কোহলি-ম্যাক্সওয়েল-ডুপ্লেসির ওপর অতি নির্ভরশীলতায় ভুগছে ব্যাঙ্গালোর

SHARE

দক্ষিণ ভারতের সিনেমার খোঁজ রাখেন যারা তাদের কাছে পরিচিত এক নাম কেজিএফ, এই চলচ্চিত্রের দুটি পর্বই ভারতজুড়ে আলোড়ন সৃষ্টি করেছিল, ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগের দল রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স ব্যাঙ্গালোরের কোহলি, গ্লেন ম্যাক্সওয়েল ও ফ্যাফ ডু প্লেসির নামের আদ্যক্ষর নিয়ে এই ত্রয়ীকে ‘কেজিএফ’ বলা হচ্ছে।
রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স ব্যাঙ্গালোর আইপিএলের সবচেয়ে জনপ্রিয় দলগুলোর একটি, বরাবরই বড় ক্রিকেটারদের নিয়ে দল গড়ে এই ফ্র্যাঞ্চাইজ।
এর আগেও এবি ডি ভিলিয়ার্স, ক্রিস গেইলদের মতো ক্রিকেটাররা এই দলের হয়ে খেলেছেন, কিন্তু আইপিএলের কোনও আসরেই শিরোপা জিততে পারেনি এই দলটি।
এবারও আট ম্যাচের চারটিতে হেরে শুরু করেছে দলটি। এবারও সমর্থক ও বিশ্লেষকদের নজর বড় নামগুলোতে।
কোহলি-গ্লেন-ফ্যাফ- এই কেজিএফের ওপর নির্ভরশীলতা ব্যাঙ্গালোরের বড় দুর্বলতা বলছেন বিশ্লেষকরা।
অস্ট্রেলিয়ার সাবেক ক্রিকেটার ও বর্তমানে বোলিং কোচ হিসেবে কাজ করা শন টেইট মনে করেন, ‘এই তিনজনের পরে আর কিছুই নেই ব্যাঙ্গালোরের। অন্য দলে আপনি দেখবেন স্কোয়াড ক্রিকেটার থাকে, তারা ম্যাচ জেতায় ব্যাঙ্গালোরের সেটা নেই।’
শন টেইটের মতে, এই তিনজনের দিকেই তাকিয়ে থাকে দলটা। এই তিনজন রান না পেলে বড় সমস্যায় পড়ে যায় দলটা।
যদিও ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগ-২০২৩-এর শীর্ষ রান সংগ্রাহকদের দুজন ডু প্লেসি ও ভিরাট কোহলি কিন্তু এটা তাদের দল হিসেবে সাহায্য করছে না, পয়েন্ট তালিকার পাঁচ নম্বরে আছে দলটি।
গত রাতে কলকাতা নাইট রাইডার্সের করা ২০০ রানের জবাবে একরকম বিপর্যস্তই হয়ে পড়েছিল রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স ব্যাঙ্গালোরের ব্যাটিং লাইন আপ।
ভারতের ক্রিকেট বিশ্লেষক দীপদাসগুপ্ত বলেছেন, ‘এই তিনজন যদি রান না পান, সেদিনই ব্যাঙ্গালোরের আসল রূপ বেড়িয়ে আসে, দুর্বলতাগুলো চোখে পড়ে।’
যদিও গত রাতে ভিরাট কোহলি ৫৪ রানের একটি ইনিংস খেলেছেন ৩৭ বলে, কিন্তু সেটা যথেষ্ট হয়িনি।
মাহিপাল লমরোর, দিনেশ কার্তিকরা লোয়ার মিডল অর্ডারে ছোট ছোট ক্যামিও ইনিংস খেলছে বটে কিন্তু সেটা শেষ পর্যন্ত ম্যাচ জেতাতে পারছে না।
গত কাল ম্যাচের মাঝেই আইপিএল সম্প্রচারকরা একটি পোলে প্রশ্ন রেখেছিলেন, ‘আরিসিবি কি কোহলি, ফ্যাফ ও ম্যাক্সওয়েলের ওপর বেশি নির্ভরশীল?’
৯৪ শতাংশ ভোটে উত্তর এসেছে, ‘হ্যাঁ’ এর পক্ষে।

মিডল অর্ডারে হারশাল প্যাটেল, শাহবাজ আহমেদরা যথেষ্ট প্রভাব রেখে ব্যাট করতে পারছেন না। আরসিবির ভারতীয় ক্রিকেটার রজত পাতিদার এবারে চোটের কারণে খেলছেন না।
তিনি একটা বড় ভূমিকা রাখতে পারতেন বলেই মনে করছেন বিশ্লেষক দীপদাসগুপ্ত।
এর আগে কলকাতার বিপক্ষে ইডেন গার্ডেন্সে ১২৩ রানে অলআউট হয়েছিল রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স ব্যাঙ্গালোর।
বিশ্লেষকদের অনেকেই মনে করেন, এই কেজিএফের ওপর ভর করে হয়তো, কিছু ম্যাচে জয় পাবে আরসিবি কিন্তু এটা প্রায় দেড় মাসের একটা টুর্নামেন্ট, একটা দলে অন্তত সাত থেকে আটজন পারফর্ম না করলে টুর্নামেন্টে ভালো করা কঠিন হয়ে যায়।
গত রাতে নিজের ২৩০তম আইপিএল ম্যাচ খেলতে নামা কোহলি প্রায় ১৪৫ স্ট্রাইক রেটে ব্যাট করেছেন, মনে হচ্ছিল কোহলির ব্যাটেই জয় পাবে ব্যাঙ্গালোর। কিন্তু তিনি আউট হওয়ার পর খেলার মোড় ঘুড়ে গেছে। কোহলি এবার আট ম্যাচে পাঁচটি অর্ধশতক হাঁকিয়েছেন। এমন ইন-ফর্ম ব্যাটার দলে থাকা স্বত্ত্বেও ব্যাঙ্গালোরের স্কোয়াডের গভীরতা নেই বলছেন বিশ্লেষকরা। আন্দ্রে রাসেলের বলে কোহলি আউট হয়ে যাওয়ার পরই সেটা স্পষ্ট হয়েছে।
জনপ্রিয় ক্রিকেট উপস্থাপক হারশা ভোগলে নিজের বিশ্লেষণে বলছেন, ‘ফ্যাফ ডু প্লেসি এই বয়সে এসেও যেভাবে নিজেকে গুছিয়ে নিয়েছেন, মানিয়ে নিচ্ছেন সেটা অবিশ্বাস্য।’
টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে প্রথম ছয় ওভারে রান তুলতে পারা বা না পারা ম্যাচের ফলাফলে অনেক বড় প্রভাব ফেলে, এই সময়ে মাত্র দুজন ফিল্ডার বাউন্ডারিতে থাকতে পারেন।
ফ্যাফ ডু প্লেসি নিজেকে সে অনুযায়ী তৈরি করেছেন এবং দিন দিন তার স্ট্রাইক রেট বাড়ছে, আইপিএলের সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক এই ব্যাটসম্যান এখন ৬০ গড় এবং ১৬৭ স্ট্রাইক রেটে ব্যাট করছেন।
তবে রজত পাতিদারের না থাকার দিকেই ইঙ্গিত দিয়েছেন হারশাও, ‘রজত এবার দারুণ একটা ঘরোয়া মৌসুম কাটাচ্ছেন এই সময়ে এসে আইপিএলে ম্যাচ খেলতে না পারা ক্রিকেটার ও দল দুই পক্ষের জন্যই দুভার্গ্য।’
গ্লেন ম্যাক্সওয়েল রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স ব্যাঙ্গালোরের হয়ে চার নম্বরে ব্যাট করেন। যদিও ম্যাক্সওয়েল একজন ফিনিশার হিসেবেই পরিচিত এই দলে এই নতুন ভূমিকায় মানিয়ে নিতে তার সময় লাগবে বলেই মনে করেন বিশ্লেষকরা।
এখানেই মূলত আরসিবির মিডল অর্ডারে একটা বড় ফাঁক দেখা যায়, যে কারণে দলটি ভারসাম্য ধরে রাখতে পারছে না।
ব্যাঙ্গালোরের আরেকটা বড় সমস্যার জায়গা হচ্ছে বিদেশী চার ক্রিকেটারকে খুব বেশি নড়াচড়া করানোর সুযোগ পাবেনা দলটি।
একে তো ফ্যাফ ডু প্লেসি অধিনায়ক হিসেবে আছেন, ফিট থাকলে গ্লেন ম্যাক্সওয়েল খেলবেন প্রায় সব ম্যাচ, ফাস্ট বোলার হিসেবে আছেন ডেভিড উইলি আছেন আরেকজন স্পিন বোলিং অলরাউন্ডার হিসেবে খেলছেন ওয়ানিন্দু হাসারাঙ্গা।
কিন্তু হাসারাঙ্গা বল হাতে যতোটা কার্যকর ব্যাট হাতে তিনি সেই ভূমিকা রাখতে পারেন না যেটা মাইকেল ব্রেসওয়েল রাখতে পারতেন কিন্তু ব্রেসওয়েল ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগে অনভিজ্ঞতার কারণে টিম ম্যানেজমেন্টর পুরো ভরসা পাচ্ছে না।
সব মিলিয়েই কোচ সঞ্জয় বাঙ্গারকে কঠিন একটা সময়ের মধ্য দিয়ে যেতে হচ্ছে।
সূত্র : বিবিসি বাংলা