে দল সমর্থিত প্রার্থীদের অনুরোধ, এমনকি নানা চাপ ও প্রলোভন উপেক্ষা করেই ‘বিদ্রোহী প্রার্থী’ হিসেবে নির্বাচনী লড়াইয়ে রয়ে যান তারা।

নেতারা বলছেন, দীর্ঘ ১৩ বছর পর এই নির্বাচনে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের প্রধান প্রতিপক্ষ বিএনপি অনেকটা অপ্রস্তুত অবস্থায় অংশ নিচ্ছে। বেশিরভাগ ওয়ার্ডে তাদের কাউন্সিলর প্রার্থীদের বিরুদ্ধে অসংখ্য মামলা থাকায় আত্মগোপনে রয়েছেন। তারা কার্যত নির্বাচনী প্রচার ও গণসংযোগে অংশ নিতে পারছেন না। কয়েকটি ওয়ার্ডে কাউন্সিলর প্রার্থী দিতেই পারেনি বিএনপি। এ অবস্থায় একক প্রার্থী নিয়ে মাঠে থাকা গেলে আওয়ামী লীগের বিজয় সুনিশ্চিত ছিল। কিন্তু প্রায় প্রতিটি ওয়ার্ডেই যে হারে বিদ্রোহী প্রার্থী হয়েছেন, তাতে দল দুশ্চিন্তাগ্রস্ত হয়ে পড়েছে।

জানতে চাইলে উত্তর সিটি করপোরেশনে আওয়ামী লীগের নির্বাচন পরিচালনা কমিটির সমন্বয়কারী লে. কর্নেল (অব.) ফারুক খান এমপি সমকালকে বলেছেন, আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থী তালিতা চূড়ান্ত করে প্রকাশ করেছে। এই তালিকার বাইরে দলীয় কোনো প্রার্থী নেই। কেউ দাবি করলে শৃঙ্খলাভঙ্গের অভিযোগ এনে দল থেকে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।প্রার্থী পরিবর্তন :এদিকে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে ৯ নম্বর ওয়ার্ডে আওয়ামী লীগ সমর্থিত কাউন্সিলর প্রার্থী পরিবর্তন করা হয়েছে। এখানে আগে সমর্থন পাওয়া লুৎফর রহমানের বদলে মুজিব সরোয়ার মাসুমকে সমর্থন দেওয়া হয়েছে। গতকাল শুক্রবার এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে এই পরিবর্তনের কথা জানানো হয়।

উত্তরে যারা বিদ্রোহী প্রার্থী :উত্তর সিটির ১ নম্বর সাধারণ ওয়ার্ডে কাউন্সিলর পদে দলীয় সমর্থন পেয়েছেন আফছার উদ্দিন খান। তার বিরুদ্ধে দলীয় ৬ জন বিদ্রোহী প্রার্থী রয়েছেন। এরা হচ্ছেন এম. ফয়সাল আমিন মিলন, মামুন সিরাজুর রহমান, মামুন সরকার, মোস্তাফিজুর রহমান, হারুন অর রশিদ ও আনোয়ারুল ইসলাম।২ নম্বর ওয়ার্ডে কদম আলী মাদবর দলীয় সমর্থন পেলেও বিদ্রোহী হয়েছেন ইসমাইল হোসেন ও মো. মমিন। ৩ নম্বরে দল সমর্থিত প্রার্থী কাজী জহিরুল ইসলাম মানিকের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করেছেন মামুন মজুমদার, মুজিবুর রহমান, আয়নাল হক, বাহাউদ্দিন বাহার ও রফিকুল ইসলাম জামিম। ৪ নম্বরে দল সমর্থিত জামাল মোস্তফার বিরুদ্ধে প্রার্থী হয়েছেন কাজী আবুল হোসেন, মতিউর রহমান মাইকেল ও সামসুদ্দিন শেখ। ৫ নম্বরে আবদুর রউফ নান্নুর বিরুদ্ধে মাঠে রয়েছেন দেলোয়ার হোসেন ও নূর ইসলাম খান খোকন। ৬ নম্বরে আতিকুল ইসলাম আতিক দলের সমর্থন পেলেও বিদ্রোহী হিসেবে রয়ে গেছেন আবু বকর সিদ্দিক ও সালাউদ্দিন রবিন।

৭ নম্বরে মোবাশ্বের চৌধুরীর বিরুদ্ধে আবদুস সোবহান; ৮ নম্বরে কাজী টিপু সুলতানের বিরুদ্ধে আবুল কাশেম মোল্লা আকাশ ও শাহজাহান তালুকদার মিয়া; ৯ নম্বরে মুজিব সরোয়ার মাসুমের বিরুদ্ধে লুৎফর রহমান (আগে দলীয় সমর্থন পেলেও গতকাল পরিবর্তন করা হয়েছে), এম. এ. সেলিম খান ও আবুল হোসেন; ১০ নম্বরে আবু তাহেরের বিরুদ্ধে আবুল খায়ের, এবিএম মাজহারুল আনাম ও মোহাম্মদ নাদির চৌধুরী; ১১ নম্বরে গাজী অলিয়ার রহমান বাবুলের বিরুদ্ধে একেএম দেলোয়ার হোসেন, দেওয়ান আবদুল মান্নান, মির জসীম উদ্দিন ও মামুন মিয়া শাহজাহান; ১২ নম্বরে শিরিন রুখসানার বিরুদ্ধে ওয়াজ উদ্দিন, খোরশেদ আলম ও মোহাম্মদ ইকবাল হোসেন তিতু; ১৩ নম্বরে নাজমুল আলম ভূঁইয়া জুয়েলের বিরুদ্ধে হারুন অর রশিদ মিঠু; ১৪ নম্বরে রেজাউল হক ভূঁঁইয়া বাহারের বিরুদ্ধে এসএম আবুল কাশেম, জহিরুল ইসলাম, জাকির হোসেন ও রবেল মিয়া; ১৫ নম্বরে হাজী আজমত দেওয়ানের বিরুদ্ধে সালেক মোল্লা ও আবদুর রব মাইজভাণ্ডারী; ১৬ নম্বরে মাহমুদা বেগম কৃকের বিরুদ্ধে আবুল হাসেম হাসু, রফিকুল ইসলাম, মতিউর রহমান মোল্লা ও মোহাম্মদ আজিজুর রহমান স্বপন; ১৭ নম্বরে ডা. জিন্নাত আলীর বিরুদ্ধে ইসহাক মিয়া ও রাকিব আহসান, ১৮ নম্বরে জাকির হোসেন বাবুলের বিরুদ্ধে গোলাম কাদের, বিলকিস আলম, কফিল উদ্দিন ও মোহাম্মদ আফরোজ-এ-হাবিব; ১৯ নম্বরে মফিজুর রহমান মুক্তিযোদ্ধার বিরুদ্ধে ফারুক রাজা; ২০ নম্বরে হাজী মোহাম্মদ আসলামের বিরুদ্ধে মো. নাছির; ২১ নম্বরে ওসমান গনির বিরুদ্ধে গোলাম মোস্তফা; ২২ নম্বরে হাজী লিয়াকত আলীর বিরুদ্ধে এবিএম আহম্মদ উল্যা পপ্পী ও নূরুল ইসলাম; ২৩ নম্বরে সরদার ফায়সাল বাশার ফুয়াদের বিরুদ্ধে মাহাবুব ফয়েজ, নীলুফা ইয়াসমীন নীলু ও মোস্তাক আহমেদ; ২৪ নম্বরে সফিউল্লাহ শফির বিরুদ্ধে তালুকদার সারওয়ার হোসেন এবং ২৭ নম্বরে ফরিদুর রহমান খান ইরানের বিরুদ্ধে আমির হোসেন বিদ্রোহী প্রার্থী হয়েছেন।২৮ নম্বর ওয়ার্ডে ফোরকান হোসেন দলীয় সমর্থন পেলেও তার বিরুদ্ধে সর্বোচ্চ ৮ জন বিদ্রোহ করে প্রার্থিতা বহাল রেখেছেন। এরা হচ্ছেন_ এএইচএম কামরুজ্জামান, খোন্দকার রোমানা হাসান, গাজী ওবায়দুর রহমান নান্না, আনোয়ার হোসেন মিন্টু, নজরুল ইসলাম সিকদার, অ্যাডভোকেট নাজিম উদ্দিন জামশেদ, মোহাম্মদ শিবলী সাদেক ও সান্টু রহমান দুলাল।

এ ছাড়া ২৯ নম্বরে সলিমুল্লাহ সলুর বিরুদ্ধে নূরুল ইসলাম রতন; ৩০ নম্বরে মোহাম্মদ আরিফুর রহমান তুহিনের বিরুদ্ধে হাজী আবুল হাসেম হাসু ও সালাহ উদ্দিন; ৩১ নম্বরে এসএম ইমতিয়াজ খান বাবুলের বিরুদ্ধে জসিম উদ্দিন, গোলাম কিবরিয়া ভূঁইয়া অপু ও শেখ শফিউল আলম মানিক; ৩২ নম্বরে হাবিবুর রহমান মিজানের বিরুদ্ধে মাসুদ রানা শাহীন ও সৈয়দ সিরাজউদ্দীন; ৩৩ নম্বরে শেখ বজলুর রহমানের বিরুদ্ধে আবু সাঈদ বেপারী, একেএম অহিদুর রহমান, এমএ হালিম বাদশাহ ও তারেকুজ্জামান রাজিব; ৩৪ নম্বরে আবু তাহের খানের বিরুদ্ধে কামাল উদ্দিন ও নুরুল হক; ৩৫ নম্বরে মোক্তার সরদারের বিরুদ্ধে ফয়জুল মুনির চৌধুরী ও মোহাম্মদ মোখলেসুর রহমান এবং ৩৬ নম্বরে তৈমুর রেজা খোকনের বিরুদ্ধে বড়ূয়া মনোজিত ধীমন, ইসলাম চৌধুরী আজাদ ও সালাহ উদ্দিন বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে রয়ে গেছেন।তবে উত্তর সিটির কাউন্সিলর পদে দলীয় সমর্থন পাওয়া ২৫ নম্বর ওয়ার্ডে শেখ মুজিবুর রহমান এবং ২৬ নম্বর ওয়ার্ডে শামীম হাসান আওয়ামী লীগের একক প্রার্থী হিসেবে রয়েছেন।