টাকা ফেরত নিল বিশ্বব্যাংক

SHARE

world bank17দুর্নীতির অভিযোগে চলমান আট প্রকল্প থেকে অর্থ ফেরত নিয়েছে বিশ্বব্যাংক। ফেরত নেওয়া অর্থের পরিমাণ ১৫ কোটি ৬৩ লাখ ৪৪ হাজার টাকা। এ ব্যাপারে অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগকে দেওয়া চিঠিতে বিশ্বব্যাংক জানিয়েছে, তাদের নিজস্ব তদন্তে প্রকল্পগুলোতে ক্রয়সংক্রান্ত দুর্নীতির প্রমাণ পাওয়ায় এ অর্থ তারা ফিরিয়ে নিয়েছে। চিঠিতে ভবিষ্যতে ক্রয়সংক্রান্ত বিষয়ে মন্ত্রণালয়গুলোকে আরও সতর্ক হতে এবং ওই অনিয়মের সঙ্গে জড়িতদের যথাযথ শাস্তি নিশ্চিত করতে পরামর্শ দিয়েছে বিশ্বব্যাংক। অভিযোগ আমলে নিয়ে সরকারি কোষাগার থেকে বিশ্বব্যাংককে অর্থ ফেরত দিলেও দুর্নীতির দায়ে অভিযুক্ত কারও বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বিশ্বব্যাংককে অর্থ ফেরত দেওয়ার পাশাপাশি মূল ঋণের সুদহার বলবৎ থাকছে। ফেরত নেওয়া অর্থের পরিমাণ কম হলেও দুর্নীতির তকমা জড়াতে এগুলোই যথেষ্ট। অনিয়ম প্রমাণিত হওয়ায় বিশ্বব্যাংক এসব
প্রকল্প নিয়ে হতাশ হয়ে পড়ছে।
প্রাপ্ত তথ্য মতে, কেনাকাটায় অর্থ আত্মসাতের কারণে পরিবেশ মন্ত্রণালয়ের আওতায় বাস্তবায়নাধীন ‘ক্লিন এয়ার অ্যান্ড সাসটেইনেবল এনভায়রনমেন্ট’ প্রকল্পে ১ লাখ ৮২ হাজার টাকা ফেরত নিয়েছে বিশ্বব্যাংক। বিশ্বব্যাংক এবং অধিদপ্তরের তদন্তে দেখা গেছে, পরিবেশ অধিদপ্তরের এ প্রকল্পের বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা গোলাম সরোয়ার, উপ-প্রকল্প কর্মকর্তা রেজওয়ান হায়াত, প্রকিউরমেন্ট কনসালট্যান্ট জহুরুল ইসলাম ও শামসুর রহমান কেনাকাটায় ভুয়া বিল-ভাউচারে এ অর্থ আত্মসাৎ করেন। প্রকল্প এলাকা পরিদর্শনে না গিয়েও সংশ্লিষ্টরা ভুয়া বিল-ভাউচারে অর্থ আত্মসাৎ করেন। পরিবেশ অধিদপ্তর এ ঘটনায় অধিদপ্তরের পরিচালক তৌফিকুল আরিফকে আহ্বায়ক করে তিন সদস্যের তদন্ত কমিটিও গঠন করে। এ বিষয়ে প্রকল্প পরিচালক ড. নাসির উদ্দিন সমকালকে বলেন, প্রকল্পের শুরুতে তাকে পরিবেশ মন্ত্রণালয়েও অতিরিক্ত দায়িত্ব পালন করতে হয়। সে সময় প্রকল্পের কেনাকাটায় কিছু অনিয়ম হয়ে থাকতে পারে। তবে তখন কেনাকাটায় বিশ্বব্যাংকের কোনো গাইডলাইন না থাকায় এ ঘটনা ঘটেছে। পরিবেশ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক রইছুল আলম মণ্ডল সমকালকে জানান, যেটুকু অনিয়ম হয়েছে, সে পরিমাণ টাকা অর্থ মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন সাপেক্ষে পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে গত ২২ ফেব্রুয়ারি বিশ্বব্যাংককে ফেরত দেওয়া হয়েছে।
প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের অধীনে বাস্তবায়নাধীন ‘এভিয়ান ইনফ্লুয়েঞ্জা প্রিপেয়ার্ডনেস অ্যান্ড রেসপন্স’ প্রকল্পে কেনাকাটায় অনিয়ম ধরা পড়ায় ২ কোটি ৭৮ টাকা ফেরত দিতে হয়েছে বিশ্বব্যাংককে। কেনাকাটার রসিদে আছে টিউবারসুলিন ইনজেকশনের একটি সিরিঞ্জের দাম এক হাজার ৩৭০ টাকা। অথচ সিরিঞ্জটির দাম মাত্র ১০০ টাকা। ২৫ টাকার ডিসপোজেবল হ্যান্ডগ্গ্নাভস কিনে রসিদে দাম দেখানো হয়েছে ৪৪০ টাকা। ঠিকাদার ও দোকানিদের সঙ্গে যোগসাজশ করে এ রকম নানা পণ্য কেনায় বাড়তি দাম দেখিয়ে অর্থ আত্মসাৎ করেছেন প্রতিষ্ঠানটির এক শ্রেণীর অসাধু কর্মকর্তা-কর্মচারী।
পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের ১০ কোটি ২২ লাখ ডলারের ‘ওয়াটার ম্যানেজমেন্ট ইমপ্রুভমেন্ট প্রজেক্ট’ প্রকল্পে গত ছয় বছরে ছাড় হয়েছে মাত্র তিন কোটি ৮৮ লাখ ডলার। কেনাকাটা ও দরপত্রজনিত অনিয়মের কারণে প্রকল্প থেকে ৪ কোটি ৩ লাখ টাকা ফেরত দিতে হয়েছে বিশ্বব্যাংকে। দুর্যোগ ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের ‘এমপ্লয়মেন্ট জেনারেশন প্রোগ্রাম ফর দ্য পুওরেস্ট’ প্রকল্প থেকে ১৩ লাখ ৬১ হাজার টাকা ফেরত দিতে হয়েছে। এইচএনপি সেক্টর ডেভেলপমেন্ট প্রকল্প থেকে ৩ কোটি ৯০ লাখ টাকা ফেরত নিয়েছে বিশ্বব্যাংক। হেলথ নিউট্রিশন অ্যান্ড পপুলেশন সেক্টর প্রোগ্রাম থেকে ৪ কোটি ২৬ লাখ ৫৭ হাজার টাকা ফেরত নিয়েছে বিশ্বব্যাংক। এ ছাড়া ‘প্রতিবন্ধী ও ঝুঁকিপূর্ণ শিশু’ প্রকল্পেও অনিয়মের কারণে ১৪ লাখ ৮৮০ টাকা ফেরত গেছে বিশ্বব্যাংকে। হায়ার এডুকেশন কোয়ালিটি ইমপ্র্রুভমেন্ট প্রকল্প থেকে ১৩ লাখ ৬১ হাজার টাকা ফেরত দিতে হয়েছে। বিশ্বব্যাংকের তদন্তে এ প্রকল্পের প্রথম তিন বছরেই প্রায় ৩৭ লাখ টাকা অগ্রহণযোগ্য (নন-এলিজিবল) ব্যয়ের প্রমাণ পাওয়া গেছে। বিভিন্ন উপ-প্রকল্প বাস্তবায়নের নামে এ ব্যয় দেখিয়ে মূলত আত্মসাৎ করা হয়েছে।
এ প্রসঙ্গে বিশ্বব্যাংকের ঢাকা অফিসের জনসংযোগ কর্মকর্তা মেহরীন এ মাহবুব সমকালকে জানান, বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নে চলমান প্রকল্পে কেনাকাটার ক্ষেত্রে যেটুকু অনিয়ম হয়, সেই পরিমাণ টাকা বিশ্বব্যাংককে ফেরত দিতে হয়। কিছু প্রকল্পে অনিয়ম হয়েছে। তবে এ টাকার পরিমাণ যৎসামান্য। তবে এ ধরনের অর্থ ফেরত পাওয়ার পর নতুন কোনো উপাদানে ব্যয়ের জন্য বিশ্বব্যাংকের পক্ষ থেকে ফের বরাদ্দ দেওয়া হয়।
অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ (ইআরডি) বিশ্বব্যাংক উইংয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত অতিরিক্ত সচিব কাজী শফিকুল আযম সমকালকে বলেন, ‘দাতাদের সঙ্গে ক্রয় নীতিমালা নিয়ে মতপার্থক্য রয়েছে। সেজন্য অনেক সময় কেনাকাটায় অনিয়মের অভিযোগ ওঠে। বিশ্বব্যাংকের চিঠি সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও প্রকল্পকে অবহিত করে বিশ্বব্যাংকের আপত্তিকৃত অর্থ ফেরত দেওয়া হয়েছে।