প্রস্তুত পদ্মা সেতুর রেলপথ

SHARE

অপ্রতিরোধ্য, খরস্রোতা পদ্মার বুকে দ্বিতল পদ্মা সেতুর সড়ক পথে যানচলাচল শুরু হয় গত বছরের জুনে। স্বপ্নের সেতুর পদ্মা জয়ের উপাখ্যানে বাকি ছিলো নিচতলার রেলপথের কাজ। সড়কপথ উদ্বোধনের বছর না পেরোতেই এবার সম্পূর্ণ হয়েছে রেলপথের কাজ।

বুধবার (২৯ মার্চ) রেলপথের সর্বশেষ ৭ মিটার অংশের ঢালাই দেওয়ার মাধ্যমে কাজ সমাপ্ত হয়। তবে ঢালাইকৃত অংশ শক্ত হয়ে ট্রেন চলার জন্য উপযোগী হতে ৪৮ ঘণ্টা সময়ের প্রয়োজন ছিল। শুক্রবার বিকেলে নির্ধারিত ৪৮ ঘণ্টা শেষ হয়। এদিন প্রকৌশলীদের পরীক্ষায় ঢালাইকৃত অংশ ট্রেন চলার জন্য উপযোগী হয়ে উঠেছে বলে নিশ্চিত করা হয়। অর্থাৎ বর্তমানে ট্রেন চলাচলের জন্য প্রস্তুত ৬.৬৮ কিলোমিটার পুরো পাথরবিহীন রেলপথ। এখন শুধু ট্রেন চলার অপেক্ষায় পদ্মা সেতু।

পদ্মা সেতু রেল সংযোগ প্রকল্পের ব্যবস্থাপক-১ ব্রিগেডিয়ার সাঈদ আহমেদ বিষয়টি নিশ্চিত করে জানান, বিকেলে প্রকৌশলী দল ট্র্যাক পরিদর্শন করেন। ঢালাইকৃত অংশের কিউব কেটে সেটি ল্যাবে পরীক্ষা করা হয়। সন্তোষজনক শক্ত অবস্থা দেখা যায়। কোনো প্রকার ফাটল বা সমস্যা পাওয়া যায়নি। এর মাধ্যমে এখন পুরো সেতু ট্রেন চলাচলের জন্য প্রস্তুত।

প্রকৌশলী সূত্র বলছে, বিশ্বমানে প্রস্তুত করা হয়েছে সেতুর রেলপথ। যা শত বছরের বেশি সময় টেকসই থাকবে।

রাজধানী থেকে যশোর পর্যন্ত রেলসংযোগ প্রকল্পের মধ্যে পদ্মা সেতু রেল সংযোগ প্রকল্পের বড় চ্যালেঞ্জ ছিল সেতুতে যানবাহন চালু রেখেই নিচতলায় পাথরবিহীন রেললাইন নির্মাণ। গত বছরের ২০ আগস্ট সেতুতে রেললাইন স্থাপনের উদ্বোধন করেন রেলমন্ত্রী নুরুল ইসলাম সুজন। তবে বিভিন্ন জটিলতায় পুরোদমে কাজ শুরু হয় নভেম্বরে। পুরোদমে কাজ শুরুর পঞ্চম মাসে এসে কাজ শেষ হলো।

সেতুতে রেললাইন স্থাপনের কাজ শেষ হওয়ায় আগামী ৪ এপ্রিল পুরো সেতুতে পরীক্ষামূলক ট্রেন চালানোর প্রস্তুতি নিয়েছেন প্রকৌশলীরা। এদিন ফরিদপুরের ভাঙ্গা পদ্মা স্টেশন থেকে মুন্সিগঞ্জের মাওয়া স্টেশন পর্যন্ত ৪২ কিলোমমিটার অংশে পরীক্ষামূলক ট্রেন চালানো হবে। রেলমন্ত্রী নুরুল ইসলাম সুজন উপস্থিত থেকে পরীক্ষামূলক ট্রেনে পাড়ি দেবেন পুরো পদ্মা সেতু।

পদ্মা রেলসেতু ৭ খণ্ডে বিভক্ত। আর সেতু টেকসই রাখতে নকশা অনুযায়ী নির্দিষ্ট দূরত্বে বিভাজন রাখা হয়েছে। দেশে প্রথমবারের মতো সর্ববৃহৎ রেলব্রিজ মুভমেন্ট জয়েন্ট স্থাপন করা হয়েছে পদ্মার রেলসেতুতে। এতে দ্রুত গতির রেল চলাচলের সময় এ জয়েন্টে রেললাইন ৮০০ মিলিমিটার পর্যন্ত সম্প্রসারিত হতে পারবে। মূল সেতুর সঙ্গে দুই প্রান্তের ভায়াডাক্টের সংযোগ এবং মাঝে জয়েন্ট আছে ছয়টি। কংক্রিটের পাথরবিহীন রেললাইনের সঙ্গে যুক্ত করতে এ জয়েন্টগুলো স্টিল দিয়ে বিশেষভাবে তৈরি।

পুরো সেতুতে ১১২২টি স্লিপার বসেছে। এর মধ্যে চীন থেকে আনা হয় ২৭৪টি, বাকিগুলো বিশ্বমানের করে নির্মাণ করা হয় দেশে।

পদ্মা সেতু রেল সংযোগ প্রকল্পের মোট ১৭২ কিলোমিটার অংশ তিন ভাগে ভাগ করে এগিয়ে চলছে কাজ। এর মধ্যে ঢাকা থেকে মাওয়া অংশের অগ্রগতির ৭৪ ভাগ, মাওয়া থেকে ভাঙ্গা অংশের অগ্রগতি ৯২ ভাগ এবং ভাঙ্গা থেকে যশোর পর্যন্ত অগ্রগতি ৬৮ ভাগ। আর সার্বিক অগ্রগতি ৭৫ ভাগ বলে জানিয়েছেন প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক আবজাল হোসেন

তিনি জানান, উদ্বোধনের পর কিছুটা জটিলতা তৈরি হয়। সব নকশা চূড়ান্ত করে গত বছরের নভেম্বরে মূল সেতুতে রেললাইনের কাজ শুরু হয়। ৪ মাসের মধ্যে কাজ শেষ হলো। আমরা আশাবাদী প্রাকৃতিক যদি কোনো দূর্যোগ না হয় তাহলে প্রকল্পের যে মেয়াদ আছে ২০২৪ সালের জুন মাসে পুরো প্রকল্পের কাজ শেষ হবে।

এদিকে প্রকৌশলী সূত্র বলছে, পুরো প্রকল্পের কাজ শেষ হলেও ঢাকা-মাওয়া ও মাওয়া-ভাঙ্গা এই দুই অংশের মোট ৮২ কিলোমিটারের কাজ চলতি বছরই শেষ হবে। প্রকল্পের মোট ১৭২ কিলোমিটার লেভেল ক্রসিংবিহীন রেলপথে ৩২টি রেল কালভার্ট, ৩৭টি আন্ডারপাস এবং ১৩টি রেলসেতুর কাজ শেষ হয়েছে। সেতুর দুই পাশের স্টেশন নির্মাণ চূড়ান্ত পর্যায়ে।

প্রকৌশলীরা জানান, ৬ দশমিক ১৫ কিলোমিটার মূল সেতু ও দুই পাশের ভায়াডাক্ট সেতু মিলিয়ে পদ্মা রেল সেতুর দৈর্ঘ্য ৬ দশমিক ৬৮ কিলোমিটার। মূল সেতুতে ১১ হাজার ১৪০টি স্লিপার স্থাপিত হয়েছে। মুভমেন্ট জয়েন্টের ইস্পাতের ৮টি স্লিপার ছাড়া বাকি সবগুলো কংক্রিটের তৈরি। সিএসসি বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর কনস্ট্রাকশন সুপারভিশন কনসালটেন্টের (সিএসসি) তত্ত্বাবধানে চলছে পদ্মা সেতুর এই রেলসংযোগ প্রকল্পের কাজ। এই প্রকল্পে ব্যয় ধরা হয়েছে ৩৯ হাজার ২৪৬ কোটি ৭৯ লাখ টাকা।

পদ্মা সেতু চালুর পর দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমের ২১ জেলার মধ্যে সরাসরি সড়ক যোগাযোগ স্থাপন হয়েছে। নতুন রেলপথে যাতায়াতে রাজধানী ঢাকা থেকে খুলনার দূরত্ব কমবে ২১২ কিলোমিটার।