‘টু টোজ’ পরিচয় ছেড়ে ‘স্টার’

SHARE

two towsম্যাচে সবে দু’টো বল হয়েছে তখন৷ স্কোরবোর্ডে নিউ জিল্যান্ডের রান ৪-০৷ মার্টিন গাপ্টিলের নামের পাশে একটা বাউন্ডারি৷ জেরোম টেলরের পরের বলটা গাপ্টিল মেরেছিলেন স্কোয়ার লেগে৷ হাতে এসে যাওয়া ক্যাচটা ফেলে দেন মার্লন স্যামুয়েলস৷

সেই গাপ্টিলই ইনিংসের ৫০তম ওভারের প্রথম বলটা পাঠালেন ওয়েস্ট প্যাক স্টেডিয়ামের ছাদে৷ বলটার গতিপথ শেষ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে বাউন্ডারির বাইরে বসে থাকা সতীর্থ ও কোচদের দিকে দু’টো আঙুল দেখালেন গাপ্টিল৷ পরে জানা যায়, ব্যাটিং কোচ ক্রেইগ ম্যাকমিলানের জন্য ছিল সেটা৷ ‘কেক টিন’ নামে পরিচিত এই স্টেডিয়ামের ছাদে গাপ্টিলের আগে বল ফেলেছিলেন একমাত্র ম্যাকমিলানই৷ সেই কৃতিত্বের দ্বিতীয় ভাগিদার হয়ে কোচের দিকে জোড়া আঙুল দেখালেন৷

কী আশ্চর্য! দু’টো আঙুল যেন পিছুই ছাড়ে না গাপ্টিলকে৷ সেই ১৪ বছর বয়স থেকে৷ ফর্কলিফ্ট ট্রাকের একটি দুর্ঘটনায় পড়ে বাঁ পায়ের তিনটি আঙুল বাদ দিতে হয়৷ সেই থেকে বাঁ পায়ে দু’টো আঙুল ৷ ফিল্ডিং, অফ স্পিন, ব্যাট হাতে ওপেন সব তা নিয়ে৷ তাই গাপ্টিলের সেঞ্চুরি বা ম্যাচ জেতানো ইনিংস মানেই উঠে আসে দু’আঙুলের গল্প৷ গাপ্টিল কিন্ত্ত সেই ১৪ বছরেই কাটিয়ে উঠেছিলেন মানসিক যন্ত্রণা৷ তার বাবা প্রাক্তন ক্রিকেটার জেফ ক্রো-কে অনুরোধ করেছিলেন, যদি কোনও কিউয়ি ক্রিকেট তারকা গাপ্টিলের সঙ্গে দেখা করেন৷ পর দিনই হাসপাতালে হাজির ক্যাপ্টেন স্টিফেন ফ্লেমিং৷ গাপ্টিল সব ব্যথা ভুলে মাঠে ফিরেছিলেন ব্যাট হাতে, সঙ্গে ডাকনাম ‘মার্টি টু টোজ’৷

শনিবার ওয়েলিংটনে গাপ্টিলের ইনিংস মন ভরিয়েছে ক্রিকেটপ্রেমীদের৷ ওয়ান ডে-তে যেখানে ব্যাটসম্যানরা চেষ্টা চালাচ্ছেন নিত্যনতুন শট আবিষ্কার করার, সেখানে গাপ্টিলের ডাবল সেঞ্চুরি ক্রিকেটীয় শটে৷ অনেকে বলছিলেন, ওয়েস্ট প্যাকের বাউন্ডারি ছোট! ঘটনা হল, গাপ্টিলের ১১টি ছক্কার মধ্যে আটটিই ৭৫ মিটারের বেশি৷ তাই বেশিরভাগ মাঠেই ছয় হওয়া আটকাতো না৷ জাক কালিস বলেই দিয়েছেন, ‘বিশ্বকাপে আমার দেখা এর থেকে ভালো ইনিংস আর মনে করতে পারছি না৷’ কালিসের ব্যাখ্যা, ‘কোয়ালিটি৷ রীতিমতো স্ট্রেট ব্যাটে খেলে ১১১ বলে ১০০৷ তারপর রানটা করল খুব দ্রুত৷’ গাপ্টিলের ব্যাটিংয়ে যেন সত্যিই চারটে গিয়ার ছিল শনিবার৷ শুরুর ‘দেখে খ্যালো’ নীতি পাল্টে পরে ‘ম্যাকালাম-সম’৷ ১৫০ থেকে ২০০ করলেন ১৮ বল৷ নিজের ইনিংস সম্পর্কে গাপ্টিলের কী ধারণা? বলছেন, ‘চেষ্টা করছিলাম, বেশি স্কোয়ারের দিকে না মেরে যতটা সম্ভব সোজা খেলার৷ এটাই আসল৷ এই মুহূর্তে কাজটা হচ্ছেও দারুণ৷’

ওয়েস্ট ইন্ডিজের বোলাররা এই বিশ্বকাপে একবার এবি ডে ভিলিয়ার্সের বিস্ফোরক মূর্তি দেখেছেন৷ এ দিন দেখলেন কিউয়ি ‘সাইলেন্ট কিলার’কে৷ গাপ্টিল ২১৫ টপকে যাওয়ার পর ক্রিস গেইল নিজে এসে অভিনন্দন জানিয়ে যান৷ যা নিয়ে গাপ্টিল পরে বলেন, ‘গেইল আমাকে শুভেচ্ছা জানিয়ে বলল, ওয়েলকাম টু দ্য লিগ৷ আমার কী রকম হাসি পেয়ে গিয়েছিল৷’ শুভেচ্ছা এখন আসছে লাগাতার৷ যদিও গাপ্টিলের মাথায় ঢুকে পড়েছে নিজের শহর মঙ্গলবার অকল্যান্ডে দক্ষিণ আফ্রিকার সঙ্গে সেমিফাইনাল৷

বিশ্বকাপে সর্বোচ্চ রানের ইনিংস৷ আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে তিন ফর্ম্যাটেই সেঞ্চুরি৷ এই মুহূর্তে বিশ্বকাপে ৪৯৮ রান করে শুধু কুমার সঙ্গকারার পিছনে৷ মার্টির পরিচয় এখন শুধু ‘টু টোজ’ নয়৷ রীতিমতো ‘স্টার’৷

ডে ভিলিয়ার্সের টিমকে কিন্ত্ত গাপ্টিলকে সেঞ্চুরি করতে দেওয়া যাবে না৷ ইতিহাস বলছে, ক্রিকেটের তিন ফর্ম্যাটেই গাপ্টিলের সেঞ্চুরি মানে সেই ম্যাচে যে হারে না নিউ জিল্যান্ড৷