জাতিসংঘ মহাসচিবের ওপর যুক্তরাষ্ট্রের গোয়েন্দা নজরদারি

SHARE

জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেসের ওপর গোয়েন্দা নজরদারি করছিল যুক্তরাষ্ট্র। পেন্টাগনের ফাঁস হওয়া গোয়েন্দা তথ্য অনুসারে, যুক্তরাষ্ট্র বিশ্বাস করে জাতিসংঘ প্রধান মস্কোর স্বার্থ রক্ষায় যথেষ্ট সংবেদনশীল ছিল।
বিবিসির এক প্রতিবেদন থেকে এ তথ্য জানা গেছে।
তথ্যগুলো পর্যালোচনা করলে বোঝা যায়, ওয়াশিংটন আন্তোনিও গুতেরেসের ওপর নজরদারি চালাচ্ছিল। বেশ কয়েকটি নথিতে গুতেরেস এবং তার ডেপুটির ব্যক্তিগত কথোপকথনের কথা উল্লেখ রয়েছে।
নথিতে ইউক্রেন যুদ্ধ এবং বেশ কয়েকজন আফ্রিকান নেতার বিষয়ে গুতেরেসের চিন্তা-ভাবনার কথা ফুটে উঠেছে।
ফাঁস হওয়া একটি নথিতে বিশ্বব্যাপী খাদ্য সংকটের আশঙ্কার পরে জুলাই মাসে জাতিসংঘ এবং তুরস্কের মধ্যকার ‘ব্ল্যাক সি শস্য’ চুক্তির ওপর আলোকপাত করা হয়েছে। গুতেরেস চুক্তিটি রক্ষা করতে এতটাই আগ্রহী ছিলেন যে, তিনি এর জন্য রাশিয়ার স্বার্থ রক্ষার্থেও রাজি ছিলেন। গুতেরেস রাশিয়ার রপ্তানি ক্ষমতা বৃদ্ধির ওপরেও জোর দিয়েছিলেন।
গুতেরেস ইউক্রেনে আক্রমণের জন্য মস্কোকে দায়ী করার সিদ্ধান্তকে অনেকটাই শিথিল করে দিয়েছিলেন। এমনকি জাতিসংঘের কর্মকর্তারা বিশ্বের শীর্ষ কূটনীতিকদের মস্কোর প্রতি নরম হওয়ার পরামর্শ দিয়েছিলেন।
ফাঁস হওয়া নথিগুলো নিয়ে একজন সিনিয়র কর্মকর্তা বলেন, জাতিসংঘ বিশ্বের দরিদ্র দেশগুলোর ওপর যুদ্ধের প্রভাব কমানোর জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে কাজ করছিল। এর অর্থ হলো- খাদ্যের দাম কমানোর জন্য আমরা যা করতে পারি তাই করব।
রাশিয়া প্রায়শই অভিযোগ করেছে, আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞার কারণে তার নিজস্ব শস্য এবং সার রপ্তানি প্রভাবিত হচ্ছে এবং অন্তত দুবার হুমকি দিয়েছে যে শস্য চুক্তি স্থগিত করা হবে যদি না এর সমাধান করা হয়। রাশিয়ান শস্য এবং সার আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞার অধীনে নয়, তবে রাশিয়া বলছে তারা তাদের শিপিং এবং বীমা সুরক্ষিত করতে বাঁধার সম্মুখীন হয়েছে।
যদিও জাতিসংঘের কর্মকর্তারা বলেছেন, গুতেরেস রাশিয়ার যুদ্ধের বিরুদ্ধে তার অবস্থান স্পষ্ট করেছেন।
আরেকটি নথিতে গুতেরেস এবং তার ডেপুটি আমিনা মোহাম্মদের মধ্যে একটি খোলামেলা কথোপকথন উঠে এসেছে। এতে গুতেরেস ইউক্রেনের যুদ্ধের ফলে ইউরোপকে আরও বেশি অস্ত্র ও গোলাবারুদ উৎপাদন করার জন্য ইউরোপীয় কমিশনের প্রেসিডেন্ট উরসুলা ভন ডার লেয়েনের আহ্বানে হতাশা প্রকাশ করেন।
দুজন আফ্রিকান নেতার সাম্প্রতিক এক শীর্ষ সম্মেলনের বিষয়েও কথা বলেছেন তারা। আমিনা মোহাম্মদ বলেছেন, কেনিয়ার রাষ্ট্রপতি উইলিয়াম রুটো খুবই নির্মম এবং তিনি তাকে বিশ্বাস করেন না।
এটা সকলেরই জানা যে, আমেরিকা বেশ কয়েকটি দেশের মধ্যে একটি যারা নিয়মিতভাবে জাতিসংঘে গুপ্তচরবৃত্তি করে। কিন্তু যখন সেই গুপ্তচরবৃত্তির খবর প্রকাশ্যে আসে তখন এটি অত্যন্ত বিব্রতকর।
প্রসঙ্গত, অনলাইনে সম্প্রতি ফাঁস হয়েছে পেন্টাগনের বেশ কিছু গোয়েন্দা নথিপত্র। কীভাবে নথি ফাঁস হয়েছে তারই হিসেব চলছে এখন। যুক্তরাষ্ট্র কীভাবে শত্রু ও মিত্র দেশগুলোর ওপর গোয়েন্দাগিরি চালিয়ে আসছে এবং ইউক্রেন যুদ্ধ সম্পর্কিত গোপনীয় এসব নথি কীভাবে সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়ল, তা তদন্ত করতে নেমেছে দেশটির বিচার বিভাগ।
সর্বশেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত জানা গিয়েছে, তথ্য ফাঁসকারী ব্যক্তি সামরিক ঘাঁটিতে কাজ করা একজন নিঃসঙ্গ যুবক এবং বন্দুক নিয়ে তার ব্যাপক আগ্রহ আছে। তিনি ডিসকোর্ডে প্রায় দুই ডজন লোকের একটি গ্রুপে যুক্ত ছিলেন। ভিডিও গেমারদের কাছে জনপ্রিয় একটি সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম ডিসকোর্ড।