আইন মেনেই ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা: তথ্যমন্ত্রী

SHARE

প্রথম আলোর রিপোর্টের ভিত্তিতে যে মামলা হয়েছে, তাতে আইন নিজস্ব গতিতে চলবে বলে মন্তব্য করেছেন তথ্যমন্ত্রী। বললেন, আইন মেনে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা হয়েছে।
বৃহস্পতিবার (৩০ মার্চ) সচিবালয়ে পিআইবি প্রকাশিত বইয়ের মোড়ক উন্মোচন অনুষ্ঠান শেষে তিনি এ মন্তব্য করেন। নিউজ তুলে নিলেও প্রথম আলো যে অপরাধ করেছে, তা আদালতে প্রমাণ হবে। অনলাইন মিডিয়ার নিউজ নিয়ে প্রেস কাউন্সিলের বিচারের ক্ষমতা নেই। তাদের আইনে অনলাইন ও সামাজিকযোগাযোগ মাধ্যম নেই। এই কাউন্সিলের শুধু তিরস্কারের ক্ষমতা আছে। তাই ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা হয়েছে।
তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ বলেছেন, গত ২৬ মার্চে প্রথম আলোর অনলাইন কিংবা ফেসবুক পেজে যে সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে, অনেকে বলছেন তা বাসন্তীকে জাল পরিয়ে সংবাদ পরিবেশনের মতো কিংবা একই ধরনের ঘটনা। আমি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এমনটাই দেখেছি। এই ঘটনাকে বাসন্তীকে জাল পরিয়ে সংবাদ পরিবেশনের সঙ্গে তুলনা করা হচ্ছে। বিষয়টি রাষ্ট্র, সমাজ ও স্বাধীনতাবিরোধী। সর্বমহলের মতে, এ ধরনের সংবাদ পরিবেশন একটি ডিজিটাল অপরাধ।
প্রথম আলোর সাংবাদিক শামসুজ্জামানকে গ্রেপ্তারের ঘটনায় বিএনপির প্রতিক্রিয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে তথ্যমন্ত্রী বলেন, বঙ্গবন্ধুকে হত্যার আগে বাসন্তীর গায়ে কাপড় না দিয়ে জাল পরিয়ে ছবি তুলে সেটি প্রকাশ করা হয়েছে। তখন জালের দাম কিন্তু কাপড়ের দামের চেয়ে বেশি ছিল। এখনো একটা জালের দাম কাপড়ের দামের চেয়ে বেশি। ইচ্ছাকৃতভাবে বাসন্তীর গায়ে জাল পরিয়ে ছবি তুলে সেটি প্রকাশ করা হয়েছিল, তখন সেটি সংবাদ হয়েছে। ২৬ মার্চের ঘটনা বাসন্তীকে জাল পরানোর মতোই।
তিনি বলেন, অপরাধ আর সাংবাদিকতা এক জিনিস নয়। কোনো সাংবাদিক যদি অপরাধ করেন তার কি শাস্তি হবে না? কেউ যদি অপসাংবাদিকতা করে স্বাধীনতাকে কটাক্ষ করেন তার কি শাস্তি হবে না? এখানে একটি ছেলের হাতে দশ টাকা ধরিয়ে দিয়ে চাইল্ড এক্সপ্লোটেশন (শিশু নিগ্রহ) হয়েছে। ক্লিয়ারলি দেয়ার ইজ চাইল্ড এক্সক্লোটেশন…এমনটা করে যদি এ ঘটনা ঘটানো হয় সেটার কি বিচার হবে না? আমরা কেউ কি বিচার ও আইনের ঊর্ধ্বে?
বাংলাদেশে মত প্রকাশের যে স্বাধীনতা রয়েছে, সেটি অনেক উন্নয়নশীল দেশেও নেই বলে মন্তব্য করেন তিনি। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন সবার জন্য জানিয়ে তিনি আরও বলেন, পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে এই আইনের মতো আইন করা হয়েছে।
এসব ঘটনার ব্যাপারে ব্যবস্থা নিতে তো প্রেস কাউন্সিল আছে? সাংবাদিকদের এ প্রশ্নে হাছান মাহমুদ বলেন, অনলাইন ভার্সন প্রেস কাউন্সিলের অধীনে আসেনি। প্রেস কাউন্সিলের তিরস্কার করা ছাড়া আর কোনো ক্ষমতা নেই। তাকে যখন গ্রেপ্তার করা হয় তার আগেই কিন্তু মামলা দায়ের হয়েছে। মামলা হওয়ার পরেই তাকে গ্রেপ্তার করা হয় ও তাকে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে আদালতে তোলা হয়েছে। এখন প্রথম আলো আদালতে সেই (সংবাদের ব্যাপারে) ব্যাখ্যা দেবে। আদালত সেটার বিচার করবে।
সাংবাদিকদের আরেক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ২৬ মার্চে অনলাইনে যে সংবাদটি প্রকাশিত হয়েছে এটি অবশ্যই রাষ্ট্রের ভিত্তিমূলে আঘাত হেনেছে। এর মাধ্যমে স্বাধীনতা দিবসের দিন স্মৃতিসৌধে স্বাধীনতাকে কটাক্ষ করা হয়েছে। জাতীয় স্মৃতিসৌধ আমাদের স্বাধীনতার প্রতীক। সেখানে একটা ছেলেকে ১০ টাকা দিয়ে ফুসলিয়ে তাকে দিয়ে কথা বলানোর চেষ্টা করা হয়েছে। সে যেটা বলেনি সেটি প্রচার করা হয়েছে। এটি ঠিক হয়নি বিধায় তারা সংবাদটি সরিয়ে নিয়েছে। সুতরাং এখানে অবশ্যই রাষ্ট্রের মূলভিত্তি মূলে আঘাত করা হয়েছে।
ওই সাংবাদিককে গ্রেপ্তারের দিন রাত ২টায় মামলা হয়েছে জানিয়ে তিনি আরও বলেন, সোয়া চারটায় (ভোর) তাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
সাংবাদিকদের আরেক প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী বলেন, মামলা দায়ের হওয়ার পর তাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তুলে নেওয়া আর গ্রেপ্তার করার মধ্যে পার্থক্য আছে। কাউকে অপরাধবিহীনভাবে যদি কেউ নিয়ে যায় সেটি হচ্ছে তুলে নেওয়া। আর কেউ অপরাধ করছে, তার বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে- এসব সুনির্দিষ্ট অভিযোগে কাউকে নিয়ে গেলে সেটি হচ্ছে গ্রেপ্তার করা। সুতরাং তাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
প্রথম আলোর সাংবাদিককে গ্রেপ্তারের পর বিষয়টি সবাইকে জানালে ভালো হতো বলেও মনে করেন তথ্যমন্ত্রী। তিনি বলেন, আমি এ ব্যাপারে একমত যে তাকে গ্রেপ্তার করার পর গ্রেপ্তারের বিষয়টি বললে ভালো হতো।