অগ্নিসন্ত্রাসীদের ছাড় দেওয়ার কোনো সুযোগ নেই : প্রধানমন্ত্রী

SHARE

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, জনগণের জানমাল রক্ষায় অগ্নিসংযোগকারীদের ছাড় দেওয়ার কোনো সুযোগ নেই।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আজ রোববার সকালে গণভবনে এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষার ফল প্রকাশের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধনকালে বলেন, ‘অগ্নিসংযোগ ও ভাঙচুরের সঙ্গে যারা জড়িত তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তাদের ছাড় দেওয়ার কোনো সুযোগ নেই।’
এর আগে শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি এবং মাদরাসা ও কারিগরি শিক্ষাবোর্ড সহ ১১টি শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যানগণ ২০২৩ সালের উচ্চ মাধ্যমিক সার্টিফিকেট (এইচএসসি) ও সমমানের পরীক্ষার ফলাফল প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে হস্তান্তর করেন।
শেখ হাসিনা বলেন, যারা মানুষ পুড়িয়ে মারবে বা গাড়ি, রেল, যানবাহন পোড়াবে বা অগ্নি সংযোগ করবে বা যারা হুকুমদাতা বা অর্থদাতা তাদের বিরুদ্ধে আমাদের আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারি বাহিনী যথাযথ ব্যবস্থা নেবে। কারন আমরা যদি সেই ব্যবস্থা না নেই এই জ্বালাপোড়াও তো তারা চালাতেই থাকবে।
তিনি বলেন, আমি দেখি অনেকেই বলেন কেন এদের অ্যারেস্ট করা হলো। কিন্তু তারা এটা বলে না এরা অগ্নিসন্ত্রাসী, এরা পুলিশ হত্যা করেছে, মানুষ হত্যা করেছে। আর এখন ডিজিটাল যুগ সাধারণ মানুষই এদের ভিডিও তুলে রাখে এবং সাথে সাথে সেই ছবিও পাওয়া যায় এবং এই সন্ত্রাসীরা একেবারে চিহ্নিত। কাজেই যারাই সন্ত্রাসী কর্মকা- বা ভাঙচুরে জড়িত তাদের বিরুদ্ধে অবশ্যই আমাদের যথাযথ ব্যবস্থা নিতে হবে। মানুষের স্বার্থে, জনগণের স্বার্থে, জনগণের সুরক্ষা ও নিরাপত্তার স্বার্থে এবং সেটাই আমাদের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী করে যাচ্ছে এবং সেটাই করা হবে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘যারা এভাবে মানুষকে পোড়াবে, মানুষের সম্পদ নষ্ট করবে, জাতীয় সম্পদ নষ্ট করবে তাদের ছাড় দেওয়ার কোনো সুযোগ আছে বলে আমি মনে করি না।’
তিনি বলেন, আমি আশা করি, এদের অন্তত শুভ বুদ্ধির উদয় হবে এবং তারা এগুলো বন্ধ করবে। আর বন্ধ না করলে যা ব্যবস্থা নেওয়ার সেটা আমাদের নিতেই হবে। এটা হল বাস্তবতা। শুধু দুঃখ লাগে আমাদের ছেলে-মেয়েগুলো তাদের ফাইনাল পরীক্ষাটা ভালোভাবে দিতে পারল না।
শেখ হাসিনা বিএনপি ও সমমনা দলগুলোর কর্মসূচি সম্পর্কে বলেন, যতক্ষণ তারা সঠিকভাবে রাজনৈতিক কর্মসূচি করেছে ততক্ষণ কিন্তু তাদের কোন অসুবিধা ছিল না এবং এতে করে বিএনপি এবং তাদের সমমনা রাজনৈতিক দলগুলোর ভাবমূর্তিও বৃদ্ধি পেয়েছিল। কিন্তু এই সন্ত্রাসী কর্মকান্ডগুলো পরিচালনা করার পর এখন জনগণ থেকে তারা সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন।
অনুষ্ঠানে শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপুমনি এবং শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী বক্তৃতা করেন।

চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের উপযোগী করে দক্ষ জনশক্তি আমাদের গড়ে তুলতে হবে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, তারা দেশে-বিদেশে যেখানে কাজ করুক না কেন, মাতৃভাষার সঙ্গে তাদের একটি বা দুটি অন্য ভাষা শিখানোর জন্য পদক্ষেপ নিতে হবে। তাতে সারা বিশ্বে আমাদের কর্মসংস্থানের আরো সুযোগ হবে। আজকাল ফ্রিল্যান্সিং এর মাধ্যমে নিজস্ব ইউনিয়নে বসে অনেকেই বিদেশে কাজ করে অর্থ উপার্জন করছে।
তিনি বলেন, এখন প্রযুক্তির যুগ। প্রযুক্তির সঙ্গে তাল মিলিয়ে আমাদের চলতে হবে। সেজন্য তাদের শিক্ষাটাও প্রযুক্তিনির্ভর এবং বহুমুখীকরণ করা দরকার।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ৯৬ সালে তার সরকার শিক্ষার হার পেয়েছিল দেশে ৪৪ শতাংশ। আওয়ামী লীগ সরকার এটি ৬৫ শতাংশে নিয়ে এসেছিল, বিএনপি জামাত সরকার ২০০১ পরবর্তী সময়ে তাঁর সরকারের রেখে যাওয়া শিক্ষার হার ৬৫ শতাংশ থেকে আবার ৪৫ ভাগে নামিয়ে ফেলে। যাকে সরকার টানা তিন মেয়াদের শাসনে ৭৬.০৮ ভাগে উন্নীত করেছে।
জানুয়ারি মাসের মধ্যে নির্বাচন আয়োজনের সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতা থাকায় তিনি আশা করেছিলেন নভেম্বরের মধ্যেই স্কুলের পরীক্ষাগুলো শেষ হয়ে যাবে। কিন্তু বিএনপি’র অবরোধ এবং জ্বালাও-পোড়াও এবং সন্ত্রাসের কারণে সেটি ব্যাহত হওয়ায় তিনি দুঃখ প্রকাশ করেন।
ছেলে-মেয়েদের লেখাপড়াটা যেন অব্যাহত থাকে সেজন্য সংশ্লিষ্ট মহল যথাযথ ব্যবস্থা নেবেন বলেও তিনি আশবাদ ব্যক্ত করেন।
২০১৩ এবং ১৪ সালে নির্বাচন বানচালের নামে জ্বালাও পোড়াও এবং অগ্নিসন্ত্রাসের উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, কোনো দিনও কোনো রাজনৈতিক দলের অধিকারে তাঁর সরকার হস্তক্ষেপ করেনি। সে সময় তিন হাজারের মতো মানুষ তারা পুড়িয়েছে। সেখানে বহু মানুষ পুড়ে মারা গেছে, এখনো সেই আগুনে পোড়া শরীর নিয়ে অনেকে যন্ত্রনাকাতরভাবে দিন কাটাচ্ছে। বাস, ব্যক্তিগত যানবাহন, লঞ্চ, স্টিমার, ট্রেন এমনকি স্কুল, সরকারি দপ্তর কিছুই সে অগ্নিসন্ত্রাস থেকে বাদ যায়নি।
তিনি বলেন, সে সময় যারা আসামি ছিল বা পলাতক ছিল যখন এই বিএনপি এবং তাদের রাজনৈতিক সমমনা দলগুলো আবারো তাদের রাজনৈতিক কর্মকান্ড শুরু করেছে তারা বহাল তবিয়তে ফিরে এসেছে। শান্তিপূর্ণ সভা যখন করেছে তাদেরকে কোন বাধা দেওয়া হয়নি। কিন্তু তারা আবার সেই জ্বালাও পোড়াও শুরু করল বিশেষ করে ২৮ অক্টোবর থেকে তাদের যে সন্ত্রাসী কর্মকা- সেখানে প্রধান বিচারপতির বাসভবনে হামলা, সেখানে ভাঙচুর করা, জাজেজ কোয়াটারে ভাঙচুর করা ও হামলা, পুলিশকে পিটিয়ে হত্যা, পুলিশ হসাপতালে হামলা, অ্যাম্বুলেন্স, বাস সহ বিভিন্ন যানবাহনে অগ্নিসংযোগ করা, রেললাইন কেটে রেখে দিয়েছে যেন রেলের বগি পড়ে দুর্ঘটনা ঘটে। স্থানীয় জনগণ সচেতন থাকায় তারা সঙ্গে সঙ্গে যথাযথ স্থানে বিষয়গুলো অবহিত করায় বড় দুর্ঘটনা থেকে রেল রক্ষা পেয়েছে। তারপরও তারা আমাদের কমিউটার ট্রেন পুড়িয়েছে, সাংবাদিকদের উপর হামলা ও নির্যাতন করেছে, মহিলাদের উপর আক্রমণ করেছে। আর এখনতো প্রতিদিন অগ্নিসন্ত্রাস করেই যাচ্ছে। ফলে ছেলেমেয়েদের স্কুলে পাঠানোয় একটি ভীতিকর অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে।
‘কাজেই জনস্বার্থে এদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা আমাদের নিতেই হবে,’ দৃঢ়কন্ঠে সতর্কবাণী পুনব্যক্ত করেন প্রধানমন্ত্রী।
তিনি বলেন, আমি চাই আমাদের ছেলেমেয়েরা একটা উন্নত জীবন পাক। সুস্বাস্থ্যের অধিকারি হোক এবং সুন্দরভাবে তারা বেড়ে উঠুক।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি শিক্ষার মাধ্যমে আমরা যে স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ে তোলার ঘোষণা দিয়েছি তারই সৈনিক হিসেবে নিজেদের গড়ে তুলুক’।
বিএনপির অবরোধ-হরতাল এবং জ¦ালাও পোড়াওয়ের মধ্যেও নির্ধারিত ৬০ দিনের মধ্যে পরীক্ষার ফল প্রকাশ করতে পারায় তিনি শিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং সংশ্লিষ্ট শিক্ষা বোর্ডগুলোকে ধন্যবাদ জানান।
এবারের পরীক্ষার ফলে মেয়েরা এগিয়ে থাকায় তিনি তাদের অভিনন্দন জানিয়ে ছেলেরাও পিছিয়ে থাকবেনা বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন। কৃতকার্যদের অভিনন্দন জানানোর পাশাপাশি অকৃতকার্য হওয়া শিক্ষার্থীদের পাঠে আরা মনোনিবেশ করার মাধ্যমে আগামীতে ভাল ফল করার আহবান জানান এবং তাদেরকে এজন্য পরিবারের পক্ষ থেকে তিরস্কার না করে বরং সমব্যাথী হিসেবে পাশে থেকে প্রেরণা যোগানোর জন্যও সংশ্লিষ্ট অভিভাবকগণের প্রতি আহবান জানান প্রধানমন্ত্রী।
খবর বাসস