যুব সম্প্রদায় বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণকে বাতিঘর মনে করে

SHARE

দল বা ফোরামের প্রতিনিধিত্বকারী বেশ কিছু যুবক আজ বলেছেন, তারা ন্যায্য প্রতিবাদ এবং ন্যায়বিচারের চেতনায় তাদের পথ এবং কর্ম নির্ধারণের জন্য বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণটিকে একটি ‘বাতিঘর’ হিসেবে মনে করেন।
বাংলাদেশ ছাত্রলীগের সভাপতি সাদ্দাম হোসেন বলেন, ‘বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের যুগান্তকারী ভাষণ থেকে আমরা অসম্ভবকে সম্ভব করার অনুপ্রেরণা পেতে পারি। এটি আমাদেরকে কোনো অন্যায়ের কাছে মাথা নত না করতেও অনুপ্রাণিত করে।’
তিনি বলেন, ভাষণটি জাতির অতীত, বর্তমান ও ভবিষ্যৎকে আন্তঃসম্পর্কিত করেছে কারণ, বঙ্গবন্ধু জাতির ইতিহাস, ঐতিহ্য ও সংগ্রাম এবং পাকিস্তানি শাসকদের দ্বারা বাঙালি জাতির ওপর তৎকালীন দমন-পীড়নের পাশাপাশি জাতির ভবিষ্যৎ স্বপ্নের কথা উল্লেখ করেছিলেন।
তিনি বলেন, ‘৭ মার্চের ভাষণও অবিসংবাদিত নেতৃত্ব ও নির্দেশনা বাস্তবায়নের এক অনন্য দৃষ্টান্ত। বঙ্গবন্ধুর ডাকে সাড়া দিয়ে বাঙালি জাতি অসহযোগ আন্দোলন শুরু করে এবং এভাবে জাতিকে পাকিস্তানি পরাধীনতা থেকে মুক্ত করতে মহান মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ে।’
ঢাকা ইউনিভার্সিটি ডিবেটিং সোসাইটির সাধারণ সম্পাদক ফুয়াদ হোসেন বলেন, ৭ মার্চের ভাষণ তরুণদের অনুপ্রেরণার উৎস হিসেবে রয়ে গেছে এবং সব সময়ই থাকবে।
আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিষয়ে স্নাতকোত্তর ছাত্র ফুয়াদ হোসেন বলেন, ‘এটি (ভাষণ) সকলকে কোনো অন্যায় বা শোষণকে প্রশ্রয় না দেওয়ার জন্য উৎসাহিত করে।’
তিনি ভাষণটিকে ‘কালজয়ী’ বলে অভিহিত করেন এবং বলেন, ভাষণটি দৃশ্যত জাতিকে ভয়ের অনুভূতি থেকে মুক্তি দিয়েছে এবং তাদের মধ্যে শক্তিশালী ও সুসজ্জিত পাকিস্তানি দখলদার বাহিনীর বিরুদ্ধে মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ার চেতনা জাগিয়েছে।
হোসেন বলেন, ‘তার যৌক্তিক কথা এবং অসামান্য অঙ্গভঙ্গি জাতিকে সম্মোহিত করেছিল। ভাষণটি সমগ্র জাতিকে একত্রিত করেছিল।’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইনের ছাত্র সাদ্দাম বলেন, ৭ মার্চের ভাষণ একই সঙ্গে গেরিলা যুদ্ধের নীলনকশা তৈরির পাশাপাশি গণতান্ত্রিক আন্দোলন চালানোর উপায় দেখিয়েছিল।
বঙ্গবন্ধুর মন্তব্যের উদ্ধৃত করে সাদ্দাম বলেন, ‘সংখ্যাগরিষ্ঠ হওয়া সত্ত্বেও, আমরা এখনও কেন সংখ্যালঘুদের কাছ থেকে বড় ধারণা নেব।’ বঙ্গবন্ধু তাঁর ভাষণে গণতন্ত্রের পুনঃসংজ্ঞায়িত করেছিলেন,গণতন্ত্রে সংখ্যাগরিষ্ঠের জনপ্রিয় নীতির চেয়ে যুক্তিসংগত ও বাস্তব ন্যায্যতাকে বেশি প্রাধান্য দিয়েছিলেন।
সাদ্দাম বলেন, সংখ্যাগরিষ্ঠদের উদ্বেগকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিয়ে নীতি প্রণয়ন করা সমসাময়িক রাজনীতিতে জনপ্রিয় হয়ে উঠছে যা শেষ পর্যন্ত সংখ্যালঘুদের দুর্ভোগ ও দমনের জন্য উদ্বেগজনক হয়ে উঠেছে।
তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধু অনেক আগেই সংখ্যাগরিষ্ঠদের সেবা করার জনপ্রিয় রাজনৈতিক অনুশীলনের চেয়ে ন্যায়বিচারকে অগ্রাধিকার দেওয়ার দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছিলেন।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ভিত্তিক আবৃত্তি সংগঠন ধ্বনির সভাপতি ইমরান শাহরিয়ার বলেন, ৭ মার্চের ভাষণ নতুন প্রজন্মের কাছে মহান মুক্তিযুদ্ধের তাৎপর্য ও পটভূমি বর্ণনা করার জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
তিনি বলেন, যুগান্তকারী ভাষণ ছাড়া বঙ্গবন্ধু কোন প্রেক্ষাপটে ‘এবারের সংগ্রাম, আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, ‘এবারের সংগ্রাম, আমাদের স্বাধীনতার সংগ্রাম।’ এই কথাটি উচ্চারণ করেছিলেন তা অনুধাবন করা সম্ভব নয়।
জাবির মার্কেটিং বিভাগের এমবিএর ছাত্র ইমরান বলেন, পাকিস্তান রাষ্ট্রের জন্মের পর দীর্ঘ ২৪ বছরে পূর্ব পাকিস্তানের জনগণ যে সামাজিক, রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিকভাবে বৈষম্যের শিকার হয়েছে। বঙ্গবন্ধু তাঁর ৭ই মার্চের ঐতিহাসিক ভাষণে সেই বৈষম্যের একটি সচিত্র দৃশ্যকল্প উপস্থাপন করেছিলেন।

তিনি বলেন, পশ্চিম পাকিস্তানি সামরিক সরকার পূর্ব পাকিস্তানের জনগণের ওপর যে বঞ্চনা ও বৈষম্য চাপিয়ে দিয়েছিল, সে সম্পর্কে তরুণ প্রজন্মকে সচেতন করতে ৭ মার্চের ভাষণের তাৎপর্য অনস্বীকার্য।
ইমরান বলেন, স্বাধীনতার ৫২ বছর পরও জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৭ মার্চের ঐতিহাসিক ভাষণের তাৎপর্য একটুও কমেনি।
তিনি বলেন, ‘১৯৭১ সালের ৭ মার্চ ধারাবাহিক রাজনৈতিক আন্দোলনের পটভূমিতে, অবশেষে সেই ক্ষোভ আমাদের স্বাধীনতার স্বাদ এনে দিয়েছে।’
ইমরান বলেন, ‘আমাদের তরুণ প্রজন্ম এখনও বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণে অনুপ্রাণিত। বঙ্গবন্ধুর সেই ভাষণ তরুণ সকল প্রজন্মের মনে শক্তি সঞ্চার করে।’
খবর বাসস