হজ ব্যবস্থাপনা সহজ ও উন্নত করেছে সরকার : প্রধানমন্ত্রী

SHARE

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় এসে হজ ব্যবস্থাপনায় বিশেষ পদক্ষেপ নেওয়ার ফলে তা সহজতর এবং উন্নত হয়েছে। সরকারের এ সফলতার ধারা আগামী দিনগুলোতেও অব্যাহত থাকবে।
আজ শুক্রবার (১৯ মে) রাজধানীর আশকোনা হজ ক্যাম্পে এ কার্যক্রম উদ্বোধন ঘোষণা করতে গিয়ে তিনি এ কথা বলেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, অতীতে হজ পালনে দুর্ভোগ, হজের অব্যবস্থাপনা, মধ্যস্বত্বভোগীদের দৌরাত্ম্য, হজযাত্রীদের হয়রানি, ভিসা জটিলতা, ফ্লাইট বিপর্যয় ইত্যাদি সমস্যা ছিল নিত্য-নৈমিত্তিক। আমরা এ সমস্যা দূর করতে ‘ই-হজ ব্যবস্থাপনা’ প্রবর্তন করেছি।
তিনি বলেন, আমরা ২০১০ সালে ৪০ লাখ টাকা ব্যয়ে প্রথমবারের মত জেদ্দা হজ টার্মিনালে প্লাজা ভাড়া করি। ২০০৯ সালে আমরা জেদ্দায় পৃথক হজ অফিস স্থাপন করে সেখানে একজন কাউন্সিলর ও একজন কনসাল জেনারেল নিয়োগ দিই। এর ফলে গত ১৪ বছরে হজ ব্যবস্থাপনায় হজযাত্রীদের সেবা প্রদান অনেক সহজতর ও উন্নততর হয়েছে।
হজ ব্যবস্থাপনার উন্নয়নে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের বিভিন্নমুখী পদক্ষেপের কথা তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, কম খরচে হজ পালনের জন্য তিনি হিজবুল বাহার জাহাজ ক্রয় করেন এবং বাংলাদেশ থেকে সমুদ্রপথে হজযাত্রী প্রেরণ করেন। দুঃখের বিষয় জিয়াউর রহমান ক্ষমতায় এসে এই হিজবুল বাহার জাহাজকে প্রমোদতরি বানিয়েছিলেন।
তিনি বলেন, জাতির পিতা ছিলেন খাঁটি মুসলমান। মাত্র সাড়ে তিন বছরের সরকারে তিনি ইসলামের উন্নয়নে ব্যাপক পদক্ষেপ নেন। জাতির পিতা মুসলিম বিশ্বসহ আরব দেশগুলোর সাথে সুসম্পর্ক স্থাপন করেন। ১৯৭৩ সালে আরব-ইসরাইল যুদ্ধে বঙ্গবন্ধু আরব বিশ্বের পক্ষে সমর্থন ব্যক্ত করেন এবং সাহায্য প্রেরণ করেন। তার কূটনৈতিক দূরদর্শীতায় বাংলাদেশ ১৯৭৪ সালে ওআইসির সদস্যপদ লাভ করে।
ইসলামের উন্নয়নে বঙ্গবন্ধুর নেওয়া বিভিন্ন পদক্ষেপ তুলে ধরে সরকারপ্রধান বলেন, জাতির পিতা ইসলামিক ফাউন্ডেশন ও মাদ্রাসা বোর্ড প্রতিষ্ঠা করেন। জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমের উন্নয়ন, সম্প্রসারণ ও সৌন্দর্য বৃদ্ধি করেন। তাবলীগ জামাতের জন্য কাকরাইল মসজিদে জমি দান করেন। টঙ্গীর তুরাগ নদীর তীরে বিশ্ব ইজতেমার জন্য জায়গা বরাদ্দ দেন। বেতার ও টেলিভিশনের অনুষ্ঠান শুরু ও সমাপ্তিতে কুরআন তিলাওয়াতের প্রচলন করেন। তিনিই প্রথম আইন করে মদ নিষিদ্ধ করেন; ঘোড়দৌড় ও জুয়া বন্ধ করেন। যে মদের লাইসেন্স বঙ্গবন্ধু বন্ধ করে দিয়েছিলেন তা জিয়ার আমলে উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ই-হজ ব্যবস্থাপনার আওতায় হজযাত্রীদের প্রাক-নিবন্ধন, নিবন্ধন, রিফান্ড, মক্কা রোড সার্ভিস, ই-হেলথ, ই-ভিসা, ফ্লাইট, হেল্পডেস্ক, কল সেন্টার, মোবাইল অ্যাপ, এজেন্সি প্রোফাইল ব্যবস্থাপনাসহ বিভিন্ন কার্যক্রম সম্পাদিত হয়েছে। হজবিষয়ক ওয়েব পোর্টাল এবং হজযাত্রীদের সেবা প্রদানকারী মোবাইল অ্যাপস প্রস্তুত করা হয়েছে। এর ফলে হজযাত্রীরা তাদের ভিসা, পাসপোর্ট, আবাসন, মেডিকেল সুবিধা, সৌদি আরব গমন, প্রত্যাগমন ইত্যাদি বিষয়ে সহজে সেবা গ্রহণ করতে পারছেন। ২০২২ সালে বাংলাদেশের হজ ব্যবস্থাপনা বিশ্বব্যাপী প্রশংসিত হয়েছে।
তিনি বলেন, ডিজিটাল হজ ব্যবস্থাপনার উদ্যোগ গ্রহণের ফলে সেবা প্রদানকারী ও গ্রহণকারীর সঙ্গে সরাসরি ডিজিটাল সম্পর্ক স্থাপিত হয়েছে। মধ্যসত্ত্বভোগী-প্রতারক চক্রের দৌরাত্ম্য হ্রাস পেয়েছে। আমরা জনগণকে সময়োচিত, দায়িত্বশীল, স্বচ্ছ ও জবাবদিহিমূলক হজ ব্যবস্থাপনা উপহার দিতে পেরেছি।
হজযাত্রীদের স্বাস্থ্য নিরাপত্তা নিশ্চিতে ই-হেলথ প্রোফাইল প্রবর্তনের কথা জানি শেখ হাসিনা বলেন, সৌদি আরবে অসুস্থ হজযাত্রীদের সুশৃঙ্খলভাবে সেবা প্রদানে কিউ ব্যবস্থাপনা সিস্টেম চালু করা হয়েছে। হজযাত্রীরা কোন প্রকার ভোগান্তি ছাড়াই সৌদি ই-ভিসা সিস্টেমের মাধ্যমে ভিসার আবেদন করে ভিসা সংগ্রহ করতে পারছেন। মক্কা রোড সার্ভিস-এর আওতায় বাংলাদেশি হজযাত্রীরা এ বছর থেকে শতভাগ হজযাত্রী সৌদি পর্বের ইমিগ্রেশন ঢাকায় হযরত শাহজালাল বিমানবন্দরে সম্পন্ন করতে পারবেন ফলে জেদ্দা হজ টার্মিনালে দীর্ঘ অপেক্ষা দূর হবে।
হজ ফ্লাইট ব্যবস্থাপনা ও মনিটরিংয়ের মাধ্যমে ফ্লাইট বিপর্যয় রোধ করা সম্ভব হচ্ছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, হজযাত্রীদের লাগেজ হারানো এবং এ বিষয়ক অব্যবস্থাপনা আমরা দূর করেছি। প্রত্যেক হজযাত্রীকে এসএমএস এর মাধ্যমে হজ বিষয়ক নোটিফিকেশন প্রদান করা হচ্ছে। এ ছাড়া রয়েছে হজবিষয়ক কল সেন্টার ১৬১৩৬।
শেখ হাসিনা বলেন, হজের জন্য বাংলাদেশের আবেদনকারীর সংখ্যা বেশি হওয়ায় আমাদের প্রাক-নিবন্ধনের প্রক্রিয়া বছরব্যাপী চলতে থাকে। প্রাক-নিবন্ধনের পর আবেদনকারীরা ন্যায্যতার ভিত্তিতে ক্রমানুযায়ী হজে যাওয়ার সুযোগ পেয়ে থাকেন। কেউ প্রাক-নিবন্ধনের পর তা বাতিল করতে চাইলে অনলাইনে আবেদন করে সহজেই ইএফটির মাধ্যমে অর্থ ফেরত পাচ্ছেন। চূড়ান্তভাবে নির্বাচিত হজযাত্রীরা ডিজিটালভাবে নিবন্ধন সম্পন্ন করে থাকেন।
‘হজ ও ওমরাহ ব্যবস্থাপনা আইন-২০২১’ প্রণয়নের ফলে হজ কার্যক্রমে অব্যবস্থাপনা, অনিয়ম ও অসদাচরণের অভিযোগের প্রতিকার সহজ হচ্ছে জানিয়ে সরকারপ্রধান বলেন, হজযাত্রীদের সাথে প্রতারণা ও হয়রানি করেছে এমন এজেন্সিগুলোকে লাইসেন্স বাতিল, জামানত বাজেয়াপ্ত ও আর্থিক জরিমানাসহ বিভিন্ন ফৌজদারী শাস্তির ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে।
বিএনপি-জামায়াত আমলের সব অব্যবস্থাপনা কাটিয়ে আওয়ামী লীগ সরকার হজ ব্যবস্থাপনায় আমূল পরিবর্তন আনার ফলে প্রতি বছর হজযাত্রীর সংখ্যা বেড়ে চলেছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, হজযাত্রীর সংখ্যা বৃদ্ধির আরও কারণ হলো আমরা বাংলাদেশকে সুদৃঢ় অর্থনৈতিক ভিত্তির উপর দাঁড় করাতে পেরেছি, মানুষের আয় ও জীবন-মান বৃদ্ধি পেয়েছে।
জঙ্গিবাদবিরোধী কর্মসূচিতে আলেম ওলামাদেরকে সম্পৃক্ত করার কথা জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, আজ সারা বিশ্বে বাংলাদেশ সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির একটি মডেল হিসেবে পরিচিত লাভ করেছে।
এ সময় হজ ব্যবস্থাপনার সঙ্গে জড়িত সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারী, ডাক্তার, নার্স, ব্রাদার্স, আলেম-ওলামা, গাইড ও সংশ্লিষ্ট যারা যাত্রীদের সেবায় নিয়োজিত, তাদের হজ যাত্রীদের সেবায় যেন কোনো প্রকার গাফলতি না হয় সেদিকে খেয়াল রাখার আহ্বান জানান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
ধর্ম প্রতিমন্ত্রী ফরিদুল হক খানের সভাপতিত্বে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বেসরকারি বিমান পরিবহন ও পর্যটন প্রতিমন্ত্রী মাহবুব আলী, সংসদ সদস্য হাবিব হাছান, ধর্ম বিষয়ক সচিক কাজী এনামুল হাসান এনডিসি, ঢাকায় নিযুক্ত সৌদি রাষ্ট্রদূত ঈসা বিন ইউসুফ আল দুহাইলান, হজ এজেন্সিস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (হাব) সভাপতি এম শাহাদাত হোসাইন তসলিম প্রমুখ।