৩০০ কোটি মানুষের বাজারের কেন্দ্রস্থল হতে পারে বাংলাদেশ : প্রধানমন্ত্রী

SHARE

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, কৌশলগত ভৌগলিক অবস্থানের কারণে বাংলাদেশে ৩০০ কোটি মানুষের আঞ্চলিক বাজারের কেন্দ্রস্থল হতে পারে। পূর্ব-প্রাচ্য ও প্রাচাত্যের সেতুবন্ধন হিসেবে যোগাযোগ ক্ষেত্রে বাংলাদেশ বিশেষ ভূমিকা রাখতে পারে।
শনিবার (১১ মার্চ) সকালে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে (বিআইসিসি) তিন দিনব্যাপী ‘বাংলাদেশ বিজনেস সামিট ২০২৩’ শীর্ষ সম্মেলনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন।
তিনি বলেন, নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু নির্মাণ করেছি। আমরা যে পারি নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু নির্মাণ করে সেটা প্রমাণ করেছি।এই সেতু শুধু বাংলাদেশের দক্ষিণাঞ্চলেই নয়, এ সেতু আমাদের আঞ্চলিক যোগাযোগের ক্ষেত্রে বিরাট অবদান রাখবে। যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতি হবে। পাশাপাশি অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক বাণিজ্য বাড়াবে। ন্যূনতম ১.২ হারে জিডিপি প্রবৃদ্ধিতে সহায়তা করবে।
শেখ হাসিনা বলেন, গত ডিসেম্বরে আমরা মেট্রো রেল যুগে প্রবেশ করেছি। এসব সাফল্যের ওপর দাঁড়িয়ে বাংলাদেশ এখন ২০৩১ সালের মধ্যে উচ্চ মধ্যম আয়ের দেশ ও ২০৪১ সালের মধ্যে একটি উন্নত দেশে রূপান্তরিত হতে চাই। এটা আমাদের লক্ষ্য। আমরা আমাদের রূপকল্প ২০৪১ লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করে প্রেক্ষিত পরিকল্পনা প্রণয়ন করে তা বাস্তবায়ন শুরু করেছি। বেসরকারি, বিদেশি বিনিয়োগ বৃদ্ধি, উৎপাদন দক্ষতা বৃদ্ধি, অন্তর্ভূক্তিমূলক প্রবৃদ্ধি ত্বরান্বিতকরণ ও উদ্ভাবনী ক্ষমতা সম্পন্ন স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণে একটি কৌশলগত পথরেখা প্রণয়ন করা হয়েছে। প্রতি বছর গড়ে ৫ শতাংশ বেশি হারে প্রবৃদ্ধি অব্যাহত রাখা যায়, তাহলে ২০৪০ সাল নাগাদ বাংলাদেশ একটি ট্রিলিয়ন ডলারের অর্থনীতিতে পরিণত হতে সক্ষম হবে বলে আশা করি।
সরকারপ্রধান বলেন, ২০২৬ সালের মধ্যে বাংলাদেশ বিশ্বের ২০তম বৃহৎ অর্থনীতির দেশ হবে। বাংলাদেশ এখন উন্নয়নের রোল মডেল। করোনায় পুরো বিশ্ব থমকে গেলেও আমাদের অর্থনীতি থামেনি। বাংলাদেশ এখন বিশ্বে ৩৫তম বৃহত্তম অর্থনীতির দেশ হিসেবে উন্নয়নের রোল মডেল।
তিনি বলেন, আমাদের মানুষের ক্রয় ক্ষমতা বৃদ্ধি পাচ্ছে। ২০৩০ সালের মধ্যে ৯ম বৃহত্তম ভোক্তা বাজারে পরিণত হবে বলে আমরা বিশ্বাস করি। যুক্তরাজ্য বা জার্মানির মতো প্রতিষ্ঠিত বাজারগুলোকে এবং বর্তমানে উচ্চ প্রবৃদ্ধির ভিয়েতনাম বা থাইল্যান্ডকে ছাড়িয়ে যাওয়ার আশা করি বাংলাদেশ সক্ষম হবে। আমি জানি, এটা একটু বেশি উচ্চ আকাঙ্ক্ষা তারপরও উচ্চ আকাঙ্ক্ষা করতে তো কোনো আপত্তি নেই। ২০২৫ সাল বাংলাদেশে ক্রমবর্ধমান ধনীর সংখ্যা হবে ৩ কোটি ৪০ লাখ। ২০৪০ সালের মধ্যে আনুমানিক মাথাপিছু জিডিপি দাঁড়াবে ৫ হাজার ৮৮০ মার্কিন ডলার।
বিনিয়োগকারীদের উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আওয়ামী লীগ সরকার বিনিয়োগ ও ব্যবসার পরিবেশের ওপর সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়েছে। সেটি আরও সংস্কার ও ব্যবসাবান্ধব করা হবে। লাল ফিতার দৌরাত্ম্য সরিয়ে দেওয়া হবে। (যে বিষয়ে) সিদ্ধান্ত হবে, সঙ্গে সঙ্গে বাস্তবায়ন হবে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, করোনায় পুরো বিশ্ব থমকে গেলেও আমাদের অর্থনীতি থামেনি। ২০০৬ এর ৬০ বিলিয়ন ডলারের জিডিপি এখন ৪৬৫ বিলিয়ন ডলারে পরিণত হয়েছে।

তিনি বলেন, স্বল্পোন্নত থেকে উন্নয়নশীল দেশ হলে আমাদের নানা চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে হবে। এ জন্য আমি দেশের ব্যবসায়ী সম্প্রদায়কে এসব চ্যালেঞ্জ মোকাবিলার মানসিকতা নিয়ে এগোনোর অনুরোধ জানাচ্ছি। আমি কোনো হতাশা শুনতে চাই না। আমরা সরকারের পক্ষ থেকে প্রয়োজনীয় সহায়তা করব।
শেখ হাসিনা বলেন, এক সময় বাংলাদেশ বন্যা-খরাসহ নানা প্রাকৃতিক দুর্যোগের দেশ হিসেবে পরিচিত পেত। এখন কিন্তু সে অবস্থা নেই। এখন বাংলাদেশ উন্নয়নের রোল মডেল। গত ১৪ বছরে আমরা বাংলাদেশের ব্যাপক পরিবর্তন করতে সক্ষম হয়েছি। এমনকি করোনাকালেও বাংলাদেশের উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখতে সক্ষম হয়েছি। আমরা যে পারি, সেটা প্রমাণ করেছি পদ্মা সেতু নিজ অর্থায়নে করে।
তিনি বলেন, ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ প্রথম সরকার গঠন করে। তখন দেশের কিছু উন্নয়ন করতে সক্ষম হই। ২০০৯ সালে দ্বিতীয়বার সরকার গঠন করে আওয়ামী লীগ। এরপর থেকে বিগত ১৪ বছরে বাংলাদেশকে বিশ্বের দ্রুতবর্ধনশীল অর্থনৈতিক দেশগুলোর একটিতে পরিণত করতে সক্ষম হয়েছি। একসময়কার বাংলাদেশ দারিদ্র্যপীড়িত, বন্যা, খরা ও প্রাকৃতিক দুর্যোগের দেশ বলে পরিচিতি পেত। এখন সেই অবস্থা নেই। এটা দাবি করতে পারি যে সবার সহযোগিতায় মাত্র ১৪ বছরের মধ্যে বাংলাদেশের ব্যাপক পরিবর্তন আনতে সক্ষম হয়েছি।
দ্রব্যমূল্য স্বাভাবিক পর্যায়ে নিয়ে আসার উপায় খুঁজে বের করতে ব্যবসায়ী নেতাদের প্রতি আহ্বান জানি প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘জনদুর্ভোগের কথা বিবেচনা করে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম স্বাভাবিক পর্যায়ে আনার উপায় খুঁজে বের করতে হবে ব্যবসায়ী নেতৃবৃন্দকে।’

শেখ হাসিনা বলেন, নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের উচ্চমূল্য ও মুদ্রাস্ফীতির চাপের কারণে মানুষ অত্যন্ত কঠিন সময়ের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। কোভিড-১৯ মহামারির পর রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ, অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা ও পাল্টা নিষেধাজ্ঞার কারণে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের মূল্যবৃদ্ধি ও উচ্চ মূল্যস্ফীতির কারণে বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশগুলোর পাশাপাশি উন্নত দেশগুলোও মারাত্মক সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছে।
যুক্তরাজ্য, সৌদি আরব, চীন, ভুটান ও সংযুক্ত আরব আমিরাতসহ সাতটি দেশের মন্ত্রী, ১২টি বহুজাতিক কোম্পানির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা এবং ১৭টি দেশের দুই শতাধিক বিদেশি বিনিয়োগকারী ও ব্যবসায়ী নেতারা বিজনেস সামিটে অংশ নিচ্ছেন।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন, বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি, প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ উপদেষ্টা সালমান ফজলুর রহমান, সৌদি আরবের বাণিজ্যমন্ত্রী ড. মাজিদ বিন আবদুল্লাহ আল কাসাবি, ভুটানের বাণিজ্য ও কর্মসংস্থান মন্ত্রী কার্মা দর্জিয়া এবং বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার (ডব্লিউটিও) উপ-মহাপরিচালক জিয়াংচেন ঝাং অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন। অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন এফবিসিসিআই সভাপতি জসিম উদ্দিন।
এফবিসিসিআইর ৫০তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উদযাপনের অংশ হিসেবে দেশের অর্থনৈতিক সম্ভাবনাকে বৈশ্বিক দরবারে তুলে ধরার মাধ্যমে বাণিজ্য ও বিনিয়োগের নতুন সুযোগ সৃষ্টির লক্ষ্যে বিজনেস সামিটের আয়োজন করা হয়েছে।
বিজনেস সামিটে গতিশীল বিনিয়োগের সুযোগ ও স্থানীয় ব্যবসায়িক পরিবেশের উন্নতি প্রদর্শন করা হবে এবং নীতি নির্ধারণের উন্নতির জন্য বৈশ্বিক বিনিয়োগকারীদের বিনিয়োগ অগ্রাধিকার সম্পর্কে অন্তর্দৃষ্টি দেয়া হবে।