প্রশ্নের মুখে ভারতের বাংলাদেশ সফর

SHARE

srini lotassএমনটাই ইঙ্গিত দিল ভারতের কলকাতার দৈনিক আনন্দবাজার পত্রিকা। আজ এই পত্রিকাটি ‘কামালের জেহাদে প্রশ্নের মুখে বাংলাদেশ সফর’ শিরোনামে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে এমনটাই বলেছে।

আনন্দবাজার লিখেছে, আইসিসি-র প্রেসিডেন্ট পদ থেকে ইস্তফা দেওয়ার পর নারায়ণস্বামী শ্রীনিবাসনকে ‘মানসিক বিকারগ্রস্ত’ বলে আক্রমণ করলেন মুস্তাফা কামাল। জানিয়েও দিলেন, এখন থেকে ক্রিকেট প্রশাসনে তার এক নম্বর শত্রুর নাম শ্রীনিবাসন।

আইসিসি-র গঠনতন্ত্রকে অস্বীকার করে রোববার বিশ্বকাপ ফাইনালের পর আইসিসি প্রেসিডেন্টকে সরিয়ে মাইকেল ক্লার্কের হাতে কাপ তুলে দিয়েছিলেন শ্রীনি। বুধবার ইস্তফা দেওয়ার পর সেই শ্রীনিকেই তীব্র আক্রমণ করলেন কামাল। যার পরে প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে, ভারত-বাংলাদেশ ক্রিকেট সম্পর্ক এর ফলে সঙ্কটে পড়ে গেল না তো? যে ভারত বাংলাদেশকে টেস্ট স্বীকৃতি পেতে সবচেয়ে বেশি সাহায্য করেছিল, সেই ভারতই এ বার আদোও বাংলাদেশে টেস্ট সফরে যাবে ?

এ দিন মুস্তাফা কামালের ইস্তফার খবর ছড়িয়ে পড়ার পর ভারতীয় ক্রিকেট মহলে এই প্রশ্ন উঠে গেল। জুনে ভারতীয় দলের বাংলাদেশ সফরে যাওয়ার কথা। কামাল-শ্রীনি সংঘাতের পর কি সেই সফর হবে? যদিও বোর্ডকর্তারা এই নিয়ে সরকারি ভাবে কিছু বলতে নারাজ। তবে ওয়াকিবহাল মহলের ইঙ্গিত, সাম্প্রতিক এই ঘটনায় ভারত-বাংলাদেশ সিরিজ নিয়ে প্রশ্ন উঠে গেল। একটা অংশ মনে করছে, আইসিসি-তে যেহেতু ভারতীয় বোর্ডের মনোনীত প্রতিনিধি শ্রীনি নিজে এবং তিনিই আইসিসি-র সর্বক্ষমতাসম্পন্ন চেয়ারম্যান, তাই জুনে ভারতের বাংলাদেশ সফর বাতিল করিয়ে এই অপমানের প্রতিশোধ নেওয়ার চেষ্টা অবশ্যই তিনি করবেন।

বুধবার দেশে ফিরে বাংলাদেশ মিডিয়ার সামনে শ্রীনিবাসন সম্পর্কে বেশ কিছু আক্রমণাত্মক মন্তব্য করার পর রাতে ঢাকা থেকে ফোনে আনন্দবাজারকে মুস্তাফা কামাল বলেন, ‘‘ওই লোকটার সঙ্গে এক টেবলে বসে বৈঠক করা আর সম্ভব নয়। শ্রীনি তো মানসিক বিকারগ্রস্থ। কোনও কথার সদুত্তর দিতে পারে না। চোখের দিকে তাকিয়ে কথা পর্যন্ত বলতে পারে না। এমন লোককে না সরালে ক্রিকেটটা শেষ হয়ে যাবে। আর আমি গর্বিত যে এই লোকটার বিরুদ্ধে জেহাদ ঘোষণার শুভ সূচনা আমিই করেছি। এ বার বাংলাদেশের মানুষ আমার হয়ে লড়াই করবে। কারণ, ও শুধু আমাকে অপমান করেনি, বাংলাদেশকেও অপমান করেছে।’’

কামালের এই মন্তব্যের পর ভারত-বাংলাদেশ ক্রিকেট সম্পর্ক কোন জায়গায় গিয়ে দাঁড়াবে, সেই প্রসঙ্গে এক বোর্ডকর্তা এ দিন বলেন, ‘‘মনে হয় সম্পর্কটা বেশ সঙ্কটে পড়ে গেল।’’ বোর্ড প্রেসিডেন্ট জগমোহন ডালমিয়া এ দিন কামালের মন্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে কিছু বলতে চাননি। এ দিন বোর্ডসচিব অনুরাগ ঠাকুর আসন্ন ভারত-বাংলাদেশ সিরিজ নিয়ে ফোনে বলেন, ‘‘সফরটা নিয়ে আগে আমাকে কথা বলতে হবে বোর্ডের বৈঠকে। তার পর বলতে পারব।’’ শোনা গেল দিন সাতেকের মধ্যেই বোর্ডের বৈঠক হতে পারে ও তাতে এই নিয়ে আলোচনা হতে পারে।

তবে জুনে ভারতের প্রস্তাবিত এই সফর যদি বাতিল হয়, তা হলে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড তাদের দেশের সরকারের সাহায্য নিয়ে যথাযথ ব্যবস্থা নেবে বলে জানিয়ে রাখলেন বাংলাদেশ সরকারের অন্যতম মন্ত্রী কামাল। তিনি বলেন, ‘‘লড়াইটা শ্রীনির বিরুদ্ধে। ভারতীয় বোর্ডের বিরুদ্ধে নয়। তা হলে ভারতের বাংলাদেশ সফর বাতিল হবে কেন? তাও যদি হয়, তা হলে আমাদের বোর্ড পদক্ষেপ করবে। সরকারও সঙ্গে থাকবে। লিখে রাখতে পারেন, শ্রীনি ক্ষমতাধর হতে পারে। আমিও কিন্তু শক্তিশালী। এর শেষ দেখেই ছাড়বে বাংলাদেশের মানুষ।’’

আইসিসি-কে দেওয়া ইস্তফাপত্রে নাকি কামাল ব্যক্তিগত কারণ দেখিয়ে পদত্যাগ করেছেন বলে এ দিন জানায় বিশ্ব ক্রিকেটের সর্বোচ্চ নিয়ামক সংস্থা। তা কাযর্ত স্বীকার করে নিয়ে কামাল বলেন, ‘‘ক্রিকেট ভালবাসি। ক্রিকেটকে পরিচ্ছন্ন রাখতে চাই। তাই চিঠিতে আসল কারণটা লিখতে পারিনি। আইসিসি প্রেসিডেন্টের পক্ষে যা অনৈতিক, তা করব কেন?’’ তা হলে বিশ্বকাপে ভারত-বাংলাদেশ ম্যাচের আম্পায়ারিং, আইসিসি-র একপেশে মনোভাব নিয়ে বিস্ফোরক মন্তব্য করলেন কেন? উত্তেজিত হয়ে কামাল বলেন, ‘‘কেন বলব না? বিশ্বকাপের ওই একমাত্র ম্যাচে স্পাই ক্যাম ছিল না, খেয়াল করেছেন। আর কী কী হয়েছে, তা তো আগেই বলেছি। শ্রীনি অন্যায় করেছে বলেই সে দিন মেলবোর্নের গ্যালারি থেকে ওর প্রতি কটূক্তি ভেসে এসেছে। মানুষ অন্যায় সহ্য করেনি। করবেও না।’’